• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

খুলনা-দর্শনা পর্যন্ত ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু

মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০২২

যাত্রীসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের সারা দেশে প্রতিটি জেলায় রেল সম্প্রারণ হচ্ছে। মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত হলে দুই অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নতি হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য জ্বালানি তেল পরিবহন এবং দ্রুত ও নিরাপদ রেলসেবা নিশ্চিতকরণ করা যাবে। এছাড়াও রেলের উন্নয়নে অনেক প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সব লাইনই ডাবল। খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত ডাবল রেললাইন নির্মাণে রেলপথ মন্ত্রণালয় আন্তরিক। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকার সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ আরো সহজ হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গতকাল রোববার থেকে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর এবং খুলনা-দর্শনা সেকশনে নতুন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।

গত ২৫ আগস্ট রেল ভবনে কনসালটেন্সি সার্ভিসের জন্য একটি চুক্তিসই হয়েছে। এই চুক্তির পরের দিন থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ১১ মাসের মধ্যে কনসালটেন্সি সার্ভিসের নকশা বা ডিজাইন তৈরির কাজ শেষ রেল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিবেন। এর পর ৪ বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি পাবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

খুলনা-দর্শনা সেকশনে কনসালটেন্সি সার্ভিসের কাজ করছেন ভারতীয় স্টুপ কনসালটেন্ট ও আরভি এসোসিয়েটস জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা দর্শনের মধ্যে পুরনো লাইনের পাশাপাশি নতুন ১২৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মিত হবে। কনসালটেন্সি সার্ভিসের চুক্তিমূল্য ধার্য করা হয়েছে ৮৭ কোটি ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।

অন্য একটি প্রকল্প পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পেরও একটি চুক্তিসই হয়েছে। এ প্রকল্পের কনসালটেন্সি সার্ভিস এর চুক্তিমূল্য ৭৫ কোটি ৮৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৯০ টাকা। এই প্রকল্পে ৫৭ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। উভয় প্রকল্পই ভারতীয় এলওসি এর অর্থায়নে হবে।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন তার বলেছেন, দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ২০১১ সালে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করেন। দেশের প্রতিটি জেলায় রেল সমপ্রসারণ করা হচ্ছে। রেলের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ চলমান আছে বলে মন্ত্রী জানান।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের রেলব্যবস্থা ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ দ্বারা দুই অঞ্চলে বিভক্ত। আমরা পর্যায়ক্রমে সকল রেলব্যবস্থাকে ব্রডগেজে রূপান্তর করছি। ভারতের সকল রেললাইন ব্রডগেজে। আমরাও দেশের গেজব্যবস্থাকে একরকম ব্রডগেজে রূপান্তর করছি। এছাড়া রেললাইন সমপ্রসারণের ক্ষেত্রে যে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে সবগুলোকেই আমরা ব্রডগেজ আকারে করছি।

মন্ত্রী আরো বলেন, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। এছাড়া ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনের প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। মন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে যে ৮টি ইন্টার সেকশন বন্ধ হয়েছিল ইতোমধ্যে ৫টি চালু হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হবে।

ভারতীয় অর্থায়নে এ প্রকল্প দুটি নির্মিত হবে বলে মন্ত্রী জানান। ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ সম্পর্ক উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেকশন দুটি নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরে রেলপথমন্ত্রী বলেন, পার্বতীপুর কাউনিয়া ডুয়েলগেজ নির্মিত হলে ভবিষ্যতে আমরা ভারত ছাড়াও নেপাল, ভুটানের সাথে কানেক্টিভ বাড়াতে সক্ষম হব এবং এর ফলে আমাদের যাত্রীসহ মালামাল পরিবহনের সুযোগ বাড়বে।

ভারতের দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অধীনে খুলনা-দর্শনা পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ওই বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৫০৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারত ঋণ সহায়তা দিবে ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বাকি ৮১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ৪ বছর।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৪১৩ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে মাত্র ১১০ কিলোমিটার ডাবল লাইন রয়েছে। বাকি ৩০৩ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন। এই ৩০৩ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার এবং ঈশ্বরদী থেকে টঙ্গী ১৭৭ কিলোমিটার।

এর মধ্যে খুলনা-দর্শনা পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে সিঙ্গেল লাইনের কারণে অন্য প্রান্ত থেকে আসা ট্রেন ক্রসিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্টেশনের অতিরিক্ত কয়েকটি অনির্ধারিত স্থানে ট্রেনের যাত্রাবিরতি করতে হয়। এতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। বর্তমানে ট্রেনে খুলনা থেকে ঢাকা যেতে প্রায় ১১ ঘণ্টা সময় লাগে। ডাবল লাইন হলে সময় দুই-তিন ঘণ্টা কম লাগবে।

লাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা আরো উন্নত হবে। স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক যাত্রীবাহী এবং মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করা যাবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য হরিয়ান, ভেড়ামাড়া, সান্তাহার, বঙ্গবন্ধু ব্রিজ ওয়েস্ট, আমনুরা, ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে তেলভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ রেললাইনটি নির্মাণ হলে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে এবং সেচসহ অন্য ক্ষেত্রে দ্রুত ও সহজে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads