• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

রাজধাণীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে সংস্কার ও খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ তেকে বাঁশবাড়ী রোড হয়ে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যন্ড পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছে রাস্তা। এতে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। ছবিটি মোহাম্মদপুর বাঁশবাড়ী এলাকা থেকে তোলা।

ছবি- বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

শিয়া মসজিদ-মোহাম্মদপুর সড়ক বন্ধ দুই মাস

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০১৮

কী বর্ষা, কী শীত বা গ্রীষ্ম। শিয়া মসজিদ থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত বাঁশবাড়ী সড়কটিতে লেগে থাকত স্থায়ী জলাবদ্ধতা। ভাঙাচোরা রাস্তাটিতে যান বিকল হয়ে জট সৃষ্টি হওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার। যাত্রী নিয়ে রিকশা উল্টে যাওয়া ছিল প্রতিদিনের চিত্র। সম্প্রতি এই এলাকায় পয়ঃ ও পানি নিষ্কাশনের কাজ শেষ করেছে ঢাকা ওয়াসা। মোহাম্মদপুর গ্লাস ফ্যাক্টরি মোড় থেকে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত সড়কটির বুক খুঁড়ে বসানো হয়েছে মোটা ব্যাসের কনক্রিট পাইপ। পাইপ বসানোর পর গর্ত ওভাবেই পড়ে আছে। আর রাস্তা খোঁড়ার মাটি তুলে সড়কটি ছাপিয়ে পাশের ফুটপাথেও রাখা হয়েছে। সেবাদানকারী সংস্থা ওয়াসার কাজ শেষ হলেও যান চলাচল দূরের কথা, সাধারণ পথচারীও স্বচ্ছন্দে চলতে পারছে না সড়কটিতে। এ দুর্ভোগের সঙ্গে যোগ হয়েছে কয়েক দিনের বৃষ্টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াসা রাস্তা খননের নির্ধারিত ফিস ডিএনসিসির কোষাগারে জমা দিলেও সড়কটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। সংস্কার কাজ বিলম্বের কারণ হিসেবে সড়কের বর্তমান উচ্চতা থেকে এক-দেড় ফুট উঁচু ম্যানহোল নির্মাণ করাকে দায়ী করা হচ্ছে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে। সড়ক ও আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি ম্যানহোল বর্তমান সড়কের উচ্চতা থেকে এক-দেড় ফুট উঁচু করে নির্মাণ করেছে ওয়াসা। এর ফলে সড়কটি সংস্কার করতে পুরো সড়কের উচ্চতা বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আর এতে সিটি করপোরেশনকে গুনতে হচ্ছে নির্ধারিত বাজেটের চাইতেও কয়েকগুণ বেশি অর্থ। বাজেট সংস্থানের পরই সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে সিটি করপোরেশনের।

দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় সড়কটি বন্ধ থাকায় তার প্রভাব পড়েছে আশপাশের সড়ক ও অলিগলিগুলোতে। শ্যামলী রিং রোড হয়ে মোহাম্মদপুর চলাচলকারী সকল যানবাহনকে ব্যবহার করতে হচ্ছে বিকল্প রাস্তা। আর এতে এই এলাকার সামগ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থার ওপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির শেষদিকে মোহাম্মদপুর, বাঁশবাড়ী, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি, হাউজিং লিমিটেড ও নূরজাহান রোড এলাকায় পয়োনিষ্কাশনের কাজ শুরু করে সংস্থাটি। পর্যায়ক্রমে এলাকাভিত্তিক এসব উন্নয়ন শুরু করে ওয়াসা। এরই অংশ হিসেবে মার্চে শিয়া মসজিদ-মোহাম্মদপুর বাঁশবাড়ী সড়কের কাজ শুরু করে তারা।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সড়কের আশপাশের বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। দেড় কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছতে কয়েক কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষকে। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত রিকশা ভাড়া।

মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কের বাসিন্দা রাজিবুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে জানান, অফিসে যাতায়াত করতে তাকে সব সময় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করতে হয়। আগে বাসা থেকে বাসস্ট্যান্ড যেতে ১৫-২০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগত। বাঁশবাড়ী সড়ক বন্ধ থাকায় এখন রিকশা ভাড়া গুনতে হয় ৩০-৪০ টাকা।

বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এসব এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির ৬ নম্বর সড়কের বাসিন্দা মো. জিয়াউর রহমান টিটু প্রতিদিন সকালে অফিস যাওয়ার পথে সন্তান তূর্যকে পৌঁছে দেন ধানমন্ডির একটি স্কুলে। নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতেই এই কাজটি করেন তিনি। সন্তানের স্কুল ও নিজের অফিসে যেতে বাঁশবাড়ীর সড়কটিই ব্যবহার করতেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘদিন সড়কটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে তাকে জাপান গার্ডেন সিটি, তাজমহল রোড, নূরজাহান রোড হয়ে যেতে হয় ধানমণ্ডি। তিনি বলেন, বর্তমানে অফিসে যেতে ও বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে আমাকে তিন কিলোমিটার রাস্তা বেশি ঘুরতে হয়। আর এই তিন কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ৫টি সিগন্যাল। বাঁশবাড়ী সড়কটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে অফিসে যেতে জ্যাম, সিগন্যাল পার হতে দুই ঘণ্টা সময় বেশি লাগে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব বলেন, সড়ক সংস্কার বা নির্মাণের কাজ আমাদের হাতে নেই। এটা নগর ভবন থেকেই করা হয়। আমরা সড়কের অবস্থা বুঝে নগর ভবনে চাহিদাপত্র দিই। শুধু বাঁশবাড়ী সড়ক না, আমার এলাকার আরো বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে নগর ভবনকে জানানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, পয়োনিষ্কাশনের কাজ করতে গিয়ে ওয়াসা বেশ কিছু সড়কে বর্তমান উচ্চতা থেকে একটু উঁচু করে ম্যানহোল নির্মাণ করেছে। সড়ক খননের একটা ফিস নির্ধারিত আছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আদায় করা অর্থ দিয়ে এসব সড়ক সংস্কার সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমাদের বিকল্প বাজেটের চিন্তা করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাজেটের সংস্থানও হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা সড়কগুলো সংস্কারের কাজ শুরু করেছি।

উন্নয়নের নামে জনভোগান্তির পেছনে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবীব। তিনি বলেন, ওয়াসা কাজ করতে গিয়ে ম্যানহোল উঁচু করে ফেলেছে, এতে রাস্তা সংস্কারের খরচ বেড়ে গেছে- এমন অজুহাত সিটি করপোরেশনের দেওয়া মানায় না। দীর্ঘদিন ধরে একে অন্যের ওপর দায় চাপানোর একটা সংস্কৃতি সেবাদান সংস্থাগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ওয়াসা যখন তাদের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের পরিকল্পনা সম্পর্কে সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছে তখনই তো তারা জানে রাস্তার উচ্চতা বাড়ানো হবে। তখন তারা ওয়াসার কাছ থেকে পুরো অর্থ নিতে পারত, অথবা অর্থের সংস্থান করে তারপর কাজের অনুমতি দিত। এভাবে রাস্তা বন্ধ করে জনভোগান্তি সৃষ্টি করার কোনো অধিকার তাদের নেই। একজন নাগরিক হিসেবে আমি এই ভোগান্তির দায় সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর ওপর চাপাতে পারি এবং আমার ক্ষতিপূরণও দাবি করতে পারি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads