• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

যোগাযোগ

আজ দুপুর পর্যন্ত চলবে বাস-লঞ্চ

ঢাকায় ছুটে আসছে লাখো শ্রমিক

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০২১

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আজ রোববার থেকে আবারো চালু হয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা। গত শুক্রবার শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার খবর প্রকাশের পর কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে ঢাকা ফিরতে শুরু করেছে লাখো শ্রমিক। তাই গতকাল শনিবার সকাল থেকে ঢাকার সবগুলো প্রবেশ পথে দেখা গেছে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। যে যেভাবে পারছে, ছুটে আসছে ঢাকায়।

লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পথে পথে এসব শ্রমিককে নানা দুর্ভোগে পোহাতে হয়েছে। যেভাবে পেরেছেন রিকশা, ভ্যান, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যের উদ্দেশে ছোটেন। চাকরি বাঁচাতে হবে, তাই পায়ে হেঁটেও অনেকে রাজধানীতে ঢুকে পড়েন। তবে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধাদের। সবমিলিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুণে আর বিড়ম্বনা মাথায় নিয়ে বিকল্প বাহনসহ বিভিন্ন উপয়ে ঢাকায় ফিরছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পকারখানায় কাজে যোগ দিতে শ্রমিকদের পরিবহনের জন্য আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহন ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব জেলায় এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। অপরদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলের অনুমতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।

এদিকে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর সংযোগ পথের প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ফেরি পারাপারের সময় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব ছিল উপেক্ষিত। গতকাল সকাল থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে অন্যদিনের তুলনায় যাত্রীদের অত্যধিক চাপ দেখা যায়। জরুরি পরিবহন পারাপারের জন্য ব্যবহূত ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পার হয়েছেন তারা। গতকাল বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ১০টি এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট বড় ৮টি ফেরি চলাচল করছে।

পাশাপাশি ঢাকামুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে সড়ক-মহাসড়কেও। ঢকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের ঢল লক্ষ করা গেছে। নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার সড়ক মহাসড়কেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাতের বেলায় ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, সিএনজি ও ভ্যানগাড়িতে কর্মস্থলে ফেরা  এসব যাত্রীরা চলাচল করছেন। এ সুযোগে শ্রমিকদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেছেন বিকল্প যানের মালিক-চালকরা।

পোশাক শ্রমিকরা জানান, পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ১ আগস্ট উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি আর লকডাউন উপেক্ষা করেই তাদের রাজধানীমুখী হতে হয়।

জামালপুর জেলার চিকাজানী গ্রামের নজরুল ইসলাম স্ত্রীসহ রাজধানীর একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি জানান, শুক্রবার রাতে সহকর্মীরা অনেকে ফোন দিয়ে রোববার কারখানা খোলার খবর দিয়েছে। সময় মতো কারখানায় উপস্থিত না থাকলে চাকরি হারানোর সম্ভবান রয়েছে। তাই শনিবার ভোর ৪টার দিকে বাড়ি থেকে ঢাকা উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। তবে পথে পথে পুলিশের গাড়ি আটকিয়ে দেওয়া, কোনো গণপরিবহন না পাওয়াসহ নানা বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। অবশেষে পণ্যবাহী ট্রাকযোগে সকাল ১১টার দিকে রাজধানীতে এসেছেন তিনি।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা গ্রামের সাদেক হোসেন জানান, তিনি শনিবার ভোর ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো হালকা যানবাহন আবার কখনো পণ্যবাহী যানবাহনে বেলা পৌনে ১১টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত পৌঁছান।

তিনি বলেন, কারখানা খোলা অথচ গাড়ি চলে না, এ কেমন পরিবেশ। যতো দুর্ভোগ সব আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের। কারখানায় কাজে যোগ না দিলে চাকরি চলে যাওয়ার ভয় আছে। সপরিবারে এ পর্যন্ত আসতে আমার আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

পোশাক শ্রমিক নেতারা বলছেন, অনেক কারখানা ১ আগস্ট কাজে যোগ দিতে ঢাকার বাইরে থাকা শ্রমিকদের টেলিফোন করেছেন তাই তাড়াহুড়ো করে শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরছেন। পরিবহন চালু না করে হুট করে কারখানা খোলার ঘোষণায় শ্রমিকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. ইউসুফ বলেন, অর্থনীতির স্বার্থে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে ঝুঁকি এড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অনেক দেশ বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে এসেছেন। তাদের অর্থনীতির গতি ফিরে এসেছে। আমরা তো তার বাইরে নয়। আমাদেরকেও সেরকম পরিকল্পনা নিতে হবে।

এদিকে রোববার থেকে কাজে যোগ না দিলেও শ্রমিকদের চাকরি যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আশ্বস্ত করে জানান, বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ৫ আগস্টের আগে কাজে যোগ দিতে না পারলেও কারো চাকরি যাবে।

এর আগে গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা পহেলা আগস্ট থেকে খোলা থাকবে বলে জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত শুক্রবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পহেলা আগস্ট সকাল ৬টা থেকে রফতানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখা হলো।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্রামে অবস্থান করা শ্রমিকদের চাকরি হারানোর শঙ্কা নেই। শিল্প এলাকায় উপস্থিত শ্রমিকদের দিয়েই কাল-কারখানা চালু করবেন মালিকরা।

তিনি জানান, একটা লাইনে যদি আমার ৩০টা মেশিন থাকে, ৩০ জন ওয়ার্কার আমার লাগে। এই ৩০ জনের মধ্যে যদি একজনও অনুপস্থিত থাকে তাহলে কাজের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায়। এরকম হলে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব না।  ফলে এই জায়গাটা একটু কঠিন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আমরা যাদেরকে পাব তাদেরকে নিয়ে একটা সমন্বয় করার চেষ্টা করব। কিন্তু তারপরও এটা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে। তারপরেও বর্তমানে গ্রামে অবস্থান করা কর্মীদের চাকরি হারানোর শঙ্কা নাই। তারা লকডাউন পরবর্তীতে এসে কাজে যোগদান করতে পারবে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads