• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

আচারের প্যাকেটে ইয়াবা সৌদির জেলে বাংলাদেশি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ অক্টোবর ২০২১

বাংলাদেশি যুবক মো. আবুল বাশারকে গত রোববার ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরবের একটি আদালত। তার অপরাধ, দেশটিতে প্রবেশের সময় তার ব্যাগে ইয়াবা পাওয়া গেছে। যদিও বরিশালের এই যুবকের ব্যাগে ‘আচারের প্যাকেট’ বলে ইয়াবা ভর্তি ওই প্যাকেটটি ঢুকিয়ে দেন বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত এসআর সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ। এক মাসের মধ্যে আপিল করার সুযোগ থাকলেও দূতাবাসের মাধ্যমে আইনি সহায়তা না পেলে কারাভোগ করতে হবে আবুল বাশারকে। ‘নির্দোষ স্বামী’কে কারামুক্ত করতে বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের সহায়তা চান আবুল বাশারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম।

রাবেয়া বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্বামী অপরাধ করেনি, তারপরও তার জেল হয়ে গেল। তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না, দূতাবাসের মাধ্যমে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। এখন সরকার যদি সাহায্য না করে তাহলে কীভাবে ছাড়িয়ে আনব। আপিল করার এক মাস সময় আছে, এখন সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলেই আমার স্বামীকে ফিরে পাব। স্বামী জেলে, আর আমি পাঁচ বছর বয়সি এক মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমার স্বামী অপরাধ না করেও কেন জেল খাটবে?’

যেভাবে ফাঁদে পড়লেন আবুল বাশার : করোনা মহামারিতে গত বছর ১২ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন আবুল বাশার। ছুটি শেষে কাজে ফিরতে এ বছর মার্চের ১১ তারিখ আবুল বাশার সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। ওইদিন দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ৪ নম্বর গেট দিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। বোর্ডিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়ালে তাকে এক ব্যক্তি একটি প্যাকেট সৌদি আরব নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। প্যাকেটে কিছু আচার ও খাবার আছে জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, সৌদিতে অবস্থানরত তার ভাই মো. সাইদ প্যাকেটটি বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করবেন। তবে অপরিচিত ব্যক্তির প্যাকেট নিতে অস্বীকৃতি জানান বাশার। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেকে বিমানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আবুল বাশারকে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেন। এই প্যাকেট না নিলে তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেবেন না বলেও ভয় দেখান। তাতেও নিতে রাজি না হলে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেই জোর করে বাশারের ব্যাগে প্যাকেটটি ঢুকিয় দেয়। ভয়ভীতি দেখানোয় এবং ফ্লাইটের সময় হয়ে যাওয়ায় কারো কাছে কোনো অভিযোগ না দিয়ে আবুল বাশার ফ্লাইটে উঠে পড়েন। কিন্তু সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর নিরাপত্তাকর্মীরা তার ব্যাগ তল্লাশি করলে ইয়াবার প্যাকেট পায়। এরপর আবুল বাশারকে জেলে পাঠানো হয়।

যেভাবে পাওয়া গেল বাশারের খোঁজ : ফ্লাইটে ওঠার পর থেকে আবুল বাশারের খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর সেখান থেকে ফোন করে স্ত্রী রাবেয়াকে জেলে যাওয়ার ঘটনা জানায় আবুল বাশার। তবে এর আগেই এমন একটা আশঙ্কা করছিলেন তিনি। কারণ ব্যাখ্যা করে রাবেয়া বলেন, আমার স্বামী সৌদি যাওয়ার পরদিনই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমার মোবাইলে বাংলাদেশের একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। জানতে চাওয়া হয় সৌদিতে তার স্বামী ব্যাগটি পৌঁছে দিয়েছে কি না। কিন্তু আমার স্বামীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি সৌদিতে গিয়েও যোগাযোগ না করায় আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। তখন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে জানিয়েছিলাম তার বিষয়ে খোঁজ পেতে। কিছু দিন পরে আমার স্বামী ফোন করে জানায় সে জেলে। আমাকে বিমানবন্দরের ঘটনারও বিস্তারিত জানায়।

যেভাবে ধরা পড়লেন অভিযুক্ত নুর মোহাম্মদ : স্বামীর কাছে এমন ঘটনা শোনার পর গত ১৩ এপ্রিল রাবেয়া বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশের অফিসে গিয়ে অভিযোগ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। সেদিনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সত্যতা পায় তারা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। তিনি বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান একে ট্রেডার্সের এসআর সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ। ১৪ এপ্রিল দুপুরে নুর মোহাম্মদকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। পরে পুলিশ একটি মামলা দিয়ে তাকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করে।

এ বিষয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক বলেন, রাবেয়া আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। নুর মোহাম্মদ নামের ওই ব্যক্তি আবুল বাশারকে ইয়াবা বহনে বাধ্য করেছিলেন। মামলার পর নুর মোহাম্মদকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

জিয়াউল হক বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সৌদি আরবে বাংলাদেশ এম্বাসির মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads