• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
দোষ স্বীকার করলেন ইকবাল হোসেন

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

দোষ স্বীকার করলেন ইকবাল হোসেন

  • কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০২১

কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন ইকবাল হোসেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কুমিল্লা শহরে পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইকবাল কোরআন রাখার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, মণ্ডপে কোরআন রাখার পর হনুমানের মূর্তি থেকে গদা সরিয়ে নেওয়ার কথাও পুলিশের কাছে বলেছেন ইকবাল। তবে কার নির্দেশে এই কাজ করেছেন, তা এখনো জানাননি। গ্রেপ্তারের পর থেকেই ইকবাল অসংলগ্ন আচরণ করছেন।

তিনি আরো জানান, ইকবাল হোসেন কারো প্ররোচনায় পূজামণ্ডপে কোরআন রেখেছিলেন কিনা এবং সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী যাদের সঙ্গে তিনি  কথা বলেছেন তাদের সম্পৃক্ততা আছে কি না জিজ্ঞাসাবাদে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ইকবালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ লাইনে নেওয়ার পর থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট। সেখান থেকে তাকে গতকাল নেওয়া হয় কুমিল্লা পুলিশ লাইনে। এদিন দুপুর ১২টার দিকে ইকবালকে বহন করা পুলিশের গাড়ি কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে পৌঁছায়। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে তাকে নিয়ে রওনা হয় কুমিল্লায়। এরপর সাড়ে ১২টা তাকে পুলিশ লাইন্সে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত করা হয়।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর হোসেন বলেন, কালো গ্লাসের একটি গাড়িতে করে কঠোর নিরাপত্তায় ইকবালকে কুমিল্লায় আনা হয়। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকে।

কুমিল্লা জেলা পুলিশের ডিআইও মনির আহমেদ জানান, সব তদন্ত সংস্থা ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হবে, তারপর আদালতে তোলা হবে।

দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। ওই মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরো বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

যেখান থেকে সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতার শুরু, সেই নানুয়ার দীঘিরপাড়ের মণ্ডপে কীভাবে উত্তেজনার শুরু এবং মূল মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো, সে বিষয়ে মঙ্গলবার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে ।

পূজার আয়োজক, এলাকাবাসী, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার আগের রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজাসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান।

পরে বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৩টার দিকে এক ব্যক্তি কোরআন শরিফটি রেখে যান মণ্ডপে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। গদা হাতে তার চলে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকারই কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসে মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখা যুবকের নাম ইকবাল হোসেন। ৩০ বছর বয়সী ইকবাল কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। নূর আলম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।

ইকবালের সহযোগী সন্দেহে ইকরামসহ অন্তত চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীর শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারের সহকারী খাদেম হিসেবে পরিচিত হুমায়ুন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদও রয়েছেন। এই মাজারের মসজিদ থেকেই কোরআন নিয়ে মণ্ডপে রাখেন ইকবাল।

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইকবাল গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত এবং আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads