• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

দেখা গেলেও ধরা যায় না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ অক্টোবর ২০২১

চোরাকারবারিদের কৌশলের কারণে যশোর সীমান্তে স্থাপিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তিও পুরোপুরি রুখতে পারছে না চোরাচালান। সীমান্তে চোরাচালান রুখতে ব্যবহূত সর্বাধুনিক প্রযুক্তিকে পাশ কাটাতে চোরাকারবারিরা উঁচু গাছ ব্যবহার করছে ঢাল হিসেবে। এর ফলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোরাচালানকৃত স্থান শনাক্ত করা গেলেও চোরকারবারিকে অনেক ক্ষেত্রেই ধরা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু তারপরও আগের তুলনায় চোরাচালান অনেকটাই কমেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

জানা যায়, সীমান্তে অপরাধ রুখতে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর যশোর বেনাপোলের পটুখালী সীমান্তে স্থাপন করা হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভিল্যান্স সিস্টেম (এসবিএসএস)’। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সীমান্তের প্রায় নয় কিলোমিটার এলাকায় এসবিএসএস প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়। এর ফলে টাওয়ারে বসানো থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা এবং লং রেঞ্জ ক্যামেরার মাধ্যমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা, এমনকি ঘন কুয়াশার মধ্যেও তৎক্ষণিক ছবি বা ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। বেনাপোল সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান ও মাদক ঠেকাতে এসবিএসএস প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও চোরাকারবারিদের কিছু কৌশলে কারণে পুরোপুরো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এসবিএসএস-র জন্য যশোর সীমান্তে বিজিবি এবং বিএসএফের দুটি বিওপির (দৌলতপুর ও কল্যাণী) দায়িত্বপূর্ণ আট দশমিক তিন কিলোমিটার এলাকাকে অপরাধমুক্ত হিসেবে ষোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ঘোষণায় ওই এলাকায় সীমান্ত অপরাধসহ চোরাচালান কমানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

তবে স্থানীয়রা জানান, এসবিএসএস প্রযুক্তির সহায়তায় মাদক চোরাচালান কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে একেবারে বন্ধ করা যায়নি। সীমান্ত এলাকায় অনেক বাড়ি রয়েছে। এছাড়া অনেক এলাকায় আখচাষসহ উঁচুজাতের বিভিন্ন গাছ রোপণ করা হয়েছে। এর ফলে কোনো চোরাকারবারি সীমান্ত অতিক্রম করলে এসবিএসএস সিস্টেমের মাধ্যমে বিজিবি সিগন্যাল পায় ঠিকই, কিন্তু নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতেই সেসব বাড়ি বা আখের জমি হয়ে পালিয়ে যায় তারা। সীমান্ত এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় চোরাকারবারিরা আখচাষসহ অন্যান্য উঁচু জাতের গাছ রোপণ করেছে। চোরাকারবারিরা সীমান্ত অতিক্রম করেই সেসব আখের জমি বা গাছের বাগানের মধ্যে ঢুকে যায়। এর ফলে সিস্টেমে সিগন্যাল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা নির্ধারিত স্থানে ফোকাস করলেও কিছু খুঁজে পায় না। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও নতুন এই সিস্টেমের ফলে সীমান্ত অপরাধ অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্থানীয়রা এমনিতেই ইছামতি নদীর তীরে বসে আছেন। দেখে বুঝার উপায় নেই তিনি চোরাকারবারি। নদীটি খুবই ছোট হওয়ায় সময়-সুযোগমতো পার হয়ে দ্রুত মাদকসহ অন্যান্য চোরাইমাল নিয়ে আসা যায়। চোরাকারবারিদের প্রায় সবার কাছেই ওপারে যোগাযোগের জন্য সে দেশের সিম রয়েছে।

বিজিবি যশোরের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ভূঞা গণমাধ্যমকে বলেন, স্পর্শকাতর এলাকায় বিজিবির নজরদারি নিশ্চিত করতে স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম (এসবিএসএস) কাজ করছে। এর মাধ্যমে সীমান্তে সংশ্লিষ্ট কমান্ড পর্যায় থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে। নতুন এই সিস্টেম মাদক, অস্ত্রসহ সব ধরনের চোরাচালান ও সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে সহায়তা করছে।

বিজিবির সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী এ সিস্টেমের ৪৬.৫ মিটার বা প্রায় ১৫৩ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন একটি প্রধান টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারের ওপরে অত্যাধুনিক দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা রয়েছে। যার একটি লং রেঞ্জ ক্যামেরা, যা দিনের বেলায় কাজ করে। অন্যটি থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা, যা রাতের বেলায় অথবা ঘন কুয়াশার মধ্যে কাজ করে। এসবিএসএস-র সহায়ক হিসেবে সীমান্তের দীর্ঘ নয় কিলোমিটার এলাকায় ১৯টি রিপিটার পোল রয়েছে। এক পোল থেকে আরেকটি পোলের দূরত্ব ৫০০ মিটার। প্রত্যেক রিপিটার পোলে দুটি করে ডিভাইস লাগানো রয়েছে। একটি পোল থেকে আরেকটি পোলে কানেকটিং ক্যাবলের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। মাটির নিচ দিয়ে স্থাপন করা ওই ক্যাবলটি সেন্সরবিশিষ্ট।

সীমান্তের যে কোনো স্থান দিয়ে কোনো মানুষ, প্রাণী বা পণ্য অতিক্রম করলেই তাৎক্ষণিকভাবে ওই সেন্সর ক্যাবলের মাধ্যমে কম্পনের সৃষ্টি হয়। কম্পনটি পোলে থাকা ডিভাইসে রিসিভ হয়ে শক্তিশালী একটি সিগন্যালে পরিণত হয়। এরপর সিগন্যালটি পোল থেকে এন্টেনার মাধ্যমে প্রধান টাওয়ারে যায়। টাওয়ারের ওপরে এসবিএসএম নামে একটি ডিজিটাল ডিভাইস রয়েছে, যা রিপিটার পোল থেকে সিগন্যাল রিসিভ করে। সিগন্যাল পাওয়া মাত্রই সেটি কন্ট্রোল রুমের কম্পিউটারে ভেসে ওঠে। তখন কম্পিউটারে দেখা যায়-১৯টি পোলের কোন পোল থেকে সিগন্যালটি এসেছে এবং টাওয়ারের ক্যামেরা তখন ওই পোলে ফোকাস করতে থাকে। সন্দেহজনক কিছু ক্যামেরায় দেখতে পেলে কন্ট্রোল রুম থেকে ওয়্যারলেসে বিজিবির নির্ধারিত ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়। এরপর বিজিবি সদস্যরা ওই পোলের এলাকা তল্লাশি করে দেখেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads