• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা

  • গাজী শরীফ মাহমুদ
  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০২১

বাড়তি কাজের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় বেশি কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রেনের চালকরা। এ কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, একজন চালককে দিনে গড়ে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা ট্রেন চালাতে হয়। এজন্য তাদের বাড়তি মজুরি দেওয়া হয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত সময়ে প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে দেওয়া হয় মূল বেতনের একদিনের সমপরিমাণ টাকা। পেনশনের সঙ্গে দেওয়া হয় বাড়তি ৭৫ শতাংশ টাকা। এটা রেলে ‘মাইলেজ ভাতা’ হিসেবে পরিচিত। এসব চালক ও গার্ডদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো রেলওয়ের স্বতন্ত্র কাঠামোয়। সম্প্রতি রেলের অতিরিক্ত এ সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে ক্ষুব্ধ রেল চালকরা ২৬ ডিসেম্বর থেকে আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩ ডিসেম্বর সফটওয়্যার ‘আইবাস প্লাস প্লাস’র মাধ্যমে রেলের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের (রানিং স্টাফ) আগের সেই ‘মাইলেজ’ সুবিধা থাকছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত জানার পর মাইলেজ সুবিধা চালুর দাবিতে নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা করছেন চালক, গার্ড (ট্রেন পরিচালক) ও টিকিট চেকারেরা। তারা রেলমন্ত্রী, রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক সভাও করেছেন। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে পরদিন থেকে কর্মঘণ্টার বাইরে কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। রেলওয়ের স্বতন্ত্র কাঠামোতে বেতনের দাবিতে গত সোমবার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) ও পশ্চিমাঞ্চলে (রাজশাহী) বিক্ষোভ করেছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট চেকারেরা।  অবশ্য গত রোববার এক চিঠিতে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন রেলওয়ের উপ-সচিব সালমা পারভীনও।

এ নিয়ে আজ বুধবার রেলভবনে রানিং কর্মচারী স্টাফ প্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স বিষয়ে আলোচনায় বসবেন রেলওয়ের যুগ্ম-মহাপরিচালক (মেকানিক) মৃণাল কান্তি বণিক। এই আলোচনায় সমাধান আসবে বলে মনে করেন রেলওয়ের ওই কর্মীরা।

জানতে চাইলে রেলওয়ের রানিং স্টাফ (চালক-গার্ড) ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ১৬২ বছর ধরে ওই নিয়মনীতি অনুযায়ী বেতন-ভাতা নিচ্ছেন রেলওয়ের কর্মীরা। আগে প্রতি মাসে যেখানে রানিং স্টাফরা ১১ হাজার মাইল পেতেন। সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ সিস্টেমে মাইলেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তিন হাজার মাইলের বেশি দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিন হাজার মাইলের বেশি ট্রেন চালালেও তারা বেশি মাইলের জন্য কোনো ভাতা পাবেন না। এ প্রজ্ঞাপন রেলওয়ে আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি রেলওয়ের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিতে হবে। অন্যথায় ২৬ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার আন্দোলন চলবে। এতে ট্রেন চলাচল সমস্যা হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।

রেলওয়ে আইনের ১৬৮৫/১০৮৫ বিধি অনুযায়ী, ট্রেন চালক, গার্ড ও ট্রেন টিকিট পরীক্ষকরা (টিটিই) রানিং স্টাফ। তারা নির্ধারিত ডিউটির পাশাপাশি কর্মরত অবস্থায় যত দূরত্ব পর্যন্ত ট্রেন চালাবেন, সে হিসাবে মাইল গুণে বাড়তি ভাতা পাবেন। রেলওয়ে আইনে সাপ্তাহিক বা সরকারি বন্ধের দিনে ডিউটি করলে হলিডে মাইলেজ প্রাপ্তির বিধানও রয়েছে তাদের। ১৬২ বছর আগে থেকে এ বিধান চলে আসছে। এছাড়া ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর এক অনুশাসনে তাদের মাইলেজ (রেলের আইন অনুযায়ী) পাওয়ার কথা বলা রয়েছে।

এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় গার্ড কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ট্রেন চালানোর পরও ঈদ-পূজার ছুটির সময় রানিং স্টাফদের ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। সেই বিবেচনায় ব্রিটিশ আমল থেকেই রানিং স্টাফরা মাইলেজ ভাতা পান। কারণ, রেলওয়ে রানিং স্টাফদের কোনো ছুটি নেই। চাইলেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন না তারা। একটু বেশি বেতনের আশায় সবাই নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালনের চেষ্টা করেন। এ প্রথা রেলওয়ের দেড়শ বছরের পুরনো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads