• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
শেয়ারবাজারে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ নিয়ে ফের প্রশ্ন

সংগৃহীত ছবি

পুঁজিবাজার

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ নিয়ে ফের প্রশ্ন

  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২১

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে বাধা হিসেবে গত সাত বছর ধরেই আলোচনায় আসছে বিনিয়োগের সীমার হিসাব বা এক্সপোজার লিমিটের হিসাব নিয়ে বিরোধ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারের বাজারমূল্যের হিসাবে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করে। তবে সাত বছর ধরেই ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করার দাবি রয়েছে। গত ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা শেয়ারের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। সেদিন আরো কিছু সিদ্ধান্ত হয় যার দুটি ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা বাড়ানোর বিষয়ে।

বৈঠকের দুই দিন পর ১৭ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে। এর মধ্যে নগদে বিতরণ করা যাবে ১৭.৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা, আর বোনাস হিসেবে দেওয়া যাবে আরো ১৭.৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ৪০টির বিপরীতে ৭টি শেয়ার। আরো ৫ দিন পর আরেক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি নগদ দেড় টাকার পাশাপাশি আরো ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ার দিতে পারবে। কিন্তু এক্সপোজার লিমিট নিয়ে কিছুই বলা হয়নি কোনো প্রজ্ঞাপনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ নিয়ে তাদের আগের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসছে না।  বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাসুদ বিশ্বাস বলেন, এক্সপোজার লিমিট নিয়ে আলাদা করে প্রজ্ঞাপন জারির কোনো প্রয়োজন নেই। আগে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা আছে, যে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করবে। কিন্তু বিএসইসিতে আলোচনায় বলা হয়েছিল এখন থেকে এক্সপোজার লিমিট ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করা হবে, আগে যা ছিল বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। আলোচনায় এ বিষয়টি এসেছিল। এ ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপন জারির গুরুত্ব আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে এত কথা বলার কী আছে? এটা নিয়ে আগে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা আছে, সে অনুযায়ী হবে। বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের যে যে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে আমরা সেসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছি। আর আলোচনা হয়ে যাওয়ার পরই সব হয়ে যাবে সেটা ভাবা ঠিক হবে না। আমরা পুঁজিবাজারের স্বার্থেই আলোচনা করেছি। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হয় সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হবে।’ বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজার গণনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত সিকিউরিটিজের বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বিএসইসিকে আশ্বস্ত করেছেন। একটি ব্যাংক তার মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে ২০১৪ সালে করা নীতিমালায় বাজারমূল্যে বিনিয়োগসীমা গণনা হওয়ায় ব্যাংকগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে না। এই এক্সপোজারের হিসাব গণনার নীতি পালটাতে গত কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি হচ্ছিল না। বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম এবং এটাকে বাজারের স্থিতিশীলতার একটি অন্তরায় হিসেবে দেখা হয়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ারদর হঠাৎ পড়ে গেলেই বিক্রি করে দেন বা তহবিলের অভাবে মূল্য সমন্বয় করতে পারেন না। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তহবিল বড় থাকায় এই মূল্য সমন্বয় খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংকের বিনিয়োগ বেঁধে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে শেয়ারের দাম বাড়লে বাজারমূল্যের হিসাবে নির্ধারিত হয় এক্সপোজার লিমিট। ফলে তখন ব্যাংকগুলোতে শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়। আবার কেনার পর শেয়ারের দাম কমে গেলে তখন আবার হিসাব হয় ক্রয়মূল্যে। ফলে বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয় না। ধরা যাক, কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগের সীমা ১০০ টাকা। ব্যাংক ৮০ টাকায় শেয়ার কিনেছে। কিন্তু দাম বেড়ে সে শেয়ারের দাম হয়ে গেল ১১০ টাকা। তখন ব্যাংককে ১০ টাকার শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়। আবার উল্টোটা হলে অর্থাৎ ৮০ টাকার শেয়ারের দাম কমে ৬০ টাকা হয়ে গেলে তখন ৪০ কিন্তু ৪০ টাকায় আরো বেশি শেয়ার কিনে সমন্বয়ের সুযোগ থাকে না। তখন কেনা যাবে ২০ টাকার শেয়ার। ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমন্টে লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘এক্সপোজার লিমিটের কারণে পুঁজিবাজার ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি প্রজ্ঞাপন আকারে হবে নাকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবগত করা হবে তা নির্ধারণ করা উচিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads