• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডের আইপিওতে সাড়া মিলছে না

সংগৃহীত ছবি

পুঁজিবাজার

সময় বাড়ল এক মাস

বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডের আইপিওতে সাড়া মিলছে না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

সরকারি বন্ডে ব্যাপক সাড়া পেলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) সুকুক বন্ডে সাড়া মিলছে না। ফলে দুই দফায় শরিয়াহভিত্তিক গ্রিন সুকুক বন্ডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বিনিয়োগকারীদের ৭ শতাংশ আবেদন জমা পড়েছে। বাকি ৯২ শতাংশ আবেদন পেতে চলমান সাবস্ক্রিপশনের সময় আরো এক মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

বেক্সিমকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেক্সিমকোর বন্ডের আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে এ সময়ের মধ্যে যদি বন্ডটির আন্ডার সাবস্ক্রিপশন হয়, তবে আইপিওটি বাতিল হবে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এটি যেহেতু একেবারে নতুন প্রোডাক্ট, তাই বেক্সিমকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির বিশেষ ক্ষমতায় সাবস্ক্রিপশনের সময় বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে চাহিদার তুলনায় আবেদন জমা না পড়লে আইপিও বাতিল হবে।

বেক্সিমকো লিমিটেডের ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের মধ্যে পাবলিক অফারে ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য গত ১৬ আগস্ট চাঁদা সংগ্রহ শুরু হয়। যার জন্য প্রথম দফায় নির্ধারিত সর্বশেষ সময় ছিল ২৩ আগস্টের বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। কিন্তু ওই সময়ে বন্ডটির চাহিদার ৭৫০ কোটি টাকার বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা মাত্র ৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বা ৭ দশমিক ৪১৫ শতাংশ আবেদন করেন। এতে ৭১ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেন।

প্রথম দফায় চাহিদা অনুসারে আবেদন জমা না পড়ায় সাবস্ক্রিপশনের সময় আরো ১০ কার্যদিবস বাড়ানো হয়, যার শেষ সময় ছিল গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। কিন্তু বাড়তি ১০ কার্যদিবসে আইপিও আবেদনে তেমন পরিবর্তন হয়নি। এ সময় মাত্র একজন বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকার বন্ড কেনার আবেদন জানান। এতে করে আবেদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা মোট চাহিদার মাত্র ৭ দশমিক ৪২৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে ঘাটতি দাঁড়ায় ৬৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার।

৩ হাজার কোটি টাকার বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকটির মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা বিদ্যমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার বাদে অন্যান্য বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। অবশিষ্ট ৭৫০ কোটি টাকা আইপিও ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে।

গত ২৩ জুন শর্তসাপেক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকার সুরক্ষিত রূপান্তরযোগ্য অথবা অবসায়নযোগ্য সম্পদভিত্তিক গ্রিন সুকুক বন্ডটির অনুমোদন দেয় এসইসি। বন্ডটির নাম হচ্ছে বেক্সিমকো সুকুক আল ইস্তিসনা, অর্থাৎ এর মাধ্যমে অর্থায়নকারীর অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে এবং বাস্তবায়ন শেষে তার মালিকানা হবে অর্থায়নকারীরা। প্রস্তাবিত বন্ডের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। বন্ডটির অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা ও ৫০টি বন্ডে একটি লট। মুনাফার ভিত্তি হবে ন্যূনতম ৯ শতাংশ বা সর্বশেষ বছরে প্রদত্ত লভ্যাংশের সঙ্গে মুনাফার পার্থক্যের ১০ শতাংশ বেশি।

বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকটি শতভাগ শেয়ারে রূপান্তরের সুবিধা রয়েছে। অবশ্য কোনো বন্ডধারী চাইলে রূপান্তর নাও করতে পারেন। বন্ডধারী চাইলে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে আংশিক বা পুরো বন্ড বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তর করতে পারবেন। এক্ষেত্রে রূপান্তর মূল্য হবে ডিএসইর ২০ কার্যদিবসের ভারিত গড়ের ৭৫ শতাংশ। সুকুক বন্ডটি দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা হবে। বিএসইসির অনুমোদনসাপেক্ষে বন্ড ইস্যুর জন্য একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকল গঠন করেছে বেক্সিমকো।

বেক্সিমকো জানিয়েছে, বন্ডের বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় হবে বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেডে। তিস্তা সোলার চীনা কোম্পানি টিবিইএ সানোয়াসিসের সঙ্গে যৌথভাবে গাইবান্ধায় ২০০ মেগাওয়াট এবং পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অপর এক চীনা কোম্পানি জুয়াংসু জংতিয়ান টেকনোলজির সঙ্গে যৌথভাবে করোতোয়া সোলার নামে ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সুকুক বন্ডের অর্থ খরচ করা হবে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা ও লাঠশালার চরে ১ হাজার একর জমির ওপর তিস্তা সোলারে নির্মাণ হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটিই দেশে এ ধরনের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর তিস্তা  সোলারের সঙ্গে সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় ও বাস্তবায়ন চুক্তি হয়েছে।

অন্যদিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াটের করতোয়া সোলার লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ শতাংশের মালিক। বাকি ২০ শতাংশের মালিকানায় রয়েছে চীনা কোম্পানি জুয়াংসু জংতিয়ান টেকনোলজি। এই কেন্দ্র থেকে আগামী ২০ বছর ১৩ টাকা ৯০ পয়সা করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। প্রসঙ্গত, বেক্সিমকো পাওয়ারের ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকো লিমিটেড।

সুকুকটির ট্রাস্টি হিসেবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে যথাক্রমে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ও অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাজ করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads