• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

প্রবাস

সৌদি আরবে কঠোর নিয়মে বিপাকে বাংলাদেশিরা

বাড়তি খরচ ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ২১ মে ২০২১

সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশন নতুন করে নিয়ম করেছে যদি কেউ করোনাভাইরাস ছড়ায়, তাকে ৫ বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। যদি সেই ব্যক্তি প্রবাসী হয় তবে তাকে শাস্তি দেওয়ার পর সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত করা হবে। আর ওই ব্যক্তি কোনো দিন সৌদি আরবে আসতে পারবে না। এছাড়া কোনো প্রবাসী সৌদি প্রবেশ করলে প্রথমে তাকে ৭ দিন নিজ খরচে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। যার খরচ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী সৌদিতে প্রবেশের আগে হোটেল বুকিং ও ইনস্যুরেন্স ছাড়া কিছুতেই সৌদিগামী ফ্লাইটের বোর্ডিং পাস পাওয়া যাবে না। গত ১০ মে সৌদি সরকারের এ বিধিনিষেধ দেশটির জেনারেল অথরিটি অব সিভিল অ্যাভিয়েশন বিভিন্ন এয়ারলাইনসকে এ তথ্য জানায়। যারা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেননি, তারা সৌদি আরবে প্রবেশ করলে ৭ দিন হোটেলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। হোটেলের ব্যয়ও বহন করতে হবে ওই যাত্রীকে। যাত্রীদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেল বুকিং এয়ারলাইনসের মাধ্যমে করার নির্দেশনাও দিয়েছে জেনারেল অথরিটি অব সিভিল অ্যাভিয়েশন। নতুন নিয়মের কারণে সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও মদিনার হোটেলগুলোতে চাপ বেড়েছে। অনেক হোটেল ইতোমধ্যে পুরোপুরি বুক হয়ে গেছে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, সৌদি আরবে যাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসলে ঢাকা থেকে ফ্লাইটে যাত্রীকে বোর্ডিং ইস্যু করা যাবে। সৌদিতে পৌঁছানোর পর যাত্রীকে আরো দুবার করোনা টেস্ট করতে হবে। প্রথমবার করতে হবে সৌদি আরবে পৌঁছানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। ষষ্ঠ দিনে আবারো করোনা টেস্ট করতে হবে। টেস্ট করার খরচ যাত্রীকেই বহন করতে হবে। দুবার টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট আসলে হোটেল কোয়ারেন্টাইন থেকে সপ্তম দিনে বাসায় যাওয়ার অনুমতি মিলবে। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। তবে ফাইজার-বায়োএনটেকের ২ ডোজ, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২ ডোজ, মডার্না ২ ডোজ এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ১ ডোজ যারা নিয়েছেন তারা হোটেলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার বদলে বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুবিধা পাবেন।

এদিকে সৌদি আরবের এসব শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৪ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের সৌদিগামী সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। হোটেলে কোয়ারেন্টাইনসহ সৌদি সরকারের বিভিন্ন শর্তারোপের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে একদিকে যেমন বিপাকে পড়েছেন এ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সৌদিতে আসতে চাওয়া প্রবাসীরা, অন্যদিকে সেখানে অবস্থান করা বাংলাদেশিরাও ফিরতে পারছেন না দেশে। এ অবস্থায় কোয়ারেন্টাইনের বিধিনিষেধ শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, সৌদি নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। তবে সেটির জন্য আমরা যোগাযোগ করছি। তবে আমরা যাত্রীদের আপডেট তথ্য জানিয়ে দিয়েছি। ২০ থেকে ২৪ মে-র মধ্যে যাদের যাত্রার তারিখ নির্ধারিত ছিল তারা নিকটস্থ আমাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে নতুন নিয়মের কারণে সৌদি সরকার সেদেশের বিভিন্ন মানের হোটেল, সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নির্ধারণ করেছে। এরমধ্যে  রিয়াদের জন্য ৮৮৯টি, জেদ্দার জন্য ৫৪১টি, দাম্মামের জন্য ৩৭৬টি, মদিনার জন্য ৩৫৩টি, তাবুকের জন্য ৭২টি, আল কাশিমের জন্য ৯৯টি, তাইফের জন্য ২২৮টি হোটেল ও সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট  নির্ধারণ করেছে। মান অনুযায়ী সেগুলোর ভাড়াও বিভিন্ন রকমের। কোনো কোনো হোটেলে রুম শেয়ার করার সুযোগও আছে। ৭দিন থাকার জন্য তিন তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দুবার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ পড়বে প্রায় ২ হাজার ৪২৫ সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি ৫৪ হাজার ৮৩৯ টাকার সমান। চার তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দুবার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ পড়বে প্রায় ৩ হাজার ১০ রিয়াল, যা বাংলাদেশি ৬৮ হাজার ৬৮ টাকার সমান। পাঁচ তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দুবার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ সাড়ে চার হাজার রিয়াল থেকে শুরু। সৌদি আরবে বেশিরভাগ হোটেলে বুকিংয়ের টাকা নন রিফান্ডঅ্যাবল, ফলে কোনো কারণে কেউ সৌদি আরব যেতে না পারলে হোটেলের জন্য বুকিং করা টাকা ফেরত পাবেন না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads