• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

বাংলাদেশ

কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে নাঃ প্রধানমন্ত্রী

  • বাসস
  • প্রকাশিত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত 'শিক্ষা সমাবেশ' এ প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ প্রদান কালে বলেন, বর্তমান সরকার দেশের বাজেট ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত করে দেশকে সাধ্যমত এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, সকলের বেতন-ভাতা অনুদান তাঁর সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে, সরকারী-বেসরকারী সব জায়গায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে, কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিক্ষোভ করলেই সরকারের পক্ষে দাবি পূরণ সম্ভব নয়, কারণ সরকার পরিকল্পনা এবং বাজেট ছাড়া দাবি পূরণ করতে পারে না।

দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষকদের একটি অংশের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আজ একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের শেষ বছরে এসে কেউ যদি মনে করেন সরকারের এটা শেষ বছর কাজেই দাবি করলেই আমরা সব শুনে ফেলবো, সেটা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের একটা বাজেট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে চলতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘কোথায় কোথায় সরকারীকরণ করতে হবে, কোন নীতিমালার ভিত্তিতে করতে হবে, সেটাওতো একটা নীতিমালার ভিত্তিতেই হতে হবে। যখন-তখন যে কেউ দাবি করলে সেটাতো পূরণ করা সম্ভব নয়। সেটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’

শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহস্রাধিক কলেজ অধ্যক্ষের অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘শিক্ষা সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের সম্পদের সীমাবন্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘দিলেই আরো দাও আরো দাও করলে আমরা দিতে অপারগ হবো, কারণ আমাদের একটা বাজেট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে চলতে হয়।’

ক্ষমতায় থাকার জন্যই কেবল রাজনীতি করেন না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকতাকে একটি মহত পেশা, আপনাদের হাতেই রয়েছে জাতির ভবিষ্যত। একজন শিক্ষকের কাছে আমি এটুকুই চাই আপনারা কতটুকু দিতে পারলেন, করতে পারলেন। কি ধরনের শিক্ষাটা আপনারা দিয়ে যেতে পারলেন যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, দেশকে আরো উন্নত করতে পারবে- সেটাই হচ্ছে বড় কথা।

শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসেইন অনুষ্ঠানে বিশেষ অথিথির বক্তৃতা করেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.হারুন-অর-রশীদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ভবন, প্রকল্প ও স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কলেজ র‍্যাংকিং-এ শীর্ষস্থান অর্জনকারি কলেজের অধ্যক্ষদের হাতে সন্মাননা স্মারক, পুরস্কারের চেক এবং বঙ্গবন্ধুর লেখা দুটি বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজ নামচা তুলে দেন।

রাজশাহী কলেজ, জাতীয় পর্যায়ে প্রথম এবং সরকারী কলেজ সমূহের মধ্যেও প্রথম স্থান, জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয়-সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা, জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় কারমাইকেল কলেজ, রংপুর, জাতীয় পর্যায়ে ৪র্থ সরকারী ব্রজমোহন কলেজ বরিশাল এবং জাতীয় পর্যায়ে ৫ম স্থান অধিকার করে- সরকারী আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।

সিদ্ধেশ্বরী মহিলা কলেজ, ঢাকা, জাতীয় পর্যায়ে সেরা মহিলা কলেজ এবং ঢাকা কমার্স কলেজ জাতীয় পর্যায়ে সেরা বেসরকারী কলেজের পুরস্কার লাভ করে।

জাতির জনকের স্বপ্ন অনুয়ায়ী দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তাঁর লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নিজের বা দলের সম্পদ গড়ে তোলা বা নিজেরা সম্পদশালী হওয়া তাঁর নীতি নয়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেদের (তাঁর এবং ছোট বোন শেখ রেহানার) সামান্য সম্পদটুকুও রাষ্ট্রের জন্য ট্রাষ্ট করে দান করে দেয়া এবং তাঁদের সন্তানরা নিজেদের উপার্জিত অর্থ দিয়েই অত্যন্ত কষ্টকরে লেখাপড়া শিখে আজকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষকদের আরো আধুনিক হতে হবে। শিক্ষিত জাতি ছাড়া একটা দেশে উন্নয়ন সম্ভব নয়। মেধাশূন্য দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার দিক নির্দেশনায় প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীতি-আদর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ‘একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা’, ‘নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান’ এবং ‘সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ’ করার কথা বলা হয়েছে।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার জাতির পিতার নীতি ও আদর্শকে ধারণ করে শিক্ষার প্রসার ও উৎকর্ষ সাধনে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কখনই দেশে শিক্ষার হার বাড়াতে পারেনি। উপরন্ত, কমিয়ে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, বিএনপি ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে দেশের সাক্ষরতার হার তাঁর সরকারের রেখে যাওয়া ৬৫ দশমিক ৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে নিয়ে আসে। অথচ, বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আরো বাড়ছে।

সরকার প্রধান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তোলার সময়ই প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছিলেন। তিনি নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তাদের শিক্ষাও অবৈতনিক করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সকল দল-মত নির্বিশেষ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা প্রতিটি মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে দিয়েছিলেন। তৃণমূল পর্যায় থেকে যেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে পারে সেই পদক্ষেপই তিনি নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা আর অন্তত ৩ বা ৪ বছর সময় পেলেই বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকতো না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষকের পদ সরকারি করেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতার দেখানো পথেই তাঁর সরকার ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকুরি সরকারিকরণ করেছে।

১৯৭২ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে চেয়ারম্যান করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন বঙ্গবন্ধুর হাতে রিপোর্ট পর্যন্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতির পিতা পদক্ষেপ নেওয়ার সময় পাননি। তার আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের শিক্ষা কাঠামো সম্পর্কে ১৯৭০’র নির্বাচন উপলক্ষে বেতার-টেলিভিশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের উদ্বৃতি দেন।

জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য একটা ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালু করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সকল শ্রেণির জন্য খোলা রাখতে হবে। দ্রুত মেডিক্যাল ও কারিগরি বিশ^বিদ্যালয়সহ নয়া বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দারিদ্র্য যাতে উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাবী ছাত্রদের অভিশাপ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’

এই ভাষণে তিনি আরো বলেন, ‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না।’

শেখ হাসিনা এ সময় জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলে বিএনপি’র দেওয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা দেশকে কিছু দিতে পারে না। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে যুদ্ধাপরাধী, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়াটাই যদি বহুদলীয় গণতন্ত্র হয় তাহলে আমার কিছু বলার নেই।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সরকারের দু’ই মেয়াদের ৯ বছরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সমূহ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুবিধা বঞ্চিত বিশেষ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী কিংবা ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠ দান, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সহায়ক সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষার সময় বাড়িয়ে দেওয়া, আনন্দ স্কুলসহ বিশেষায়িত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নসহ সবক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী এ দিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ১১টি ভবন, প্রকল্প ও স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন সেগুলো হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্বাধীনতা ম্যুরাল ১৯৫২ থেকে ১৯৭১, কলেজ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ডরমেটরি ভবন, আইসিটি ভবন, সিনেট ভবন, কর্মকর্তা ভবন ও কর্মচারি ভবন, বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্র নির্মাণ এবং বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ১০৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কলেজ-শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (সিইডিপি)’ শীর্ষক প্রকল্প।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads