• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাবের আশা

প্রতীকী ছবি

পুঁজিবাজার

সঞ্চয়পত্রে মুনাফা হ্রাস

শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাবের আশা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের মেয়াদি হিসাবের মুনাফার হার কমিয়েছে সরকার। এর ফলে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক ও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের সুদ হারের একটা প্রভাব সব সময় শেয়ারবাজারের ওপর থাকে। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের সুদ হার কম থাকলে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার সুদের হার বেশি হলে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাদের অভিমত, দীর্ঘদিন ধরে দেশে ব্যাংক সুদের হার কম থাকায় শেয়ারবাজারে তার বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। এখন সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর কারণে শেয়ারবাজারে এটারও ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে তারা আরো বলছেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী ও সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত বড় ধরনের পার্থক্য আছে। সাধারণত সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ কম দেখান। কিন্তু মুনাফার হার কমলে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদেরও একটি অংশ শেয়ারবাজারের দিকে ঝুঁকতে পারেন।

জাতীয় সঞ্চয়পত্রের স্কিমগুলোর মুনাফার হার কমিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন হার অনুযায়ী, ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের স্কিমে মুনাফার হার আগের মতো রাখা হলেও, এর বেশি পরিমাণ স্কিমে মুনাফার হার কমানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যারা নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনবেন, শুধু তাদের জন্য পরিবর্তিত এই হার কার্যকর হবে। এছাড়া আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি পুননায় বিনিয়োগ করলে তখন নতুন মুনাফার হার কার্যকর হবে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয়ের জন্যই নতুন এই মুনাফার হার প্রযোজ্য হবে। এছাড়া যৌথ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিনিয়োগকারী সব সঞ্চয় স্কিমে মোট বিনিয়োগের ওপর প্রযোজ্য হারে মুনাফা পাবেন।

সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর পর শেয়ারবাজারে এখনো পর্যন্ত দুই দিন লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে একদিন শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে এবং একদিন সূচকের কিছুটা পতন হয়। তবে দুই দিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।

শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর ফলে শেয়ারবাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ভালো সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি শেয়ারবাজারে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারী ও শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পার্থক্য আছে। সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীরা সাধারণত ঝুঁকি নিতে চান না। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেশি হওয়ার কারণে তারা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্র কেনেন। তবে এখন যেহেতু সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানো হয়েছে, সেহেতু কিছু বিনিয়োগ শেয়ারবাজারে আসতে পারে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানো শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। ব্যাংকের সুদ হার এবং সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কম থাকলে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ারবাজারমুখী হয়ে থাকেন। এখন সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর কারণে আমরা আশা করছি শেয়ারবাজারে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার : পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। তবে নতুন নিয়মে এই সঞ্চয়পত্রে যারা ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করবেন তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ। তবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফার হার আগের মতোই থাকবে।

তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। সেটি এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়া যাবে ৯ শতাংশ। তবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফার হার আগের মতোই থাকবে।

অবসরভোগীদের জন্য নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে এতদিন ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যেত। এখন এই সঞ্চয়পত্রে যারা ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করবেন তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে এই হার হবে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফার হার আগের মতোই থাকবে।

পরিবার সঞ্চয়পত্রের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে মুনাফার হার বর্তমানে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে এখন থেকে এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার সাড়ে ৯ শতাংশ। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এর মুনাফার হার আগের মতোই থাকবে।

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবে মুনাফার হারে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই স্কিমের মুনাফার হার সাড়ে ৭ শতাংশ রাখা হয়েছে। তবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে তিন বছর মেয়াদি হিসাবে বর্তমানে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, নতুন নিয়মে এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে হবে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এছাড়া ওয়েজ আর্নারস ডেভলপমেন্ট ফান্ডের বর্তমান মুনাফার হার ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে নতুন হারে ১৫ লাখের বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা মিলবে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর ৩০ লাখের বেশি বিনিয়োগে মুনাফা পাওয়া যাবে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া বিনিয়োগ ৫০ লাখের বেশি হলে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads