• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

অপরাধ

ইয়াবা ঢুকছে ২০ পয়েন্ট দিয়ে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ জুন ২০২১

চলতি বছর প্রায় এক কোটি পিস ইয়াবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করে। মাদক কারবারিদের মতে, আটককৃত ইয়াবা দেশে প্রবেশ করা ইয়াবার ২০ শতাংশ মাত্র। দেশে এই মাদক প্রবেশের রুটগুলো বন্ধ করতে পারলে এক পিস ইয়াবাও আসতে পারবে না। সংশ্লিষ্টদের দাবি, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হচ্ছে।

জানা যায়, এত ‘কঠোর নজরদারি’র পরও কক্সবাজার ও বান্দরবানের ২৭২ কিলোমিটার সীমান্তের অন্তত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে বানের জলের মতো দেশে ঢুকছে ইয়াবা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমান্ত এলাকার ৩৭টি কারখানায় তৈরি ইয়াবা ‘পুঁজি ছাড়াই’ অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে বাংলাদেশে। পাচারে রাতারাতি বড়লোক হবার ‘টোপে’ ব্যবহার হচ্ছে নিরীহ মানুষকে। কৌশলে বাড়ানো হচ্ছে সেবনকারীও।

কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত অনেক ইয়াবা কারবারি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চালান আনতে কেউ মিয়ানমারে গেলে তাদের বাধার পরিবর্তে উল্টো সহযোগিতা করেন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এতে বোঝা যাচ্ছে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। এ কারণে সহজে ইয়াবা আনতে পারে কারবারিরা। এটি চলমান থাকলে দেশে মাদক নির্মূল কঠিন হয়ে পড়বে।

জানা যায়, চলতি বছরে প্রায় এক কোটি ইয়াবা জব্দ ও পাঁচ শতাধিক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছেন সীমান্তরক্ষী ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি বছরে জেলা পুলিশের অভিযান চালিয়ে একদিনে ১৭ লাখসহ এখন পর্যন্ত ৩৫ লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার ও দুই শতাধিক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব-১৫) চলতি বছরে প্রায় ২২ লাখ ইয়াবাসহ ২৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। একইভাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জব্দ করেছে ২০ লাখ ইয়াবা। এছাড়া কোস্টগার্ড ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এপিবিএন এবং মাদদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে অন্তত ২০ লাখ ইয়াবা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ইয়াবা জব্দ হয়েছে। যা রেকর্ড।

কিন্তুু তারপরও থামানো যাচ্ছে না ইয়াবার আগ্রাসন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, চলমান সময়ে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখের উপরে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই ইয়াবাসেবী। যদিও ইয়াবার আগ্রাসন কমাতে, কঠোর অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে ছোট-বড় মিলিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকশ মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। কিন্তু তারপরও কোনো অংশেই কমেনি ইয়াবা অনুপ্রবেশ।’

টেকনাফ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খানের মতে, মাদকপাচার বন্ধ করতে হলে প্রথমত মূল নিয়ন্ত্রকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে সিন্ডিকেটগুলো। চলমান সময়ে মাদকপাচারে রোহিঙ্গারা একটা বড় সমস্যা। এদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ অতি জরুরি। গত ৩ বছরের মাদকবিরোধী অভিযানে দেশীয় মাদক ব্যবসায়ী কমলেও রোহিঙ্গা কারবারি, পাচারকারী, বহনকারী বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলফেরত কয়েকজন মাদক মামলার আসামি নিজেরা সংশোধন হয়ে গেছেন দাবি করে বলেন, যে পরিমাণ ইয়াবা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে তার মত্র ২০ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়ছে।

অন্যদিকে স্থানীয়দের মতে, টেকনাফের যেসব পয়েন্ট দিয়ে এখনো ইয়াবার চালান আসছে সেসব পয়েন্টে নজরদারি বাড়িয়ে সীমন্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী আসা-যাওয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে এক পিস ইয়াবাও দেশে প্রবেশ অসম্ভব। যদিও নিজেদের কঠোর নজরদারির কারণে অধিকাংশ ইয়াবা চালান ধরা পড়ছে বলে দাবি করেছে সীমান্তরক্ষী ও শৃঙ্খলা বাহিনী।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণই পুলিশের মূল কাজ। এরপরও মাদকের চালান জব্দে কঠোর  ভূমিকা রাখছে পুলিশ। চলতি বছর সবচেয়ে বড় ইয়াবার চালান জব্দের কৃতিত্ব রয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন সংস্থার তালিকায় কক্সবাজার জেলার ১ হাজার ১৫১ ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। ৫৪ জনকে গডফাদার (নেপথ্যের নায়ক) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। আত্মসমর্পণ করেছেন ২৩ জন। তারা কক্সবাজার কারাগারে ছিলেন।

অনেকে কারাগারে বসেই স্বজন এবং তাদের নিয়োজিত মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ব্যবসা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। অনেকে জামিনে এসে নিজে সাধু সেজে বাহক দিয়ে ব্যবসা সচল করেছেন। বাকি ২৪ জন গডফাদার বহাল তবিয়তে আছেন। তারা একরকম ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে জানা যায়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads