• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

বাণিজ্য

পাঁচ বছরে ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ গুণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ অক্টোবর ২০২০

ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ই-কমার্স। ফলে গত পাঁচ বছরে দেশের ই-কমার্স ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩০ গুণ। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রতি আস্থা ধীরে ধীরে বাড়ায় বিশেষ করে ইলেকট্রনিক পণ্যের বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়তা করেছে ই-কর্মাস।  বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষে দেশে ই-কর্মাস বাণিজ্যের বাজার ১৬৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন টাকা।  ২০১৬ সাল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। 

প্রতিযোগিতা কমিশনের একজন পরিচালক বলেন, দেশে ডিজিটাল ব্যবসার সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য ই-কমার্সের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের পরে থেকে দেশে ই-কমার্স ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হতে শুরু করেছে। ২০১৭ সালে ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল ৮৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন টাকা। ২০১৮ সালের শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ১০৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন টাকা, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ই-কমার্সের আকার ছিল ১৩১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন টাকা।

দেশে ই-কমার্সের বাজার বেশ ভালো আকার ধারণ করেছে চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। করোনা প্রতিরোধে মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় বাসায় বসে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পণ্য কেনাকাটা শুরু করে।

দেশে এখন জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটগুলোর মধ্যে পাঠাও, দারাজ, চালডালডটকম, সজহডটকম, ফুডপান্ডা, বাগডুমডটকম, আজকেরডিলডটকম, বিক্রয়ডটকম, সেবাএক্সওয়াইজেড উল্লেখযোগ্য। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, দেশে ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারে সহায়তা করেছে মোবাইল ব্যাংকিং এবং অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু থাকার কারণে। 

তিনি আরো বলেন, যেহেতু মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ ব্যাংকগুলোর অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং অন্যান্য গেটওয়ে চালু হয়েছে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পেপারলেস ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে, অনলাইন ব্যবসা এবং কেনাকাটা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম দেশে পরিশোধ সেবা পদ্ধতির মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে দেশে আন্তব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১৪ শতাংশ।

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম নেটওয়ার্ক মাস্টার কার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, করোনাভাইরাসের আগে বাংলাদেশে ই-কমার্সে ডিজিটাল পেমেন্টের পরিমাণ ১৫ শতাংশের মতো ছিল। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি করোনার প্রাদুর্ভাবকালে দেশে ই-কমার্সে ডিজিটাল পেমেন্ট সেবাগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে ফলে এই লেনদেনের পরিমাণ সাম্প্রতিককালে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, এই ই-কমার্স কেনাকাটায় ডিজিটাল পেমেন্টে প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছি। ভারতে ই-কমার্সে ডিজিটাল পেমেন্টের পরিমাণ প্রায় ৭৫ শতাংশ, যেখানে আমাদের দেশে এখন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ই-কমার্স পেমেন্ট হচ্ছে ডিজিটালে। তবে অনলাইনে গেজেট/ইলেকট্রনিকস  এবং গ্রোসারি ইত্যাদি থেকে কেনাকাটায় ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশের মতো।

অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে আগে পেমেন্ট করলে পণ্য ডেলিভারিও নিশ্চিত হয়। এ জন্য মাস্টার কার্ড  গ্রাহকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে বলেও যোগ করেন সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, মানুষ এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সবজি, ওষুধও কেনাকাটা করছে। 

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে মানুষের আচরণের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এটিই ই-বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।

আলমাস কবির আরো বলেন, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নতি দেশে ই-কমার্সকেও উৎসাহিত করেছে।

বেসিস সভাপতি বলেন, ভবিষ্যতে ই-কমার্স ব্যবসার জন্য চ্যালেঞ্জ হবে ন্যায্যমূল্য এবং সরবরাহ ব্যবস্থা। আমরা যদি ওই দুটি জিনিস পরিচালনা করতে ব্যর্থ হই তবে, অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহককে হারাবে এবং ই-কমার্স চূড়ান্তভাবে প্রভাবিত হবে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads