• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ০৪ মে ২০২১

লকডাউনের মধ্যেও বিভিন্ন কল-কারখানা, অফিস-আদালত, দোকানপাট, মার্কেট-শপিংমল এবং গণপরিবহন ছাড়া প্রায় সব ধরনের যান চলাচল করছে। এবার সেই গণপরিবহনও চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ রুটে বাসসহ চলবে সব ধরনের পরিবহন। কিন্তু দূরপাল্লার যানবাহন ও লঞ্চ বন্ধ রাখায় ভোগান্তির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বাড়ছে ক্ষোভ। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে কেউ হাস্যকর, কেউ প্রহসন বলছেন।

লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এটি সরকারের প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। একদিকে, সব খুলে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি আর লকডাউনের নামে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমাদের বলার মতো কোনো জায়গা নেই।’

বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘নৌ-শ্রমিকদের দেখার কেউ নেই। তাদের এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে।’ বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় পাঁচ লাখ নৌ-যান শ্রমিক রয়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর এই সময়টাতে শ্রমিকরা কর্মমুখর থাকেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে আমাদের শ্রমিকরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তার আশা, সরকার ঈদের আগে লঞ্চসহ দূরপাল্লার সব গণপরিবহন খুলে দেবে।

এদিকে, ঈদের আগ মুহূর্তে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন মালিকরাও। তারা দুঃশ্চিন্তায় আছেন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে। প্রায় পাঁচ শতাধিক লঞ্চের মালিকরা দীর্ঘদিন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিজাম শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মালিক নিজাম উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের বিপুল অঙ্কের টাকা ক্ষতিতো হচ্ছেই। সেইশ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে আমরা আছি বেকায়দা।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সরকারের সিদ্ধান্তকে অমানবিক বলে আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘সব খুলে দেওয়া হয়েছে, লকডাউন কেবল দূরপাল্লার বাস, ট্রেন আর লঞ্চের বেলায়।’

তিনি সরকারের সিদ্ধান্তে হতাশা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ভেবে পাইনা এটা কেমন লকডাউন। ৩৫ লাখের মতো পরিবহন শ্রমিক এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঈদের আগ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই কাম্য ছিলো না।’

এদিকে, গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউনের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় সড়ক, নৌ, রেল ও বিমানসহ দূরপাল্লার সবধরনের পরিবহন ব্যবস্থা। এতে অনেকেই গ্রাম কিংবা বিভিন্ন গন্তব্যে জরুরি প্রয়োজনে অথবা বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন। কেউ কেউ ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার ছাড়াও বিভিন্ন পণ্যবাহী পরিবহনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছেন। কিন্তু এতে  এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। পাশাপাশি এসব যাতায়াতে যেমনি গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ ভাড়া তেমনি নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়ও।

বুরহান ফয়সাল নামে ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তার শ্বশুর মারা যাওয়ায় গত ১৩ এপ্রিল লকডাউনের মধ্যেই অনেক কষ্টে গ্রামের বাড়ি ফেনি থেকে চট্টগ্রামে যান। এরপর কঠোর লকডাউনের কারণে তিনি আর ফিরতে পারেননি। গতকাল তিনি একটি কাভার্ডভ্যানে করে চট্টগ্রাম থেকে ফেনিতে ফেরেন। এ নিয়ে ফেসবুকে ছবিসহ তার দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো- ‘জীবনে প্রথম কাভার্ডভ্যান জানি...চিটাগাং থেকে ফেনী। কঠিন এ জার্নি সেলিব্রেট করতে কয়েকদিন নেটওয়ার্কের বাইরে থাকব ইনশাআল্লাহ। ঠিকাছে না?’

বুরহান ফয়সাল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে দূরপাল্লার যানবাহন সচল রাখা হলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। অথচ বিভিন্ন মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিক্সায় ঠাসাঠাসি করে ঠিকই লোকজন যাতায়াত করছে। লকডাউনের নামে দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রাখা হাস্যকর সিদ্ধান্ত।’

ফয়সালের মতো অসংখ্য মানুষ জরুরি প্রয়োজনে ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছেন। এতে কখনোবা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। গতকাল তেমনই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত মাদারীপুরে শিবচরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের কাঁঠালবাড়ী ঘাটসংলগ্ন এলাকায়। বালুবাহী জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে একটি স্পিডবোট উল্টে গিয়ে ২৭ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় আরো তিনটি শিশু ও এক নারীকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, দুর্ঘটনার পর চালকসহ অন্যদের পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার পাশপাশি নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এরই মধ্যে কিছু অসাধু স্পিডবোট চালক অবৈধভাবে যাত্রী পারাপার করে আসছে। এসব বোটে কোনো স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাইতো নেই-ই উল্টো স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads