• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
গণপরিবহনে স্বস্তি মেলেনি

ছবি: বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

গণপরিবহনে স্বস্তি মেলেনি

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০২১

দুই দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার গণপরিবহন চলাচলের প্রথম দিন রাজধানীতে বাস সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। তবে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি। একইসাথে বাড়তি ভাড়া নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল আগের মতো।

এরআগে দেশেব্যাপী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য ১৮ দিক নির্দেশনা দিয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল সরকার। এজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় গণপরিবহন। তবে গতকাল নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে কিছু মানুষের ভোগান্তি কমলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

গতকাল রাজধানীর সায়দাবাদ, মিরপুর-১, ১০, ১৪, কালশি, ফার্মগেট, আসাদগেট, কল্যাণপুর, আসাদগেট, গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই ওইসব এলাকায় সরকারি-বেসরকারি গণপরিবহন চলাচল করছে। তবে বাসে উঠতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে অফিসগামী যাত্রীদের। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বদলে যায় এ চিত্র। অনেক স্থানে তখন বাসকে অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীর জন্য।

এদিকে গণপরিবহনগুলোতে সরকারি নির্দেশ অনুসারে ধারণক্ষমতার অর্ধেক আসন খালি রেখে চলাচল করতে হচ্ছে। আর এই কারণে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের নিতে অনীহা দেখায় বাসচালকরা। ফলে বাসে উঠতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক যাত্রীকে। সময়মতো অফিস পৌঁছাতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। আবার ভাড়া নিয়েও বিপাকে পড়তে হয়েছে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের। ২০ টাকার কমে কোনো ভাড়া নিচ্ছেনা কন্ডাক্টররা। সৈকত হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, বাস থামানোর পর যখন স্বল্প দূরত্বের কথা বলছি তখন আর কেউ নিতে চাইছে না। সিট খালি থাকলেও গাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাতায়াতের বাড়তি ভাড়া গুনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাস শেষে বেতনের একটা বড় অংশ চলে যাবে যাতায়াত ভাড়ায়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই মানুষের আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বাড়তি বাস ভাড়া তাদের ওপর আরো  চাপ সৃষ্টি করছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত সিট তত যাত্রী পরিবহণ করলে বাড়তি ভাড়ার চাপ থেকে মুক্তি পেত যাত্রীরা।

এদিকে গণপরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শৈথিল্যতা দেখা গেছে। যাত্রার শুরুতে বাস জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশ থাকলে কোনো বাস মালিক-চালকই এই নির্দেশ মানছেন না। বাসে যাত্রীর হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়ার নিয়ম থাকলে অধিকাংশ বাসেই সেই নিয়ম মানতে দেখা যায়নি।

সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে সকালে বলাকা পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাসকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একটি ট্রিপ শেষ করে আবারো যাত্রী উঠানো শুরু করলেও তারা বাসটিকে জীবাণু মুক্ত করেনি। এবিষয়ে বাসটির চালক তোফাজ্জল মিয়া জানান, সকালে একাবার স্যাভলন দিয়ে স্প্রে করা হয়েছে। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় পুনরায় স্প্রে করার সময় পাচ্ছি না। বাস যাত্রীদেরও অধিকাংশের মুখেই ছিল মাস্ক। হাসান নামে এক যাত্রী বলেন, বাসগুলো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। গাড়িতে উঠার আগেই স্যাভলন বা স্যানিটাইজার না দেওয়া হলেও বাস চলাচল চালু হওয়াতে আমাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে। শাহবাগ থেকে মিরপুরের উদ্দেশে রওনা করা শামিম হোসেন বলেন, অফিস খোলা কিন্তু পরিবহন চলাচল করেনি। গত দুইদিন অফিসে যেতে দেরি হয়ে গেছে। বাস নেই তাই সিএনজিতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হয়েছে। বাস চলাচল আবারও চালু হওয়ায় কিছুটা হলেও আমাদের ভোগান্তি কমেছে। বাস চলাচল শুরু হওয়ায় খুশি বাস চালক ও তাদের সহকারীরাও। মিরপুর রুটের অছিম পরিবহনের কন্ডাক্টর হাবিব বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিচ্ছি। সকাল থেকে যাত্রী ভালো পেয়েছি। এভাবে পরিবহনগুলো চললে যাত্রীদের পাশাপাশি আমরাও বেঁচে যাবো। ভাড়া আদায়েও কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। রাস্তা ফাঁকা থাকায় কষ্টও কম হচ্ছে। তবে তাদের ‘বাড়তি’ আয় কমে গেছে বলে জানান তিনি।

এর আগে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া অন্য সব গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল।

এরপর গত মঙ্গলবার বিকেলে নিজের সরকারি বাসভবন থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন সেবা চালু থাকার ঘোষণা দেন। যা গতকাল বুধবার সকাল থেকে কার্যকর হয়। তবে শহরের বাইরের কোনো পরিবহন শহরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বের হতেও পারবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লায় গণপরিবহন চলাচল যথারীতি বন্ধ থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads