• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

অং সান সু চি

বিদেশ

অক্সফোর্ড সিটির সম্মাননাও হারালেন সু চি

  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচার নিপীড়ন বন্ধে সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির নেত্রী অং সান সু চির ‘ফ্রিডম অব দি সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেছে শহর কর্তৃপক্ষ।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিলের ভোটাভুটিতে সু চির সম্মাননা কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

মিয়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৭ সালে তাকে ওই সম্মাননা দিয়েছিল যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিল।

শহর কর্তৃপক্ষের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সহিংসতা দেখেও যারা চোখ বন্ধ রাখে, তাদের জন্য কোনো উদযাপনের আয়োজনে থাকবে না অক্সফোর্ড।

এর আগে গত অক্টোবরে অক্সফোর্ডের কাউন্সিলররা ভোটাভুটির মাধ্যমে সু চির সম্মাননা প্রত্যাহারের প্রশ্নে আলোচনায় সম্মত হন।  সোমবার চূড়ান্ত ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাবটি পাস করা হয়।

সু চিকে দেওয়া ‘ফ্রিডম অব দি সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড’ প্রত্যাহারের প্রস্তাব অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিলে তুলেছিলেন কাউন্সিলর মেরি ক্লারকসন।

ভোটাভুটির পর ক্লারকসন বিবিসিকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য সুবিচার আর অধিকারের দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আজ আমাদের কণ্ঠও মিলিত হল।”

গত অাগস্টের শেষের দিকে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী।  অত্যাচারের মুখে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান।  এই অভিযানে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চলছে বলে অভিযোগ করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। জাতিসংঘ একে দেখছে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টা হিসেবে।

সেনাবাহিনীর মত সু চির দলও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে রাজি নয়।  রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত হতে হচ্ছে সু চিকে।

সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ২০১৫ সালের নির্বাচনে বড় জয় পেয়ে সরকার গঠন করে।  কিন্তু বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করায় মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।  তবে স্টেট কাউন্সেলর পদ সৃষ্টি করে কার্যত সু চির হাতেই সরকারপ্রধানের মূল ক্ষমতা রাখা হয়েছে।

১৯৬৭ সালে অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউজ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন তখনকার তরুণ সু চি।  তার স্বামী ড. মাইকেল অ্যারিস এক সময় ওই কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন।

গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া সু চি ২০১০ সালে গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি পান।  গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৯৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দিয়েছিল অক্সফোর্ড, ওই ডিগ্রি তিনি গ্রহণ করেন মুক্তি পাওয়ার পর, ২০১২ সালে।

অক্সেফোর্ড ছাড়াও গ্লাসগো, বাথ, কেমব্রিজসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গত ৩০ বছরে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের প্রতীক সু চিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেয়।  পাশাপাশি কয়েকটি শহর ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

কিন্তু সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সু চিকে দেওয়া সম্মাননা গত সেপ্টেম্বরে স্থগিত করে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন- ইউনিসন।  অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্ট হিউ কলেজ থেকে সু চির প্রতিকৃতি সরিয়ে নেওয়া হয়।  লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস স্টুডেন্টস ইউনিয়ন সু চিকে দেওয়া সম্মানসূচক প্রেসিডেন্ট পদ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads