• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
মামলার জট খুলতে গতি এনেছে ফরেনসিক ল্যাব

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

মামলার জট খুলতে গতি এনেছে ফরেনসিক ল্যাব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ জুন ২০২১

মামলার জট খুলতে গতি এনেছে সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব। অনেক সময় ক্লুলেস মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে এ ল্যাব। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর ডা. সাবেরা হত্যার রহস্য খুলতে পারে এমন আশাবাদ করেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে সেই ক্লু সরাসরি ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় না। অপেক্ষা করতে হয় ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য। তা থেকেই বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের সময়, উদ্দেশ্য কিংবা সম্ভাব্য হত্যাকারীর পরিচয়। আর এ কাজে গতি এনেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে প্রথমে পর্যবেক্ষণ করে আলামত সংগ্রহ করা হয়। ভিকটিমের কাছ থেকে তার ব্যবহূত ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল-ল্যাপটপ এসব উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি সহকর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদে আশানুরূপ তথ্য পাওয়া যায় না। তবে, ভিকটিমের ব্যবহূত মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা হত্যাকাণ্ডের স্থানে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট সংগ্রহ করে ফরেনসিক করালে অনেক ক্ষেত্রেই মামলার জট খুলে যায়। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা বলেন, অপরাধী শনাক্তে ডিজিটাল ফরেনসিক বড় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া এ রিপোর্ট আদালত গ্রহণও করছেন। এতে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল সেটাও জানতে পারছেন আদালত। এতে বিচার সম্পাদনেও সময় কম লাগছে। সম্প্রতি কলাবাগানের গ্রীন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার সাবিরা রহমানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো বিশেষ কোনো ক্লু পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরইমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ এবং থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ভিকটিমের পরিবারের সদস্য ও  সহকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক মোহাম্মদ শরিফুজ্জামান বলেন, অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখনো চলছে। ভিকটিমের ব্যবহূত মোবাইল, ল্যাপটপ ও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমরা ডিজিটাল ফরেনসিকে পাঠিয়েছি। সেই রিপোর্ট হাতে পেলে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে জানতে পারবো।

সম্প্রতি গাজীপুরের গাছা থানার একটি মামলার রহস্য উন্মোচনে ডিজিটাল ফরেনসিক কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এলাকায় অপহরণ করে হত্যা করা হতো এমন অভিযোগে মামলা হয়। প্রথম দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও এগোতে পারেনি তদন্ত দল। তবে ঘটনাস্থলে অপরাধীদের ইলেকট্রনিক ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে তাদের

মামলার জট খুলতে গতি

 

 

গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

প্রযুক্তিবিদ তানভির খান জোহা বলেন, ক্লুলেস মামলায় ডিজিটাল ফরেনসিক গুরুত্বপূর্ণ। ক্লুলেস ঘটনায় ডিএনএ পাওয়া গেলে তা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এনআইডিও শনাক্ত করা সম্ভব হয়। আর জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য থেকে অপরাধী ধরাটাও সহজ হয়ে যায়।

অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রোমানা আক্তার বলেন, বিভিন্ন অপরাধের তদন্তকারী কর্মকর্তারা আমাদের কাছে এলে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ও ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ বেশ কিছু বিষয় সামনে রেখে আমরা ফরেনসিক করি। এতে বেরিয়ে আসে মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। অপরাধীরা আলামত মুছে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ডিজিটাল ফরেনসিকের অনেক কিছু থাকে, যা তাদের পক্ষে  মোছা সম্ভব হয় না।

ডিএমপি কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবারক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, অপরাধ করে এখন পার পাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা মোবাইল ফোনে কেউ হুমকি দিলেও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। হুমকি দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় দ্রুত শনাক্তের পাশাপাশি অবস্থানও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ফরেনসিকই বড় ভূমিকা রাখছে।

অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ সুপার রেজাউল ইসলাম মাসুদ বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোতে কী ধরনের তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে সেসব বিষয়গুলোতেও এখন আদালত অবহিত হতে পারছেন।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামীম সরদার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সাক্ষ্য হিসেবে ডিজিটাল ফরেনসিক প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আদালতে। বিভিন্ন মামলায় যেভাবে সাক্ষ্য নেওয়া হয়, সেভাবেই ডিজিটাল ফরেনসিক রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট, ভিডিও, ছবি বা কথোপকথন-এসব বিষয়ের সাক্ষ্যগত মূল্য রয়েছে এখন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads