• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

যোগাযোগ

চলবে না লক্কড়ঝক্কড় বাস

রুট র্যাশনালাইজেশনের রূপরেখা তৈরি

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৯ অক্টোবর ২০২১

রাজধানীর অসহনীয় যানজট আর বিশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থাকে ভেঙে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৈরি করা হয়েছে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের রূপরেখা। নতুন রূপরেখায় ৭ হাজার ৩৩৫টি বাস দিয়ে গণপরিবহন নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন করা হবে। তুলে নেওয়া হবে লক্কড়ঝক্কড় বাসগুলো। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে লক্কড়ঝক্কড় বাসগুলোর কি হবে, যার অধিকাংশের মালিকই স্বল্প পুঁজির। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই বাস মালিক কিংবা নেতাদের।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকার গণপরিবহনের মালিকের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। চলাচল করা বাসের সংখ্যা ৯ হাজার ২৭টি। আর ঢাকা ও আশপাশে ২০০ এর বেশি পথে (রুট) বাসগুলো চলাচল করে। যাত্রী তোলার জন্য এক বাসের চালক অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লায় লিপ্ত  হন এসব বাসের চালকরা। এর ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এই ব্যবস্থা পরিবর্তনে ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস তুলে নেওয়া। সহজ শর্তের ঋণে নতুন বাস নামানো।

সরকারের নেয়া এই সিদ্ধান্তে সবাই খুশি হলেও স্বল্প পুঁজির বাস মালিকরা আতঙ্কিত। তাদের মতে, পুরনো বাসই অনেকে কিনেছে ঋণ করে। এখন সরকার যদি সেইসব বাসগুলো একেবারেই বাদ দিয়ে দিয়ে ঋণ নিয়ে নতুন বাস কিনতে বলে তাহলে অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব না। তাই এসব বাস বাদ না দিয়ে বিকল্প কোনো রুটে চলাচলের অনুমতি দিলে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন অনেক ক্ষুদ্র পরিবহন ব্যবসায়ী।

জুরাইন থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বাহাদুরশাহ পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, রাজধানীর পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন একটি ভালো পদক্ষেপ। ভালো সেবা দিতে হলে ভালো বাসের প্রয়োজন আছে এটা যেমন সত্য, তেমনি বিদ্যমান বাসগুলোর বিষয়েও সরকার সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এমনিতেই অধিকাংশ বাস মালিকই ঋণ করে বাস নামিয়েছেন। অনেকেরই একটি মাত্র বাস আছে। সেটিই তাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। এসব বাসগুলো রাজধানী থেকে একেবারে উঠিয়ে নিলে বা একেবারেই চলাচল করতে না দিলে হাজার হাজার বাস মালিক পথে বসে যাবে। তাই বিকল্প উপায় বের করা উচিত। যাকে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থারও উন্নতি হয় এবং স্বল্প পুঁজির পরিবহন মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এক্ষেত্রে টু-স্ট্রোক বেবিট্যাক্সির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এসব পুরোনো বাসগুলোকে রাজধানীর বাইরে চলাচলের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, আমরা জানি না এসব (লক্কড়ঝক্কড়) বাসগুলোর কি হবে। হয়তো নতুন কোনো রুটে সেগুলোকে সংযুক্ত করে দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানায়নি। আমরা শুধু এতটুকু জানি আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন শুরু হচ্ছে এবং সেখানে ২০১৯ সালের আগের কোনো বাস থাকতে পারবে না।

এ প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বল্লেও বাস রুট রেশনালাইজেশনের ১৫তম সভা শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, মালিকদের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ করেছি। এর  পরিপ্রেক্ষিতে একটি চিঠি দেব যাতে করে প্রাথমিকভাবে এক শ কোটি টাকা বরাদ্দ নির্ধারণ করা যায়। যাতে করে যে বাসগুলো এই রুটে চলবে এর আধুনিকায়ন করার জন্য যে খরচ হবে, যে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে, সে বিনিয়োগ যেন তারা সেখান থেকে করতে পারে। স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদে মালিকেরা যাতে এই ঋণ পান, সে ব্যাপারটিও চিঠিতে থাকবে। সামগ্রিকভাবে এ বিষয়টা শেষ করতে পারলেই ঢাকাবাসীকে সুফল দিতে পারব।

এদিকে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার তিন বছর পর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যমান ৩৮৬টি রুট ভেঙে করা হবে ৪২টি রুট। ৯টি রঙের বাস পরিচালনা করবে ২২টি বেসরকারি কোম্পানি। বর্তমানে রাজধানীর ৩৮৬টি রুটে চলাচল করা বাসের সংখ্যা ৯ হাজার ২৭টি, এর বিপরীতে কোম্পানিভিত্তিক বাসের সংখ্যা হবে ৭ হাজার ৩৩৫টি, রুট হবে ৪২টি। নির্ধারিত রুটের বাইরে বিআরটিসি বাদে প্রবেশাধিকার থাকবে না অন্য কোনো বাসের। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক চলাচলে তৈরি হয়েছে সবুজ রঙের বাসের নকশার খসড়া।

রূপরেখা অনুযায়ী মেরুন রঙ্গের দুটি কোম্পানি হেমায়েতপুর-সদরঘাটের রুটে বাস পরিচালনা করবে। পিংক ১, ২  ও ৩ নামে হবে তিনটি কোম্পানি, আব্দুল্লাহপুর-ঝিলমিলের চারটি রুটে চলবে এসব বাস। সবুজ হবে চারটি কোম্পানি, চলবে ঘাটারচর-আব্দুল্লাহপুরের আটটি রুটে। বেগুনি রঙের তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে চলবে কাঁচপুর-আব্দুল্লাহপুরের ছয়টি রুটে। আর অরেঞ্জ ১, ২ ও ৩ নামে তিনটি কোম্পানি চলাচল করবে মিরপুর-নারায়ণঞ্জ রুটে।  নর্থ নামে থাকবে দুটি কোম্পানি চলবে কালিয়াকৈর-আব্দুল্লাহপুরে। অন্যদিকে নর্থওয়েস্ট পরিচালনা করবে চন্দ্রা-হেমায়েতপুরের তিনটি রুটে। সাউথ নামে আরেকটি কোম্পানি চলবে মুন্সীগঞ্জ-ঝিলমিলের দুটি রুটে।

বাস রুট র্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, ৯টি ক্লাস্টারের মধ্যে ৩টি চলবে শহরতলীতে আর ৬টি চলবে ঢাকার মধ্যেই। এই ৬টার জন্য ৬ রুট। টার্গেট ছিল ৫০০ বাসের বেশি একটা কোম্পানিতে থাকবে না। এর চেয়ে বেশি হয়ে গেলে বাসের অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং ২২টি কোম্পানির প্রত্যেকেরই ৫০০ নিচে বাস থাকবে। ৫০ আসনবিশিষ্ট ৪ হাজার ৫২৩টি বড় বাস। তার মধ্যে এক হাজার ১৫৮টি থাকবে এসি বাস। বাকি বাসগুলো হবে ৩৬ থেকে ৪০ আসনবিশিষ্ট।

আগামী ১ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ-ঘাটারচর-কাঁচপুরে পরীক্ষমূলকভাবে চালু হবে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন। সেই লক্ষ্য প্রস্তুত সবুজ রঙের বাসের ডিজাইন। এই প্রকল্পে যুক্ত হতে পারবে না ২০১৯ সালের আগের কোনো বাস। তৈরি হবে নতুন বাস বে, যাত্রীছাউনি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের শুরুতে ছয়টি কোম্পানির অধীনে ছয় রঙের বাস নামানোর উদ্যোগ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। দেড় বছরের মধ্যে নতুন ৩ হাজার বাস নামানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তবে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হকের মৃত্যুও পর থেমে যায় উদ্যোগ। পরে মুখ থুবড়ে পড়া সেই উদ্যোগই নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads