• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
স্বপ্নের মেট্রোরেলের চাকা ঘুরল

ছবি: বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

স্বপ্নের মেট্রোরেলের চাকা ঘুরল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০২১

স্বপ্নের মেট্রোরেলের চাকা ঘুরল রাজধানীর বুকে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের সময় উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য (পারফরম্যান্স রান) ধীরগতিতে বৈদ্যুতিক এই ট্রেন চালানো হয়। এর আগে পর্যায়ক্রমে অনেক সতর্কতার সঙ্গে মেট্রোরেলের ডিপোর রেলওয়ে ট্র্যাকে বসানো হয় ছয়টি কোচ। মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল, ওয়াশিংসহ প্রতিটি কোচের ১৯ ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়। এর পরেই কোচগুলো লাইনে তোলা হয়।

এ কাজের জন্য ইতালি থেকে এক ধরনের যন্ত্র আনা হয়েছে বলে জানায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। পরে ধীরে ধীরে মেট্রোরেলের ডিপো থেকে বের করা হয় স্বপ্নের লাল সবুজের মেট্রোরেল কোচগুলো। এ সময় করতালির মাধ্যমে কোচগুলোকে অভিবাদন জানানো হয়। এ ধরনের আরো ১৮টি পরীক্ষা চালানো হবে। এরপর যাত্রীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে মেট্রোরেল। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১-এর ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল চলবে রাজধানীর বুকে।

মেট্রোরেলের এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ট্রেনটি আনলোডিং জোনে আনার পর বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোচগুলোর ভেতরে প্রবেশ করে ঘুরে দেখেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, এই মেট্রোরেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল। এটি গোটা জাতির জন্য, ঢাকাবাসীর জন্য সুসংবাদ। ২০২১ সালের মধ্যে ভায়াডাক্টের ওপরে মূল রেলপথে বৈদ্যুতিক ট্রেনের পারফরম্যান্স টেস্ট শুরু করা হবে। এরপর ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট করা হবে। এরপর ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হবে। বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ শতাংশের মতো। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৮৫ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশ এবং ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল সিস্টেম ও রোলিং স্টোন ও ডিপোর ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ। ডিপোর ভূমি উন্নয়ন কাজের নয় মাস পূর্বে আমরা শেষ করেছি। এতে সরকারের ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ডিপোর পূর্তকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। প্রকল্পের ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৪ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন সম্পন্ন হয়েছে। এমআরটি-৬ প্রকল্পের সকল ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে রেললাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপরে সাড়ে ১০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি ইউহো হায়াকাওয়া বলেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশ এবং জাপানের দ্বিপক্ষীয় সহযোগতার একটি নমুনা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ডিএমটিসিএল এবং জাইকা দুপক্ষই মহামারীর মধ্যেও আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এটি ঢাকা শহরের গণপরিবহনের চেহারা পাল্টে দেবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক এই ট্রেন চালু হলে এর সুফল ভোগ করবে এই রুটের বিপুল কর্মজীবী মানুষ। জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া এই পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ, জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। এই রেলের ছয় কোচের প্রতিটি সেট একসঙ্গে আগে

 

ভাড়া পরিশোধ সিস্টেমে এক হাজার ৭০০ যাত্রী পরিবহন করবে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশের স্বপ্নের উন্নয়নের মাইলফলকের এই প্রকল্পে অংশীদার হতে পেরে আমরা সত্যি গর্বিত। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে এই প্রকল্পটির অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। এজন্য তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সকল পক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ মিনিটের ভ্রমণ সময় মেট্রোরেল লাইন চালুর মাধ্যমে মাত্র ৩৬ মিনিটে নেমে আসবে। ২০২২ সালে জাপান বাংলাদেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তীতে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকা শহরে বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার টনের বেশি কার্বন নিঃসরণ কমাবে। যানজট কমিয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

উল্লেখ্য, জাপান থেকে গত ২৩ এপ্রিল উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছে এই ট্রেনসেট। বর্তমানে প্রথম মেট্রো ট্রেনসেটের ডিপোতে ফাংশনাল টেস্ট চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় তিন মাস পর অর্থাৎ চলতি বছরের আগস্ট মাসে ভায়াডাক্টের ওপরে মেইন লাইনে পারফরম্যান্স টেস্ট শুরু করা হবে। ভায়াডাক্টের ওপরে পারফরম্যান্স টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার পর করা হবে সমন্বিত পরীক্ষা। তারপর ট্রায়াল রান। জাপান থেকে মোট ২৪টি ট্রেন সেট আসবে। প্রতিটি মেট্রো ট্রেন সেট ১২০ মিটার লম্বা। দ্বিতীয় সেটও গত রোববার মোংলাবন্দরে এসে পৌঁছেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ সেট চলতি বছরের আগস্টে এবং পঞ্চম সেট সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে। অবশিষ্ট সেটগুলো পর্যায়ক্রমে পৌঁছাবে। ঢাকাবাসী মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবে সেই দিন বেশি দূরে নয়।

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর হয়ে আগারগাঁও, ফার্মগেট দিয়ে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কার্জন হল, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পুরানা পল্টন হয়ে মতিঝিলে যাবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। সব মিলিয়ে লাইনের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। ব্যস্ত সময়ে প্রতিটি ট্রেন ১ হাজার ৭০০ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে ছুটবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads