ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে সুদূর জার্মান থেকে শশুরবাডি লালমনিরহাটে ছুটে আসা জামাতা প্যাট্রিক জার্মানে ফিরে গেছেন। শশুরবাড়িসহ আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বেড়িয়ে ১৫ দিনের মাথায় গত ১২ মে জার্মানে ফিরে গেলেন জামাতা প্যাট্রিক ও মেয়ে ইভা।
প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে ঈদ উদযাপন করে খুশি প্যাট্রিক ও ইভা দম্পতি। তারা এখন ফেসবুক, এ ভাইরাল।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানে যায় ইভা। সেখানে গিয়ে ইভা পড়াশুনার পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয়। ওই সময় রেস্টুরেন্টে আসা-যাওয়া ছিল অর্থনীতিতে পিএইচডি করা ড. প্যাট্রিক মুলারের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অতঃপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ইভা বিয়ে করেন প্যাট্রিককে। বিয়ের এক বছর পর পুত্রসন্তানের মা হয় ইভা।
এদিকে চার বছরের সংসার জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের রূপ দেখে মুগ্ধ হয় প্যাট্রিক। পরে ইভার পরিবারকে নিয়ে ঈদ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। বিষয়টি ইভা তার পরিবারকে জানায়। পরে ২৯ এপ্রিল জার্মান জামাই শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। ধুমধাম করে তাদের বরণ করেন লালমনিরহাট শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার উৎসুক মানুষ।
এদিকে প্রথমবার বিদেশি জামাই আসায় শ্বশুরবাড়িতে রান্না করা হয় চাইনিজ খাবার। কিন্তু জার্মান জামাইয়ের আবদার তিনি বাঙালি খাবারের স্বাদ নেবেন। পরে জামাইয়ের আবদার মেটাতে মাছ-মাংসসহ নানা ধরনের খাবার রান্না করা হয়। জার্মান জামাইও চামচ ব্যবহার না করে হাত দিয়ে খাবারের স্বাদ নেন। আর এসব দেখে মুগ্ধ হয় ইভার পরিবারের লোকজন।
এদিকে, ঈদের পরের দিন জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায় প্যাট্রিক। সেখানে তিনি গ্রামের মানুষদের সঙ্গে সানন্দে ধান কাটেন ও মাড়াই করেন। এছাড়াও পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরার পাশাপাশি বাইসাইকেল চালায় এবং গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পানও খেয়েছেন সে।
এভাবে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়ে ১৫ দিনের মাথায় লালমনিরহাট থেকে জার্মানে ফিরে যান প্যাট্রিক-ইভা দম্পতি। তাদের বিদায়বেলা সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। এ সময় কেঁদেছেন প্যাট্রিক, কাঁদিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ এলাকাবাসীকে।
মৌসুমি আক্তার ইভা বলেন, প্যাট্রিক খ্রিষ্টান হলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আমরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করি। সে একজন ভালো মনের মানুষ। তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমি খুশি। তার ধর্ম পরিবর্তনের জন্য কোনো চাপ প্রয়োগ করতে চাই না। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
গ্রামগঞ্জ ঘুরে প্যাট্রিক বলেন, ফেসবুক ইউটিউবের কল্যাণে বাংলাদেশের গ্রামের রূপ দেখেছি। বাস্তবে এত সুন্দর হবে ভাবতে পারিনি। এ দেশের মানুষ অনেক ভদ্র। বিশেষ করে গ্রামের মানুষরা যেভাবে অতিথি আপ্যায়ন করেছেন তা কোনো দিন ভোলা যাবে না।
তিনি বলেন, 'আমি অনেক আনন্দিত বাঙালি পোশাক পরে, সুস্বাদু খাবার খেয়ে। বাংলার সবুজ প্রকৃতি, ধানক্ষেত তাকে বিমোহিত করেছে'।
ইভার বাবা আখতার হোসেন বলেন, বিদেশি জামাই তার পরিবারকে রেখে আমাদের সঙ্গে ঈদ করেছে, এটিও অনেক বড় পাওয়া। তার ভদ্র ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করেছে।