• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
স্বস্তিতে ব্যাংক খাতের শেয়ারধারীরা

সংগৃহীত ছবি

পুঁজিবাজার

স্বস্তিতে ব্যাংক খাতের শেয়ারধারীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ অক্টোবর ২০২১

এক বছরের বেশি সময় ধরে উত্থানে ব্যাংক খাতের শেয়ার দর বেড়েছে সামান্যই। এ নিয়ে হতাশার মধ্যে এবার এক মাস ধরে টানা দর সংশোধনে এই খাতের শেয়ারধারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে বড় মূলধনি কিছু কোম্পানি ছাড়া সিংহভাগ কোম্পানির দরপতন হচ্ছে। এর বাইরে নয় ব্যাংক খাতও। তবে এই খাতে দরপতনের হার তুলনামূলক কম। যেকোনো একটি ভালো দিনেই কোম্পানিগুলো যেটুকু দর হারিয়েছে, তার সবটুকু ফিরে পেতে পারে। ব্যাংক খাতে কেবল লোকসানি একটি কোম্পানির শেয়ারদর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। আগের দুই মাসে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ২২ শতাংশ। এটির দাম আরও বেশি কমেছিল, তবে চলতি সপ্তাহে কিছুটা দর ফিরে পেয়েছে।

বাকি ৩১টি কোম্পানির মধ্যে ৯ শতাংশের বেশি কমেছে তিনটি কোম্পানির দর। একটির দর মাস শেষে অপরিবর্তিত আছে একটির, সাতটির দর বেড়েছে। চারটির দর কমেছে এক থেকে দুই শতাংশের মধ্যে। আটটি কোম্পানির শেয়ার দর কমার হার তিন থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে। ৮টি কোম্পানির শেয়ার দর ৫ শতাংশের বেশি থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

এই সময়ে মুনাফায় থাকা ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারানো ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৯.৮৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর কমেছে আরেকটি ব্যাংকের ৯.৪০ শতাংশ, আর তৃতীয় সর্বোচ্চ কমেছে ৯.২৫ শতাংশ। আরো একটি ব্যাংকের শেয়ারদর আপাতদৃষ্টিতে সাড়ে ৯ শতাংশ কমলেও সেটি ৮ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এবং সেই লভ্যাংশ সমন্বয় হয়েছে। অন্যদিকে প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বীমা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, প্রকৌশল এবং বস্ত্র খাতে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ এমনকি এর চেয়ে বেশি হারে দর সংশোধন হয়েছে বহু কোম্পানির।

বিমা খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে গত এক মাসে দর বেড়েছে কেবল দুটির, প্রকৌশল খাতের ৪২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে আটটির, বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৩টির। কমেছে বাকিগুলোর।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণা প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে বিনিয়োগাকারীরা ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। আসলে দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে এক সময় ভালো মুনাফা করলেও এখন দর সংশোধনের সময় দেখা গেছে, তারাই সবচেয়ে বেশি লোকসানে আছে। এ থেকে অভিজ্ঞতা বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হয়। ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি কমেছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের দর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে উত্থানের মধ্যে ব্যাংক খাতের একমাত্র লোকসানি কোম্পানিটি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি।

গত বছরের জুলাইয়ের শেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এবার বেড়ে হয় সর্বোচ্চ ৭ টাকা ৮০ পয়সা।

গত ২৯ জুলাইও শেয়ার দর ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে ২ সেপ্টেম্বর দাম দাঁড়ায় ৭ টাকা ৪০ পয়সা।

অথচ তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কখনও মুনাফার মুখ না দেখে কোম্পানিটি চলতি বছরও লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি, এমনকি লোকসান কমাতেও পারেনি। তার পরেও শেয়ার দর কেন এভাবে বাড়ছে, এমন প্রশ্নের মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর সংশোধন শুরু হতে না হতেই লাফিয়ে লাফিয়ে কমতে থাকে। গত ১০ অক্টোবর সেই ২৭ জুলাইয়ের দাম ৪ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে আসে দাম। তবে এরপর সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চার কর্মদিবসের মধ্যে তিন দিন বেড়ে হয় ৫ টাকা ৬০ পয়সা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর কমেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দর। এক মাসে ব্যাংকটির শেয়ার দর হারিয়েছে ৯.৮৪ শতাংশ। ১ টাকা ৩০ পয়সা কমে শেয়ার দর ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে হয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সা।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দর কমেছে ব্র্যাক ব্যাংকের, যেটির দাম সর্বোচ্চ পরিমাণে কমা কিছুটা অবাক করার মতোই ঘটনা। চলতি বছর অর্ধবার্ষিকে এই ব্যাংকটির আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত এক মাসে এই ব্যাংকটি দর হারিয়েছে ৪ টাকা ৮০ পয়সা শেয়ার দর ৫০টাকা ৬০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৪৫ টাকা ৮০ পয়সায়। শতকরা হিসেবে দর কমেছে ৯.৪৮ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ দর কমেছে চাপে থাকা এবি ব্যাংক। তবে এটির দর প্রায় সময়ই উঠা নামার মধ্যে থাকে।

৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির শেয়ারদর ছিল ১৬ টাকা ২০ পয়সা। সেটি কমে এখন দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ১ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯.২ শতাংশ। নতুন তালিকাভুক্ত সাউথবাংলার শেয়ার আপাতদৃষ্টিতে ৯.৪৭ শতাংশ দর হারিয়েছে দেখা গেলেও এর মধ্যে ২০২০ সালে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ সমন্বয় হয়েছে। এই বছরে ৪ শতাংশ বোনাস ও ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়া হয়েছে। এমনিতে নগদ লভ্যাংশ সমন্বয়ের কথা না থাকলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের পুঁজিবাজারে এই প্রবণতা আছে। এই দুটি বিষয় হিসাব করলে ৪ শতাংশের মতো কমেছে ব্যাংকটির শেয়ার দর। এই সময়ে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ৭.০৯ শতাংশ। শেয়ারদর ১৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সায়। ন্যাশনাল ব্যাংকের কম কমেছে ৬.৭৪ শতাংশ। ৬০ পয়সা কমে ৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৩০ পয়সায়।

মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ টানা বেড়ে যাওয়া ডাচ বাংলা ব্যাংক তিন মাস ধরেই সংশোধনে আছে। ৯৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমতে কমতে শেয়ার দর এখন দাঁড়িয়েছে ৭৯ টাকা ৯০ পয়সায়। এর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কমেছে ৫ টাকা ৪০ পয়সা বা ৬.৩৩ শতাংশ। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ৬.২৭ শতাংশ। এই সময়ে শেয়ার দর ২২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে ২০ টাকা ৯০ পয়সায়। রূপালী ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ৬.০২ শতাংশ। এই সময়ে দাম ৩৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৫ টাকা ৯০ পয়সায়।

প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর হারিয়েছে ৫.৯৫ শতাংশ। ১ টাকা ৪০ পয়সা কমে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে হয়েছে ২২ টাকা ১০ পয়সায়।

ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ারদর এই সময়ে কমেছে ৫.৮৪ শতাংশ। ২ টাকা ১০ পয়া কমে ৩৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সায়।

৪.৮০ শতাংশ কমেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের দর। ১০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সা। ৪.৭৮ শতাংশ কমেছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ারদর। ১ টাকা কমে ২০ টাকা ৯০ পয়সা থেকে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৯০ পয়সায়। ৪.৪৭ শতাংশ কমেছে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারদর। ৭০ পয়সা কমে ১৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ২০ পয়সায়। ৪.৪০ শতাংশ কমেছে এনসিসি ব্যাংকের শেয়ারদর। ৬০ পয়সা কমে ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সায়। ৪.২১ শতাংশ কমেছে সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ারদর। ৭০ পয়সা কমে ১৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৯০ পয়সায়। ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ৪.০৫ শতাংশ। ৬০ পয়সা কমে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ২০ পয়সায়। ৩.৩৩ শতাংশ কমেছে এসআইবিএলের দর। ৪০ পয়সা কমে ১৫ টাকা থেকে দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৫০ পয়সায়।

৪.৪৭ শতাংশ কমেছে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারদর। ৬০ পয়সা কমে ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সায়।

২.৯৭ শতাংশ কমেছে ইউসিবির শেয়ারদর। ৫০ পয়সা কমে ১৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৩০ পয়সায়। ২.৬৬ শতাংশ কমেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ারদর। ৪০ পয়সা কমে ১৫ টাকা থেকে দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৬০ পয়সায়। ১.৮৬ শতাংশ কমেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারদর। ৩০ পয়সা কমে ১৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৮০ পয়সা। ১.৩৬ শতাংশ কমেছে সিটি ব্যাংকের শেয়ারদর। ৪০ পয়সা কমে ২৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৮০ পয়সায়।

বাজার সংশোধনের একমাসে কমে গিয়েও শেষ পর্যন্ত বেড়েছে এনআরবিসির দর। সংশোধন শুরু হওয়ার আগের দিন শেয়ারদর ছিল ২৮ টাকা। সেখান থেকে দর এক পর্যায়ে ২৩ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে এসেছিল। কিন্তু গত ৬ কর্মদিবসের মধ্যে ৫ দিন বেড়ে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ বাজার সংশোধনের মধ্যে ব্যাংকটির দর বেড়েছে ১২.৮৫ শতাংশ বা ৩ টাকা ৬০ পয়সা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.৫৮ শতাংশ বেড়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার দর। এটির দরও কমে গিয়ে পরে বেড়েছে। বাজার সংশোধন শুরুর আগের দিন দাম ছিল ১৬ টাকা ৭০ পয়সা। ১ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে এখন দাম ১৭ টাকা ৮০ পয়সা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪.৮০ শতাংশ বেড়েছে যমুনা ব্যাংকের দর। ২২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ২৪ টাকা। তবে দাম একপর্যায়ে আরও বেড়ে ২৫ টাকা হয়েছিল।

চতুর্থ সর্বোচ্চ ২.৮৬ শতাংশ বেড়েছে উত্তরা ব্যাংকের দর। ২৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৭০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা ১০ পয়সা।

এছাড়া পূবালী ব্যাংকের শেয়ার দর ২ শতাংশ বেড়ে ২৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা ৫০ পয়সা, ব্যাংক এশিয়ার দর ০.৯৪ শতাংশ বেড়ে ২০ টাকা ২০ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৪০ পয়সা, আল আরফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের দর ০.৩৮ শতাংশ বেড়ে ২৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে হয়েছে ২৬ টাকা ২০ পয়সা। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর উঠানামা করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। সংশোধন শুরুর আগেও দাম ছিল ৩০ টাকা। এখনও তাই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads