• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
অভিবাসন নীতি কঠোর করছে মালয়েশিয়া

সংগৃহীত ছবি

প্রবাস

অভিবাসন নীতি কঠোর করছে মালয়েশিয়া

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ২৪ এপ্রিল ২০২১

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের প্রতারণা ও বিভ্রান্ত করতে যে দালালচক্র গড়ে উঠেছে তা নির্মূলে অভিবাসন নীতি আরো কঠোর করছে দেশটির সরকার। অবৈধ অভিবাসী ও দালালচক্রের কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দীর্ঘদিন ধরে সংকট চলছে। এজন্য গত বছরের নভেম্বরে ফের অবৈধদের রিকেলিব্রেশন নামে বৈধ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার, যা চলবে আগামী জুন পর্যন্ত। এ প্রক্রিয়ায় কোনো দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কোম্পানির মালিক পক্ষের মাধ্যমে বৈধ হতে পারবেন বিদেশি কর্মীরা।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রায় ১৯ লাখ বিদেশি কর্মী অবৈধভাবে অবস্থান করছে। দেশটির সরকার চায় এসব অবৈধ কর্মীদের বৈধ করে নিয়ে তাদের একটি শৃঙ্খলা ও নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা। কিন্তু এই দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মালয়েশিয়া সরকারের বৈধকরণের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। দেশটির সরকার বৈধকরণের যে উদ্যোগই নিচ্ছেন তাতেই কোনো না কোনোভাবে দালালচক্র জড়িত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ একজন অবৈধ কর্মীর বৈধকরণের জন্য দালালরাই প্রথমে গিয়ে তাদের কাছে প্রস্তাব দেয় টাকার বিনিময়ে বৈধ করে দেওয়ার। যদিও এক্ষেত্রে প্রশাসনের একশ্রেণির অসাধু লোকজনও জড়িত থাকে। কাজেই দালালদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার সরকার একাধিকবার গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েও লাভ হয়নি। চলতি করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এক অভিযানে অন্তত ২০ জনকে দালালকে আটক করে সেদেশের পুলিশ। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ বা আইনের ফাঁক গলে তারা বেরিয়ে আসে।

এদিকে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির সিন্ডিকেট ধরতে মাঠে কাজ করছে দেশটির প্রশাসন। গত ৮ এপ্রিল কুয়ালালামপুর ও তার আশপাশের ২২টি স্থানে চিরুনি অভিযান চালিয়ে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের অনলাইন ডাটাবেজ হ্যাকার সিন্ডিকেটের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এতে বেরিয়ে আসে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের সাবেক অফিসারের সহায়তায় এই সিন্ডিকেট ২১ হাজার ৩৭৮টি ভুয়া অস্থায়ী কর্মসংস্থান পাস শনাক্ত করে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন। জাল কর্মসংস্থান পাস, পাসপোর্ট বেশিরভাগ শিল্পকারখানা, বৃক্ষরোপণ ও সেবাখাতের। কিন্তু মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি নাগরিক সরাসরি ইমিগ্রেশনে ভিসা নবায়ণের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অভিবাসন নীতিতে স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। ফলে মালয়েশীয় এজেন্টরা আবার অবৈধ বিদেশি সংগ্রহ করতে সাব-এজেন্ট নিয়োগ করে করে, যাদের মাধ্যমে অবৈধ বিদেশি নাগরিক সংগ্রহ করা হয়। এই ফাঁকেই দালালচক্র ঢুকে পড়ে বৈধকরণ প্রক্রিয়ায়।

উল্লেখ্য, এর আগেও মালয়েশিয়ার সরকার অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। কিন্তু দেশি-বিদেশি দালালচক্রের কারণে সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি কর্মীরা। মালয়েশিয়ায় কয়েক লাখ অবৈধ বাংলাদেশি বৈধ না হওয়ার পেছনে অসাধু দালাল যেমন দায়ী, তেমনই বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারে না। আর এ দায় এড়াতে চলমান রিকেলিব্রেশন প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে বৈধ হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইনের এ জটিলতার কারণে সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে কয়েক লাখ অবৈধ বাংলাদেশি। যদিও এ জটিলতা নিরসণে দেশটিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে বৈধতা নিতে বা চাকরি পেতে দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে চালু হয়েছে চাকরির খোঁজ নামে অনলাইন পোর্টাল। এ পোর্টালের মাধ্যমে কর্মীরা তাদের পছন্দমতো চাকরি পেতে সহায়তা দিচ্ছে হাইকমিশন।

মালয়েশিয়া সূত্রে জানা গেছে, অবৈধদের বৈধকরণের লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকারের চলমান রিকেলিব্রেশন প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের প্রায় ৭২ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছেন। আরো প্রায় ৭২ হাজার কর্মী নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আবেদন করেছে। এরমধ্যে গত ৬ মাসে ৫৮ হাজার অবৈধ কর্মী নিজ দেশে ফিরে গেছে। যারা স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে তারা আবার নতুন করে মালয়েশিয়ায় আসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বৈধ হতে পারেনি অথচ মালয়েশিয়ায় থেকে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখেছে দেশটির সরকার।

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীরা বলছেন, দেশটির পুলিশ এখনো বৈধতার বিষয়ে কাজ করছে। তবে বিভিন্ন সময় কয়েকটি চক্র ধরাও পড়েছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশিরা নিজেরাই নিজের কপালে কুড়াল মারছে। এখানে যত অনিয়ম, সবই বাঙালিদের দিয়ে হচ্ছে। বাঙালিরা কোনো আইন মানে না। সব ধরনের অপকর্মই তাদের দ্বারা সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়াজুড়ে শক্তিশালী বাঙালি দালালচক্র গড়ে ওঠে। দেশটিতে কয়েক লাখ অবৈধ প্রবাসীর বৈধ করার প্রলোভন দেখিয়ে এসব দালালচক্র এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দেশটিতে প্রায় দেড় শ বাঙালি দালাল রয়েছে। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার পাশাপাশি যারা নানা ধরনের অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন প্রবাসীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads