• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ভাড়া বৃদ্ধি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত

ছবি: বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

ভাড়া বৃদ্ধি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২১

আবারো করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গণপরিবহনে যাত্রীসংখ্যা সীমিত করতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা কার্যকর হচ্ছে আজ বুধবার থেকে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাসমালিকরা। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী বলে উল্লেখ করেছে যাত্রী ও পরিবহন সেক্টর নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন। তারা বলে, এমনিতেই সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের নামে রাজধানীর গণপরিবহনগুলো তিন-চারগুণ, ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করে। তার ওপর আবারো ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী ও আত্মঘাতী।

একই সাথে গত বছরের মতোই গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানবে না বলে সতর্ক করে দিয়ে তারা বলেছেন, এর ফলে সড়কে যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকদের সাথে দ্বন্দ্ব তৈরির শঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘গত বছর লকডাউন শেষে গণপরিবহন চালুর পর ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পর সরকারের ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নিয়ম অধিকাংশ পরিবহনেই মানেনি। কিন্তু বর্ধিত ভাড়া ঠিকই আদায় করা হয়েছিল। এবারো একই পরিস্থিতি তৈরি হবে এটা সহজেই অনুমেয়। কারণ পরিবহন শ্রমিকদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।’

এ প্রসঙ্গে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘গণপরিবহনের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই তারা বাস্তবায়ন করে। ফলে যে শর্তে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে অধিকাংশ গণপরিবহনই তা মানবে না। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে ঠিকই বর্ধিত ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায় করে ছাড়বে। এমনিতেই রমজানকে সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিন্তু গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রভাব জিনিসপত্রের দামের ক্ষেত্রেও পড়বে। ফলে এটি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।’

বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস এবং ওয়েবিলের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় তিন-চারগুণ ভাড়া। প্রতি কিলোমিটারে সরকার নির্ধারিত ১.৬০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় কোনো কোনো রুটে। রাজধানীর গুলশান-আগারগাঁও-শ্যামলী রুটে আলিফ, বৈশাখী, অগ্রদূতসহ ওই রুটে চলাচলকারী সব পরিবহনে আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা তারও আগে যে-কোনো গন্তব্যের জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে ২০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। একইভাবে গুলিস্তান-গাবতলী রুটের বাসগুলোতেও একই পরিস্থিতি। রামপুরা-বাড্ডা রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ আদায় করা হয়। এমনকি আধা কিলোমিটার গন্তব্যেও ১০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। এভাবেই রাজধানীর প্রতিটি রুটেই ওয়েবিলের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনগুলো। এমন পরিস্থিতিতে আবারো ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধিকে সরকারের অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।

তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং গণপরিবহনে নিয়মনীতি না মানার জন্য পরিবহন শ্রমিকদের দায়ী করেছেন মালিকরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে প্রায়ই মিটিং করে থাকি। আমরা সবসময়ই এসব নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু তারপরও অনেকে করে থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের কি করার আছে।’

দীর্ঘদিন ধরে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি অভিযোগ করে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘গত ৬ বছরে বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। সেজন্য মালিকরা লোকসানের মধ্যে আছে। আমরা সরকারকে বার বার বলা সত্ত্বেও আমলে নিচ্ছে না।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপরিবহন নিয়ে সরকারের কোনো টেকসই নীতিমালা না থাকায় গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যসহ নানা অনিয়ম চলছে।

গত বছর কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটির ফলে ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন। ছুটি তুলে দেওয়ার পর সে বছরের ১ জুন থেকে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের শর্তে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে বাস ও মিনিবাসসহ গণপরিবহন চালু হয়। কিন্তু সেই শর্ত অনেক পরিবহনই মানেনি। এজন্য ১০০টি পরিবহনের বিরুদ্ধে ৭৮৭টি মামলাও করেছিল বিআরটিএ। তবে তা ছিল গুটিকয় পরিবহনের বিরুদ্ধে।

স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য তখন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রুট পারমিট বাতিলসহ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads