• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

এবার গাঁজার কেকে তোলপাড়

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০২১

নতুন মাদক এলএসডির পর এবার গাঁজার কেক বা ব্রাউনি উদ্ধার নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ মাদকের ক্রেতা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নিত্যনতুন মাদকে শিক্ষার্থীদের আসক্ত হওয়ার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। মেধাবী শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন মাদকে আসক্ত হয়ে একদিকে যেমন নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে তেমনি পুরো সমাজব্যবস্থায় ফেলছে প্রভাব।

কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের তৎপরতার কারণে মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। এর বিস্তাররোধে আরো কঠোর ভূমিকা শুরু হচ্ছে।   

জানা যায়, গাঁজার নির্যাস থেকে নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে মাদক বানানো; অনলাইনে সেই মাদকের বিকিকিনি এবং সেটি মাদকসেবীদের কাছে ইতোমধ্যে পরিচিতি পাওয়ার চাঞ্চল্যকর ও উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

ব্যাপক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সম্প্র্রতি এমন একটি মাদকের চালান উদ্ধার করেছে। মাদকসেবীদের কাছে এর নাম গাঁজার কেক বা ব্রাউনি। এ চালান উদ্ধারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। ব্রাউনি বিকিকিনির মাধ্যম হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিল ইনস্টাগ্রাম। এই অ্যাপে একটি পেজ তৈরি করে চলছিল এ চক্রের হরদম গাঁজার কেক বিক্রি। ডিবি বলছে, দেশে গাঁজার কেকের চালান এবারই প্রথম ধরা পড়েছে। গত বুধবার রাজধানীর মোহাম্মাদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেড় কেজি ওজনের ৪০টি গাঁজার কেক জব্দ করে ডিবির রমনা জোনাল টিম। অভিযানকালে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (এআইইউবি) ছাত্র কাফিল ওয়ারা রাফিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং পড়ুয়া কাজী রিসালাত হোসেন এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সংশ্লিষ্ট টিম। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করা হয়েছে।

ডিবি জানায়, গাঁজার পাতা থেকে তরল নির্যাস বের করে তৈরি হয় এ কেক এবং আর দশটি কেকের মতোই খাওয়া যায় এ কেক। এ কেক যারা খায় তারা বলছে, সিগারেটের খোসায় গাঁজা ভরে সেবনের চাইতে গাঁজার পাতার নির্যাসে তৈরি কেকে কয়েকগুণ বেশি আসক্তি হয় এবং খাওয়ার পর এর প্রতিক্রিয়া শুধু ভয়ংকরই নয়, মারাত্মক ক্ষতিকরও বটে। সম্প্র্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের বিস্ময়করভাবে আত্মহননের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ভয়ংকর মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইডের বা এলএসডির সন্ধান পায় ডিবি পুলিশ। পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী এলএসডির ভয়াল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় স্মৃতিকাতর ও কল্পনাপ্রবণ হয়ে পড়েন হাফিজুর এবং নিজের গলা ধারালো দা দিয়ে কেটে ফেলেন। এর ফলে ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। এর পরই এলএসডি মাদকটি নিয়ে বিরাট এক প্রশ্ন দাঁড়ায় তদন্তকারীদের সামনে। হাফিজুর রহমানের আত্মহননকাণ্ডের জেরে তার বন্ধু নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ছাত্র সাদমান সাকিব ওরফে রূপল (২৫), আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তুর্জ এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আদিব আশরাফকে (২৩) গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ২০০ ব্লট এলএসডি, মাদকের নিষিদ্ধ বাজারে যার মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা। তবে এলএসডি সেবনের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০১৯ সালে এলএসডিসহ দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সর্বশেষ, এই এলএসডির সন্ধানে অভিযানে নেমে বেরিয়ে আসে নতুন তথ্য, প্রথমবারের মতো গাঁজার কেকের বিষয়ে জানতে পারে ডিবি পুলিশ। ফেসবুকের একটি ক্লোজড গ্রুপের মাধ্যমে এলএসডি বিক্রি করা হতো। ওই গ্রুপ থেকেই প্রথম গাঁজার কেকের বিষয়ে জানতে পারে গ্রেপ্তার তিন তরুণ। পরে তারা ইউটিউবে একটি টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখে সেভাবে গাঁজার কেক তৈরি করেন। গ্রেপ্তার কাফিল ও রিসালাত গাঁজার কেক বিক্রির জন্য গড়ে উঠা চক্রের অন্যতম হোতা আর সাইফ ছিলেন তাদের ডেলিভারিম্যান-জানিয়েছে ডিবি। মাদকসেবীরা অনলাইনে অর্ডার দিত, মাদককারবারিরা তাদের দিত হোম সার্ভিস। এক বছর ধরে গ্রুপটি গাঁজার কেক বিক্রি করে আসছিল। ইনস্টাগ্রামে তাদের পেজের নাম ছিল ‘ব্রাউনিগাইসবিডি’।

গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস বলেন, প্রাথমকি জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

উচ্চবিত্তের সন্তানরা জড়িত : প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তারা তিনজনই মাদকাসক্ত। অন্য মাদকের পাশাপাশি তারা নিয়মিত গাঁজা সেবন করে আসছে। বছর দেড়েক আগে ইউটিউবে দেখে তারা গাঁজার কেক বানানো শিখেছে। প্রথমে নিজেরা খেলেও পরে বন্ধুদের মধ্যেও এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ব্যবসাটা শুরু করে তখনই।

রাফিদ ও রিসালাত জানিয়েছে, প্রতি পিস গাঁজার কেক তারা ৪ থেকে ৫ শ’ টাকায় বিক্রি করতো। প্রথম দিকে কাছের বন্ধুদের কাছে বিক্রি করলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ক্লোজ গ্রুপ তৈরি করে সেখানে বিক্রি করা শুরু করে। অর্ডার দিলে কখনো নিজে বা কখনো ডেলিভারিম্যানদের মাধ্যমে এসব মাদক পাঠানো হতো।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, উচ্চবিত্ত পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারাই ইন্টারনেট ঘেঁটে মাদকের অভিনব সব ব্যবহার করছে। এর আগে এলএসডিসহ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারাও উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থী।

এলএসডিসহ গ্রেপ্তারকৃতদের একজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গাঁজার কেক বিক্রি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।

জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত দুই গাঁজার কেক ব্যবসায়ীর মধ্যে রাফিদের বাবা ইদ্রিস আলী সিঙ্গাপুরে ব্যবসা করেন। মোহাম্মদপুরে তাদের নিজেদের বাড়ি রয়েছে। রিসালাতের বাবার নাম কাজী রওনাক হোসেন। তার দাদা প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক কাজী মোতাহার হোসেন। ইউডার চারুকলার শিক্ষার্থী সাইফ খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বাস করে। রাফিদ পড়াশোনার পাশাপাশি ম্যারাথন দৌড়েও অংশ নিয়েছিল। এমনকি সাইফের মতো সে নিয়মিত সাইক্লিংও করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads