• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

পুঁজিবাজার

আস্থা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ জুন ২০২১

২০২০ সালের শুরুতে থাকা হতাশার পুঁজিবাজার এখন শুধু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আরো এগিয়ে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক পরিবর্তন এসেছে এই বাজারে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে প্রায় এক বছর ধরে। দুর্বলতাগুলোও ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। শেয়ারবাজার যে শক্ত ভিত্তির ওপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রমাণ মেলে বিএসইসির সর্বশেষ নেওয়া সিদ্ধান্তে।

গত বৃহস্পতিবারের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে। শেয়ারের দামের ভয়াবহ পতন ঠেকাতে গত বছরের ১৯ মার্চ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। যাতে বেঁধে দেওয়া ওই সীমার নিচে কোনো শেয়ার নামতে না পারে। এভাবে গত বছরের মার্চে শেয়ারবাজারের ভয়াবহ পতন থামিয়েছিল বিএসইসির তৎকালীন কমিশন। ওই কমিশনে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন এম খায়রুল হোসেন। ফ্লোর প্রাইস আরোপের আগে ১৮ মার্চ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নেমেছিল ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে। এর কিছুদিনের মধ্যেই বিএসইসির নেতৃত্বেও বদল আসে। খায়রুল হোসেনের বিদায়ের পর বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, গত ৬ জুন বিগত সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড হয়। তিনদিন পর ৯ জুন সেই রেকর্ড ভেঙে আরো উচ্চতায় ওঠে। এদিন ইতিহাসের সর্বোচ্চ লেনদেনের কাছাকাছি চলে আসে। এর আগে ২০২০ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন উদ্যোক্তারা।

এদিকে টানা ৯ সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গেল সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা দরপতন হয়েছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।

গেল সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। সেইসঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। আগের ৯ সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ৫০ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। এই হিসাবে অর্ধলাখ কোটি টাকার ওপরে বাড়ার পর ডিএসইর বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি টাকার মতো কমেছে।

এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের ৯ সপ্তাহ শেয়ারবাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সূচকটি বাড়ে ৮১১ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ এর সূচক। গেল সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। অপরদিকে, ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও গত সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট। সবকটি মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বেড়েছে ১৪৮টি শেয়ারের দাম। দাম কমেছে ২১০টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪৩৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪৭৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৭৯৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হাজার ৩৮৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮২ হাজার ২৩২ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৩ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪২টির, কমেছে ১৭৬টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে সিএসইর প্রধান সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে ১৭ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি যতদিন উন্নতি না হবে, ততদিন মানুষ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবে। তবে বাজারে যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়, সে ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার একদিন শক্তিশালী বাজার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads