• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ঝুঁকিতে চালক ও যাত্রী

ছবি: বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

দূরযাত্রায় মোটরবাইক-পিকআপ

ঝুঁকিতে চালক ও যাত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০২১

করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ চলছে দেশে। সংক্রমণ রোধে দেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে চলছে কঠোর লকডাউন। করোনার প্রথম ঢেউয়ের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশ। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন করে কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্যা মানুষ। তাই পেটের দায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন অনেকেই। লকডাউনে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন। কিন্তু তা সত্ত্বেও থেমে নেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া যাত্রী ও বাহন। রাজধানী ঢাকার যেসব স্থানে থেকে দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়ত সেসব স্থানে এখন দেখা যায় মোটরসাইকেল, পিকআপ আর মাইক্রোবাসের সারি। প্রাইভেট কারের সংখ্যাও কম নয়। এসব বাহনে করে ঝুঁকি নিয়ে চালক ও যাত্রী উভয়ে যাচ্ছেন দূরের গন্তব্যে।

গত বছর করোনার কারণে কর্ম হারানো অনেক মানুষই আগের কর্মে আর ফিরতে পারেনি। কিন্তু পেট তো কোনো কথা শোনে না। তাই বাধ্য হয়ে তারা অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করছেন কাজ। তেমনই একজন সাভারের শহীদুল ইসলাম। একটি কেজি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গত বছর করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মাস পরে বন্ধ হয়ে যায় তার বেতনও। মোটরসাইকেল চালাতে জানতেন। ঢাকায় এসে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ে নিবন্ধন করে যাত্রী বহন শুরু করেন। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে সব খরচ বাদ দিয়ে হাজারখানেক টাকা নিয়ে বাসায় ফিরতেন। এ বছর লকডাউন শুরু হলে অ্যাপ সার্ভিসও বন্ধ হয়ে যায়।  কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো আর বন্ধ হয় না। সংসারের সদস্যদের খাবার জোগাড় করতে নেমে পড়েন রাস্তায়। ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুদিন মামলা খেয়েছেন। এরপর থেকে ঢাকার বাইরে বিশেষ করে ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন। তিনি বললেন, ঝুঁকি নিয়ে সাভার-মানিকগঞ্জের যাত্রী বহন করি। তবে পাটুরিয়া ঘাটে যেতে পারলে আয় ভালো হয়। কিন্তু আমার মতো প্রায় দেড় হাজার বাইকার (মোটরসাইকেল চালক) আছে এই রুটে।  ফলে সবাই দূরের যাত্রী পায় না। খুব সকালে যেতে পারলে যাত্রী পাওয়া যায়। পথে কোথাও চেকপোস্টে গাড়ি আটকায় না। বর্তমানে সারাদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে তার আয় হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। গাবতলী দিয়ে ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে গাবতলী ব্রিজের কাছে গেলেই দেখা যায় মোটরসাইকেল, পিকআপ আর মাইক্রোবাসের সারি। প্রাইভেট কারের সংখ্যাও কম নয়। যাত্রীর সংখ্যাও কম নয়।  অনেকটা ঈদের আমেজ যেন। সকালে ভিড়টা বেশি হয়। যেসব যান আগে শহরের মধ্যে চলাচল করতো এখন সেগুলো ঝুঁকি নিয়ে দূরের যাত্রী বহন করছে। দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকাঢ মানুষও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব বাহনে চড়ছে। সম্প্রতি গাবতলী থেকে আমিন বাজার অবধি হেঁটে চোখে পড়লো ফুটপাতে হাঁটার জো নেই। যাত্রীরা ভিড় করে হেঁটে যাচ্ছেন। কোথায় গিয়ে গাড়িতে উঠবেন ঠিক বোঝা যায় না।  পেছন পেছন হেঁটে গেলে চোখে পড়ে কারো হাতে কাপড়ের ব্যাগের সঙ্গে সিলিং ফ্যান, আইপিএসের মেশিন। একজনের মাথায় ছোট্ট মিটসেফ। কাঁধে ঝোলা। ব্রিজের এ মাথায় দূরের ভাড়া বেশ চড়া।  তাই ব্রিজ পেরিয়ে পশ্চিম প্রান্তে যাচ্ছেন কম ভাড়ার আশায়। 

তপ্ত রোদে প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে ব্রিজ পার হয়ে ওপারে যাচ্ছেন মফজেল হোসেন। যাবেন পঞ্চগড়ে। কম ভাড়ার আশায় রোদের মধ্যে হাঁটছেন। মফজেল জানান, ঢাকায় রিকশা চালাতেন। ঈদের আগেই বাড়ি চলে যেতে চান।  বাড়ি গিয়ে কৃষিকাজ করে খাবেন। শুনেছেন ব্রিজের ওপারে ভাড়া কম। তাই সেদিকে যাচ্ছেন। ব্রিজের নিচে যেতেই শোনা গেল একটা ট্রাক ডাকছে, পঞ্চগড় পঞ্চগড়। হেলপার তার কাছে ভাড়া চাইলো ১ হাজার টাকা।  মফজেল ৫০০ টাকা দিতে চান। হেলপার নাছোড়। দুপক্ষের দরদামে রফা হলো ৮০০ টাকায়।

পিকআপগুলো যাচ্ছে সাভার, মানিকগঞ্জ, ঝিটকা, সাটুরিয়ায়। সাভারের ভাড়া ৫০ টাকা। মানিকগঞ্জ ১৫০ টাকা আর ঝিটকা ও সাটুরিয়া ২০০ টাকা। কোনো পিকআপ খালি যাচ্ছে না। যাত্রীদের কারো মুখে মাস্ক নেই। যেতে পারবেন কি না জিজ্ঞেস করতেই একজন বললেন, প্রতি বছর ঈদের সময়ও এমন পরিস্থিতি হয়। আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে কেন যেতে হবে জানতে চাইলে বলেন,  ঢাকায় কাজ আছে?  গ্রামে ধান কাটলে দিনে ৭০০ ট্যাকা পামু।

বকুল আগে রেন্ট-এ-কারে মাইক্রোবাস চালাতেন।  লকডাউনে সব বন্ধ।  সংসার চালানোর জন্য নিজে ঝুঁকি নিয়ে মাইক্রোবাস নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। গাড়ি চালান গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট। ১০ জন যাত্রী নিয়ে রওনা করেন।  প্রতিজন ৩০০ টাকা।  মানিকগঞ্জ পর্যন্ত ২০০ টাকা।  ফেরার সময় ২০০ টাকা করে যাত্রী নেন। গাড়ির সংখ্যা বেশি বলে যাত্রী পাওয়া দুষ্কর। তাই কম রেটই যাত্রী বঞন করতে হয়। রাউন্ড ট্রিপে আয় ৫ হাজার টাকা। জ্বালানি খরচ আর মালিককে দিয়ে ২ হাজার টাকাও থাকে না। তা ছাড়া প্রতিদিন গাড়িও পান না মালিকের কাছ থেকে।  এভাবেই টেনে-টুনে চালাতে হচ্ছে সংসারের চাকা।

রিফাত আগে উবারে ‘উবার মটো’ সার্ভিস চালাতেন। এখন ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। একজন যাত্রী নিয়ে যেতে চাইলে খরচ বেশি পড়ে। দুজন যাত্রী নিলে ৬০০ টাকা আয় হয়। আর একজন হলে যাত্রী ৪০০ টাকার বেশি দিতে চায় না।

উবার চালক জামাল জানান, তিনি ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে লকডাউন শুরুর পর থেকে নিয়মিত গাড়ি চালাচ্ছেন। চারজন যাত্রী নেন, প্রতিজন ৪০০ টাকা। সামনের আসনে নারী যাত্রী বসানোর কারণ জানতে চাইলে বলেন, নারী যাত্রী অনেক পাই। তবে একজন হলে সামনের সিটে বসাই। দূরে যান কি না জানতে চাইলে  বলেন, গাড়ি রিজার্ভ হলে যাই। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোর, নড়াইল পর্যন্ত তার সীমানা বলে জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads