• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কালো টাকার সুযোগ না পেয়ে হতাশা পুঁজিবাজারে

সংগৃহীত ছবি

পুঁজিবাজার

কালো টাকার সুযোগ না পেয়ে হতাশা পুঁজিবাজারে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০২২

বাজেট ঘোষণার পর প্রথম কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে দরপতন। এদিনে কোনো শেয়ারের সর্বোচ্চ পতনের হার ২ শতাংশ বেঁধে দেওয়ার পরও সূচকের ৪৮ পয়েন্ট পতনের হিসেবে, এটিকে বড় দরপতনই বলা যায়।

গত সপ্তাহে একটু একটু করে বাড়তে থাকা পুঁজিবাজার গত বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার আগে আগে স্লথ হয়ে যায়। বিশ্লেষকরা সেদিন বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য কী ঘোষণা আসে সেটা দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন বিনিয়োগকারীরা।

এবার বাজেটে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর করপোরেট করের হার আড়াই শতাংশ কমানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এটিকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, কালো টাকা নামে পরিচিতি পাওয়া অপ্রদর্শিত আয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। পুঁজিবাজারে লভ্যাংশের ওপর থেকে দ্বৈত করও প্রত্যাহার হয়নি। পাশাপাশি ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার আগের মতোই ৩৭.৫ শতাংশ রাখা হয়েছে।
বাজেট প্রতিক্রিয়া গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব রেখেছে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ।

গতকাল রোববার প্রথম কর্মদিবসের লেনদেনের চিত্র বলছে, বাজেট নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়নি। এক দিনেই দর হারিয়েছে তিন শতাধিক কোম্পানি। এর মধ্যে একটি বড় অংশের দর কমেছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ পর্যন্ত বা এর আশপাশে। বহু কোম্পানির দর সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত কমার পর ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। অর্থাৎ এই বিধান না থাকলে দরপতন আরো বেশি হতে পারত। লেনদেনের শুরু থেকেই সূচক ছিল নিম্নমুখী। আধা ঘণ্টা পরে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।

দিন শেষ কমেছে ৩০৬টি কোম্পানির দর, বেড়েছে ৫৩টির, আর ১৯টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে আগের দরেই। কমে গেছে লেনদেনও। বাজেট ঘোষণার দিন যেখানে হাতবদল হয়েছিল ৭৫৮ কোটি ২৬ লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার, সেটি কমে হয়েছে ৬৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল ৫ মে। সেদিন ডিএসইতে হাত বদল হয়ে ৪৬৮ কোটি ৭০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ না থাকা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের দাবি ছিল, পুঁজিবাজারের তারল্য বাড়াতে এবং অস্থিরতা দূর করতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা। এতে বিনিয়োগকারীরা আশায় ছিলেন, কালো টাকা বিনিয়োগ হলে তারা স্বল্প সময়ে কিছু প্রফিট টেকিং করতে পারবেন। ফলে আজকে শেয়ার কেনায় আগ্রহ দেখা যায়নি। বাজেট পুনর্বিবেচনায় কী আসে, সেটাই হয়ত দেখবেন তারা।

দর বৃদ্ধির তালিকায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভিত্তির কোম্পানিগুলোর আধিপত্য ছিল। শীর্ষে বিশের প্রায় সবগুলোই ছিল এ ধরনের কোম্পানি। এসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে না। কোনোটি লভ্যাংশ দিলে খুবই নগন্য।

শীর্ষ দশের তিনটির দর বেড়েছে ৯ শতাংশের ওপরে, একটি করে কোম্পানির ৭ ও ৬ শতাংশের বেশি, দুটির ৫ শতাংশের বেশি, একটির ৮ শতাংশের বেশি এবং দুটি কোম্পানির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

সবচেয়ে বেশি ৯.৯১ শতাংশ দর বেড়েছে ইন্স্যুরেন্স খাতের কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের। চলতি বছরেই তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির লেনদেন শুরু হয়েছে ৮ জুন। অভিহিত মূল্যের কিছুটা ওপরে থেকে লেনদেন হচ্ছে শেয়ার। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের দর ১২ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ৩০ পয়সায় হাত বদল হয়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৯০ শতাংশ দর বেড়েছে লোকসানি কোম্পানি দুলামিয়া কটনের। লভ্যাংশের ইতিহাস না থাকা কোম্পানিটির শেয়ারদর প্রায়ই অস্বাভাবিক হারে বাড়তে দেখা যায় আবার পড়েও যায়।

এরপরেই ৯.০৭ শতাংশ দর বেড়েছে মুন্নু ফেব্রিকসের। নিয়মিত লভ্যাংশ দিতে না পারার পর ২০০৯ সালে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয় কোম্পানিটিকে। গত বছর ফেরে সেখান থেকে। কিন্তু নগণ্য পরিমাণ মুনাফার পর কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি অর্থবছরে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ এসেছে শেয়ারে ১০ পয়সা।

বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকসের দর ৯.৪৮ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকায় হাত বদল হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ৬.২০ শতাংশ বেড়ে ৪১ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। এই কোম্পানিটির ল্যভাংশের ইতিহাস ভালো নয়। তার পরেও প্রায়ই কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে যায়।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৭.১০ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয়েছে ২১ টাকা ১০ পয়সায়। ধারাবাহিক দুই বছর লভ্যাংশ দিলেও ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ না করায় কোম্পানিটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি।

ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্কের দর বেড়েছে ৬.৬৫ শতাংশ। স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটি লভ্যাংশ দিলেও খুবই নগণ্য। গত দুই বছরে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

৫.৮৮ শতাংশ দর বেড়ে ১৯ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল ফিড মিলসের শেয়ার। কোম্পানিটির লভ্যাংশের ইতিহাসও খুব বেশি ভালো নয়।

সপ্তম অবস্থানে থাকা এস আলম স্টিলসের দর ৫.২৬ শতাংশ বেড়ে ৩২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৩৪ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
৪ শতাংশের বেশি দর বেড়ে স্বল্প মূলধনি ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস এক হাজার ৯২০ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ২ হাজার ১৬ টাকা ৯০ পয়সায়, দুর্বল কোম্পানি সাফকো স্পিনিং ২১ টাকা ২০ পয়সা থেকে ২২ টাকা এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩.২৩ শতাংশ বেড়ে ১১৮ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

শীর্ষ ১০টির দরই কমেছে সর্বোচ্চ সীমায়। সামিট অ্যালায়েন্সের দর ৩০ টাকা থেকে কমে ২৯ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্য বেশিরভাগই বীমা কোম্পানি, যেগুলোর দর গত সপ্তাহে অনেকটাই বেড়েছে দল বেঁধে।

দ্বিতীয় দর কমেছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের। বৃহস্পতিবার ৮০ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল প্রতিটি শেয়ার। সেটি গতকাল হাতবদল হয়েছে ৭৮ টাকা ৭০ পয়সায়। নিটল ইন্স্যুরেন্সের দর ৫০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে ৪৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

এরপরেই ২.৫৪ শতাংশ দর কমেছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের। ৯০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮৮ টাকা ২০ পয়সায়। রেনউইক যজ্ঞেশর, জনতা ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং এবং বিচ হ্যাচারি ছিল এই তালিকায়।

সূচক সবচেয়ে বেশি নামিয়েছে ওয়ালটন। কোম্পানিটি একাই সূচক ফেলেছে ৬.১৮ পয়েন্ট। কোম্পানিটির দর কমেছে ১.০৫ শতাংশ।
রবির কারণে সূচক কমেছে ৪.৬১ পয়েন্ট। টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিটির দর কমেছে ১.৬৮ শতাংশ। স্কয়ার ফার্মার দর ১.১৯ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৪.০৫ পয়েন্ট।

এছাড়া ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ০.৫৪ শতাংশ দরপতনে ২.৮৫ পয়েন্ট, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের ১.১ শতাংশ দর কমায় ১.৬৩ পয়েন্ট, ব্র্যাক ব্যাংকের দরপতনে ১.৫৮ পয়েন্ট, বিকন ফার্মার কারণে ১.৫৪ পয়েন্ট, পাওয়ার গ্রিডের কারণে ১ পয়েন্ট, আল আরাফাহ ইসলামিক ব্যাংকের কারণে ০.৯৪ পয়েন্ট এবং বার্জার পেইন্টসের কারণে ০.৮২ পয়েন্ট সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক ফেলেছে ২৫.২ পয়েন্ট। সূচক বাড়ানোর চেষ্টায় যারা।

সূচকের আরো পতন ঠেকাতে প্রধান ভূমিকায় ছিল গ্রামীণ ফোন। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ০.৫৬ শতাংশ, যার কারণে সূচক বেড়েছে ৪.০৪ পয়েন্ট।

আর কোনো কোম্পানি ১ পয়েন্ট সূচক বাড়াতে পারেনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ০.৯৮ পয়েন্ট যোগ হয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের দর বৃদ্ধির কারণে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২.২৭ শতাংশ। শাইনপুকুর সিরামিকসের দর ৯.২৫ শতাংশ বাড়ার ফলে সূচক বেড়েছে ০.৯৮ পয়েন্ট।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলসের দর ২.৮ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৮ ৬ পয়েন্ট। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের ০.৪ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ০.৫৭ পয়েন্ট।

এছাড়া মুন্নু ফেব্রিকস ০.৪ পয়েন্ট, ইউনাইটেড পাওয়ার ০.৩১ পয়েন্ট, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস ০.২৯ পয়েন্ট, ক্রাউন সিমেন্ট এবং বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডের কারণে সূচক বেড়েছে ০.২৬ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচকে যোগ করতে পেরেছে ৮.৯৫ পয়েন্ট।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads