• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল আজ শুরু

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল আজ শুরু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০২১

করোনা সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে থাকায় আগামী দিনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ কারণে লকডাউন তুলে না নিয়ে তা বাড়ানোর আদেশ জারি করা হয়েছে। চলমান লকডাউন বা আরোপিত বিধিনিষেধ আগামী ১৬ মে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

তবে এই সময়ে চলমান লকডাউনের কৌশল পরিবর্তন করেছে সরকার। তিন দিনের ঈদের ছুটির দুদিন শুক্রবার ও শনিবার পড়লেও বাড়ানো হয়নি এ ছুটি। শুধু তাই নয়, সরকারি-বেসরকারি কলকারখানা, কোনো প্রতিষ্ঠানও সরকার নির্ধারিত তিন দিনের ছুটি বাড়িয়ে ভোগ করতে পারবে না। আড়া ঈদের ছুটিতে নিজ নিজ কর্মস্থলের বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিকালীন তিন দিন স্ব স্ব কর্মস্থলে থাকা আবশ্যিক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মহামারউর মধ্যে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিতে বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকতে হবে। পাশাপাশি বিক্ষোভ, দাবি-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আজ থেকে চলবে গণপরিবহন। তবে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। এক জেলার গাড়ি অন্য জেলায় যেতে পারবে না।

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা মহানগরসহ সব জেলা শহরের মধ্যে গণপরিবহন চলাচল করবে। কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে গাড়ি চালানোর জন্য ঢাকা মহানগরে চলাচলকারী সব রুট মালিক সমিতি বা পরিবহন কোম্পানির নেতাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এগুলো হলো-মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী গাড়িতে উঠাতে পারবে না এবং গাড়ির স্টাফদের মালিক মাস্ক সরবরাহ করবে। গাড়িতে সিটের অর্ধেক যাত্রী বহন করতে হবে। অর্থাৎ ২ সিটে একজন যাত্রী বসবে। লকডাউনে মালিক-শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এক্ষেত্রে রুট মালিক সমিতি বা পরিবহন কোম্পানির জিপির নামে কোরো প্রকার অর্থ গাড়ি থেকে আদায় করতে পারবে না।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, সীমানা জটিলতায় ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোকানপাট বা শপিংমল আগের মতো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত আদেশ না মানলে তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোনো ছাড় নয়।

মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকাসমূহে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন/পৌরসভা মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এসব কঠোর বিধিনিষেধ আগের আদেশে ছিল না। প্রজ্ঞাপনের কপি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, উজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদের একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন, ঈদের ছুটি বাড়ালেই মানুষ এদিক-সেদিক মুভমেন্ট করবে। এতে সংক্রমিত হবে করোনা। এ কারণেই এই বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিজ নিজ দপ্তরের প্রধানদের মৌখিকভাবে বলা হয়েছে, অধস্তন কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্ব-স্ব কর্মস্থলে আছেন কি না তা মনিটর করতে। কাউকে তাৎক্ষণিক ওয়ার্ক স্টেশনে পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়েছে।

এদিকে গ্রাহকদের জরুরি আর্থিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে আর্ির্থক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, জরুরি আর্থিক সেবা দিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম চালু রাখতে হবে।

এতে বলা হয়, গ্রাহকদের হিসাবে মেয়াদপূর্তিতে স্থায়ী আমানত নগদায়ন, ঋণের কিস্তি জমাদান ইত্যাদি জরুরি আর্থিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ৬ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঢাকায় একটি শাখা ও ঢাকার বাইরে প্রতি জেলায় সর্বোচ্চ একটি শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। জরুরি গ্রাহক সেবা অব্যাহত/নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনবলের বিন্যাস ও উপস্থিতির বিষয়টি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বীয় বিবেচনায় সম্পন্ন করবে।

প্রসঙ্গত, চলমান লকডাউন শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার রাত ১২টায়। ৫ মে লকডাউনের মেয়াদ শেষে ঈদের আগে কর্মদিবস পাওয়া যাচ্ছে তিনটি। এগুলো হচ্ছে-৬ মে (বৃহস্পতিবার), ৯ মে (রোববার) ও ১১ মে (মঙ্গলবার)। এর মধ্যে ৭ ও ৮ মে হচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। এরপর ১০ মে সোমবার শবেকদরের ছুটি। আগামী ১২ মে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। রমজান মাস যদি ২৯ দিনে শেষ হয় তাহলে ঈদুল ফিতর হবে ১৩ মে। এ ক্ষেত্রে ১৩ ও ১৪ মেও (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) ঈদের ছুটি থাকবে। তবে রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হলে ঈদের ছুটি আরো একদিন বাড়বে, সে ক্ষেত্রে ১৫ মে শনিবারও ছুটি থাকবে।

উল্লেখ্য, ভারতের নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ কারণে সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশ, স্থল ও নৌ-সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সংক্রমণের হার কমাটা অব্যাহত রাখতে না পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। তখন আর লকডাউনে কাজ হবে না বলে মনে করেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা এখনো ঝুঁকিতে রয়েছি। কবে নাগাদ ঝুঁকিমুক্ত হব তা নিশ্চিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে সবকিছু স্বাভাবিক করে দেওয়া কতখানি যুক্তিযুক্ত হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কোনো কিছুই চূড়ান্ত করা হয়নি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। ভারতের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। মানুষের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকাতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads