• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
দুই লাখ না দিলে ইয়াবা ও ফেনসিডিল দিয়ে চালান দেব

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

দুই লাখ না দিলে ইয়াবা ও ফেনসিডিল দিয়ে চালান দেব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ মে ২০২১

মুদি দোকানি আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সানারপাড় এলাকায় বসবাস করে আসছেন। এই এলাকাতেই তার ছোট্ট মুদি দোকান। পাশাপাশি একটি গরুর ফার্মও করেছেন তিনি কিছু দিন আগে। গত ১৬ এপ্রিল জুম্মার নামাজ আদায় করে নিজের মুদি দোকানে বেচাকেনা করছিলেন তিনি। এ সময় হঠাৎ রাজধানীর ডেমরা থানা পুলিশের এসআই সেলিম রেজা ও এএসআই আবু বক্করসহ আরো কয়েকজন সদস্য এসে হাজির। আমার পরিচিত ছোট ভাই রুবেলকে নিয়ে আসে তারা। ওই পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে থাকা একজন সোর্স কিছু বুঝে ওঠার আগে আমার দোকানের দোতলায় উঠে গিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘স্যার পাইছি পাইছি’। কিন্তু তারা কি পেয়েছে সেটা আমাদের জানায়নি। এমনকি পুলিশ আসার খবরে আমার দোকানের জড়ো হওয়া লোকজনও সেটা জানতে পারেনি। কি পেয়েছে সেটা তাদের দেখায়ওনি।

পরে তারা আমাকে বলেন, ওসি স্যার থানায় যেতে বলেছে। আমি যেতে অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে তারা আমাকে যেতে বাধ্য করে। আমাকে থানায় নেওয়ার পর আমার কাছে থাকা ১৩ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে আমাকে থানা হাজতে রাখা হয়। ইফতারের আগে আমাকে হাজত থেকে বের করে ২ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই সেলিম রেজা ও এএসআই আবু বক্কর। টাকা না দিলে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেন্সিডিল দিয়ে কোর্টে চালান দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। আর টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়।

আলমগীর হোসেন বলেন, পুলিশের হুমকির পর আমি খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। এ অবস্থায় আমি বাড়িতে খবর দিয়ে আমার পরিবারের লোকজনকে ডাকি। তারা দরকষাকষি করে দাবি করা টাকা ৯০ হাজারে নিয়ে আসে। আমার পরিবারের লোকজন সেই টাকা এএসআই আবু বক্করের কাছে দেয়। টাকা নেওয়ার পর আবু বক্কর বলে সকালে ছেড়ে দেব। কিন্তু সকালে এসআই সেলিম আধাকেজি গাঁজার মামলা দিয়ে আমাকে কোর্টে চালান করে। আমি এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে হুমকি দিয়ে বলে  যদি এ বিষয়ে মুখ খুলি তাহলে আমার বিরুদ্ধে আরো বড় মামলা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ ধরে এই এলাকায় সুনামের সঙ্গে চলাফেরা ও ব্যবসা করে আসছি। আমার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় কোনো মামলা দূরের কথা, একটি জিডিও নেই। ঘটনার দিন সোর্স সুজা কাউকে কিছু না বলে দুই তলায় উঠে যায়। তার সাথেও কেউ যায়নি। সেখানে গিয়ে সে চিৎকার করে বলতে থাকে স্যার পাইছি পাইছি। কিন্তু সেখানে কিছুই ছিল না। পরে পুলিশ সদস্যরা আমাকে থানা নিয়ে যেতে চায়। আমি প্রথমে যেতে রাজি হয়নি। তারা বলে ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করে চলে আসবেন এই আশ্বাসে নিয়ে যায়। পরে থানায় নিয়ে উল্টো আচরণ শুরু করে।

তিনি বলেন, আমার ওপর সম্পূর্ণ অন্যায় করেছেন তারা। আমার কাছে তারা কিছুই পায়নি। কেউ আমাকে এ ধরনের অপবাদও দিতে পারবে না যে আমি মাদকের সাথে জড়িত। তারা হুমকি দিয়ে আমার টাকাও নিল, আবার চরিত্রেও কালো দাগ দিল। আমি এদের শাস্তি চাই। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই সেলিম রেজা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আলমগীরের অভিযোগ মিথ্যা। আমরা গাঁজাসহ তাকে আটক করি।  তার কাছ থেকে কোনো টাকাপয়সাও নেওয়া হয়নি।

একই কথা বলেন এএসআই আবু বকর। তিনি বলেন, আলমগীর আমাকে কোনো টাকা দেয়নি। সে মিথ্যা কথা বলছে।

সুজা নিজেকে পুলিশের সোর্স দাবি করে বলেন, আমরা সানারপাড়ে একজন ফেন্সিডিল বিক্রি করছে এমন খবরে সেখানে যাই। পরে সেখানে গিয়ে তাকে না পেয়ে চলে আসার সময় রুবেলকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাকে নিয়ে আলমগীরের দোকানে যাই। সেখানে গাঁজা পাওয়া যায়। পরে তাকে গাঁজার মামলা দেওয়া হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সুজা জানায়, আলমগীর এর আগে ব্যবসা করত কি না তা সে জানে না।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, পুলিশের সোর্স হিসেবে সুজা এলাকায় ব্যাপক দাপট দেখায়। বিভিন্ন নিরীহ লোকজনকে মাদক মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে। তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। পুলিশের সোর্স হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। 

তবে ডেমরা থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আলমগীরের ভাই আমার থানার একজন সাব ইন্সপেক্টর। তার ছত্রছায়ায় সে এলাকায় মাদক ব্যবসা করে। তাকে গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে তার ভাই তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তদবির করে। তার তদবির না শোনায় সে এই অভিযোগ করেছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads