• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

অপরাধ

রাতে তারা ভয়ংকর ডাকাত!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

দিনে কেউ ফল বিক্রেতা, গার্মেন্টকর্মী বা ট্রাকচালক। রাত হলেই পরিকল্পনা করে নামত সংঘবদ্ধ ডাকাতিতে। গত নয় মাসে সাতটির বেশি ডাকাতি করেছে তারা। রংপুরের পীরগঞ্জে ডাকাতির সময় হানিফ পরিবহনের চালক হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিল চক্রটি। বিশেষ করে গাইবান্ধা-রংপুর মহাসড়কে ডাকাতির অন্যতম হোতা ছিল তারা।

গত শনিবার রাতে রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে এই চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব। গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-নয়ন চন্দ্র রায়, রিয়াজুল ইসলাম লালু, ওমর ফারুক, ফিরোজ কবির, আবু সাঈদ মোল্লা ও শাকিল মিয়া। এ সময় ডাকাতি ও হত্যার কাজে ব্যবহূত পাঁচটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার নয়ন চন্দ্র রায় এই চক্রের মূলহোতা। এদের মধ্যে কেউ আশুলিয়ার বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকরির পাশাপাশি ফল বিক্রি, অটোরিকশা চালানোসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত। রিয়াজুল ইসলাম লালু পেশায় একজন ট্রাকচালক।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাতে ঢাকার বাস কাউন্টার থেকে যাত্রীবেশে টিকেট কেটে দূরপাল্লার বাসে উঠে নির্জন এলাকায় বাসচালককে ধারালো ছুরি দেখিয়ে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিত ডাকাত দলটি। এরপর যাত্রীদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ডাকাতি করে পালিয়ে যেত। যাত্রীবেশে তারা ডাকাতি হানিফ পরিবহন ছাড়াও শ্যামলী পরিবহন, রত্না স্পেশাল, সিটিবাড়ি স্পেশাল, সৈকত পরিবহনে ডাকাতি করেছে।

র্যাব মুখপাত্র বলেন, হানিফ পরিবহনের চালক হত্যার ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার বাদী হয়ে রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় মামলা করে। এই ঘটনায় র্যাব-১ ও র্যাব-১৩ আশুলিয়া ও গাইবান্ধায় অভিযান চালায়। অভিযানে বাসচালককে হত্যা ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৩১ আগস্ট রাত ৮টার দিকে হানিফ পরিবহনের একটি নন এসি বাস (ঢাকা মেট্রো-গ-১৫-৩৮১০) রাজধানী ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে গাবতলী ছেড়ে যায়। বাসটি রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাভারে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাত দলের তিনজন (রিয়াজুল ইসলাম লালু, আবু সাঈদ মোল্লা ও অপর একজন) সদস্য বাসে ওঠে। বাসটি রাত আটটা ৫০ মিনিটে নবীনগর পৌঁছালে দলের আরো তিন সদস্য (শ্রী নয়ন চন্দ্র রায়, ওমর ফারুক ও ফিরোজ কবির) যাত্রীবেশে বাসে ওঠে। বাসটি রাত আড়াইটার দিকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বিটিসি মোড় অতিক্রম করার পর বাসে যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতির উদ্দেশে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে।

প্রথমে বাসের চালক মনজুর হোসেনকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় চালক বাসটি ঘুরিয়ে আনার চেষ্টা করলে তারা (ডাকাতরা) আবারো চালকের কাঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ডাকাত দলের সদস্য রিয়াজুল ইসলাম ওরফে লালু বাসটি চালাতে থাকে ও ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা বাসে লুটপাট করতে করতে রংপুরের শটিবাড়ীস্থ ভাবনা ফিলিং স্টেশনে ইউটার্ন করে আবার উল্টো পথে রওয়ানা করে।

পলাশবাড়ী পৌঁছার আগে ডাকাতরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জের চম্পাগঞ্জ হাইস্কুলের সামনে রাত রাত ৩টার দিকে যাত্রীসহ বাসটি রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতেরা যাত্রীদের মুঠোফোন ও নগদ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লুট করে।  পরবর্তীতে গুরুতর আহত বাসচালক মনজুর হোসেনকে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়। সেই মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটিতে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রয়েছে। গত নয়মাসে ৭ থেকে আটটি বাসে ডাকাতি করেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, যাদেরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি তাদের বেশির ভাগের বাড়িই গাইবান্ধা ও রংপুর। পলাশবাড়ি, রংপুর পীরগঞ্জ এই রুটটা ৪৮ কিলোমিটার এলাকা। তারা এসব এলাকার রুট সম্পর্কে ভালো জানেন। যে কারণে এই এলাকায় তারা বেশি ডাকাতি করেছে। এসব রাস্তা কখন নিরিবিলি থাকে সেটা জেনেই অধিকাংশ সময় তারা নাইট কোচে ডাকাতি করে থাকত। চক্রটি দুটি স্পটে ওয়াচম্যান হিসেবে লোক রাখত। তাদের কাজ ছিল, রাস্তায় আশপাশের মানুষের আনাগোনা আছে কি-না বা আআইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আছে কিনা। এসব সড়কের কোথাও যেহেতু সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, তাই তাদের ধারণা ছিল এখানে ডাকাতি করলে তাদের শনাক্ত করতে কষ্ট হবে।

এসব সড়কে অপরাধ দমনে র্যাবের কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে র্যাব মুখপাত্র বলেন, আমাদের পাশাপাশি, হাইওয়ে পুলিশ টহল দিয়ে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গাড়ি বা যাত্রীদের চেক করে থাকেন। আমরা তাদেরকে নজরদারির মধ্যে রেখেছি। এসব অপরাধীরা যেদিন ডাকাতি করত সেদিন সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন সড়কে নজরদারি রাখত। পরে সুযোগ পেলেই তারা ডাকাতি করত। যেহেতু পরিবহন সেক্টর ও হাইওয়েতে ডাকাতি বেড়ে গেছে আমরাও আমাদের টহল জোরদার করেছি। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশও নিশ্চয় তাদের টহল জোরদার করেছে।

ডাকাতিতে কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বেশির ভাগ সময় ছুরিই ব্যবহার করেছে। এই ছুরি ব্যবহার করেই সবশেষ ডাকাতি সম্পন্ন করেছে। এচক্রটি এবার প্রথম গ্রেপ্তার হলো বলে জানিয়েছে র্যাব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads