• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
‘তুই আমার হাতেই মরবি’

ফাইল ছবি

অপরাধ

‘তুই আমার হাতেই মরবি’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ জুন ২০২১

মুনিয়া মৃত্যু রহস্য নতুন মোড় নিয়েছে। মুনিয়ার মৃত্যুর আগে মুনিয়াকে তার বড় বোন নুসরাত তানিয়া বলেছিলেন তুই আমার হাতেই মরবি। এ কথার সূত্র ধরেই এখন তদন্ত নাটকীয় মোড় নিয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মারা যান কলেজ ছাত্রী মুনিয়া। তার মৃত্যুর পর পরই এই মৃত্যু নিয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন তার বড় বোন নুসরাত তানিয়া। একটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন তার বড় বোন নুসরাত তানিয়া। এই আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলায় ১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলাটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখন তদন্ত করছে এবং এটির তদন্ত করতে গিয়ে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা বেরিয়ে আসছে।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, ২৬ এপ্রিলের দুই দিন আগে ২৪ এপ্রিল মুনিয়ার সঙ্গে নুসরাতের উত্তপ্ত টেলিআলাপ হয়। ওই টেলি আলাপের ব্যাপ্তি ছিল ১২ মিনিট। টেলিআলাপের বিষয়বস্তু এবং কথোপকথনের রেকর্ড তদন্তকারী কর্মকর্তাদের হাতে চলে এসেছে। টেলিআলাপে দেখা যাচ্ছে যে মুনিয়াকে রীতিমতো শাসাচ্ছিলেন নুসরাত। তাকে একজন ব্যক্তির কাছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন নুসরাত তানিয়া। বলেছিলেন যে ওই ব্যক্তির কাছে গেলে তিনি কিছু টাকা দেবেন কিন্তু মুনিয়া সেখানে যেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন। মুনিয়া বলছিলেন যে, আমি এভাবে আর চলতে পারবো না, আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে আমি দূরে কোথাও চলে যাব। কিন্তু নুসরাত তাকে এই ব্যাপারে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছিলেন। এক পর্যায়ে মুনিয়া বলেন যে, এরকম আমাকে করলে আমার মরে যাওয়াই ভালো, আমি মারা যাব আত্মহত্যা করব। তখন নুসরাত ক্ষিপ্ত এবং ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন যে তোর আত্মহত্যা করতে হবে না, তুই আমার হাতেই মরবি।

এই ঘটনার দুইদিন পরে স্থানীয়রা জানান মুনিয়া মারা যান। মুনিয়া এবং নুসরাত তানিয়ার ঝগড়া যোগসূত্র আছে কিনা সেটি পুলিশ খুঁজে দেখছেন। মুনিয়া একজন কলেজ ছাত্রী হলেও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন এবং এই বাড়িটি ভাড়া করে দিয়েছিলেন নুসরাত। নুসরাত এবং তার স্বামীর ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে বাসাটা ভাড়া নেওয়া হয়েছিল এবং নুসরাতই ছিলেন মুনিয়ার অভিভাবক। গত এক মাসের বেশি সময় তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে, নুসরাত মুনিয়াকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতেন এবং মুনিয়া ছিল নুসরাতের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি, বিত্তবানদের কাছে সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হতো এবং এই পরিচয় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সূত্র থেকে নুসরাত অনেক অর্থ উপার্জন করতেন। এটিই ছিল নুসরাতের আয়ের প্রধান উপায়।

একসময় মুনিয়া এই এভাবে ব্যবহৃত হতে হতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং এসব ছেড়েছুড়ে দিয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এমনকি মুনিয়া তার বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে বলেছিলেন যে তিনি দূরে কোথাও চলে যেতে চান কিছুদিনের জন্য। এটি মূলত বলেছিলেন নুসরাতের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য। যতই দিন যাচ্ছিল ততই নুসরাতের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে কুমিল্লায় যখন মুনিয়া চলে গিয়েছিলেন সেখান থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নুসরাতই বড় ভূমিকা পালন করেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মুনিয়া যেন ঢাকায় এসে একই কাজ করতে পারেন সেজন্য দেনদরবার এবং তদবির করেন। কয়েক মাস আগেই মুনিয়াকে ঢাকায় নিয়ে আসেন নুসরাত এবং এই বাড়িটি ভাড়া করে দেন। এ বাড়িটি ভাড়া করে দেওয়ার পর থেকেই নতুন উদ্যোগে মুনিয়াকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন নুসরাত। আর তারই পরিণতি হিসেবে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। আর সেই ধারণার সঙ্গে সর্বশেষ মুনিয়া এবং নুসরাতের কথোপকথন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কথোপকথনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি প্রমাণিত হয় যে এটি নুসরাত এবং মুনিয়ার কথোপকথন, সেক্ষেত্রে এই মামলাটি নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো মনে করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads