• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

অস্ত্র মজুত ও কারখানা তৈরি করছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০২১

শুধু অস্ত্র মজুতই নয়, অস্ত্র তৈরির কারখানাও গড়ে তুলছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরে দুর্গম পাহাড়ের ভেতরে এসব কারখানা রয়েছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা অপকর্মের আস্তানা গড়ে উঠেছে। আধিপত্য ধরে রাখতে বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা এসব অপকর্ম চালাচ্ছে। এ কারণে নিজেরা যেমন বিভিন্ন উৎস থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে, তেমনি নিজেরাই গড়ে তুলছে অস্ত্র তৈরির কারখানা।

এসব কর্মকাণ্ডকে বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। গোপনে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে। গত রোববার রাতে এরকম এক অস্ত্র তৈরির কারখানায় র্যাব অভিযান চালায়। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলির পর তিন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করতে সক্ষম হয় তারা। আর উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। 

উখিয়া পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানা : কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং পূর্ব ফলিয়াপাড়া দুর্গম পাহাড়েও অস্ত্র তৈরি ও মেরামতের কারখানা গড়ে উঠেছিল। র্যাবের অভিযানে সেখান থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও সেখানে কেউ আহত হয়নি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান এলিট ফোর্স র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, ‘সম্প্রতি বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের শরণার্থী ক্যাম্প ও আশপাশে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, বিভিন্ন মাদক ব্যবসা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। র্যাবের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, উখিয়ার কুতুবপালং পাহাড়ে মাটি কেটে একটি অস্ত্র তৈরির, মূলত অস্ত্র মেরামতের কারখানা গড়ে উঠেছে। এরপরই র্যাব-১৫ সেখানে অভিযান চালায়। সেখান থেকে দশটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার এবং হাবিবুল্লাহ, বায়াত উল্লাহ ও মো. হাসনকে আটক করা হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে-চারটি এসবিবিএল, একটি শটগান, ৫টি ওয়ানশুটার গান, ১৩ রাউন্ড কার্তুজ, একটি কিরিচ ও চাকুসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। আটক তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক কি না তা যাচাই করা হচ্ছে। রাত তিনটা থেকে সকাল পর্যন্ত এ অভিযান হয়েছে।’

র্যাব মুখপাত্র আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক সময়ে হামলা ও অবৈধ কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদেরও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। তারপরই উখিয়া থানাধীন ৪ নম্বর রাজাপালং পূর্ব ফলিয়াপাড়ার দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালানো হয়।’

গত ২২ অক্টোবর উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ নামের একটি মাদরাসায় হামলা চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ছয়জন নিহত হন। নিহতদের সবাই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সদস্য।

এই ঘটনার রেশ না কাটতেই ২৯ অক্টোবর কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পের ভেতরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ মারা যান। এশার নামাজ শেষ করে মুহিবুল্লাহ তার নিজের প্রতিষ্ঠিত আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর অফিসে অবস্থান করছিলেন। অফিসের ভেতরে ঢুকে বন্দুকধারীরা তাকে ৫ রাউন্ড গুলি করে। তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ১৯৯২ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।

ক্যাম্প এলাকায় অভিযান অব্যবহূত থাকবে জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, এই অস্ত্র তাদের কাছ থেকে কারা নিত, অস্ত্রের অপব্যবহার কোথায় হতো আমরা আটকদের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছি। পাশাপাশি র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির কারণে আমরা সেখানে আরো অভিযান করতে পারব।

র্যাবের অভিযানের সময় কোনো হতাহত আছে কি না জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তিনজনকে আটক করেছি। আমরা আশা করছিলাম সেখানে আরো লোক থাকার সম্ভাবনা ছিল। সেখানে গোলাগুলি হয়েছে, অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে কিন্তু আমাদের কেউ হতাহত হয়নি। তা ছাড়া যাদের আটক করেছি, তাদের কেউ হতাহত হয়নি।’

এদিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে এখন অসংখ্য অস্ত্র তৈরির ছোট-বড় কারখানা গড়ে উঠেছে। দুর্গম পাহাড় থেকে শুরু করে ক্যাম্পর ভেতরেই তারা এ কারখানা তৈরি করেছে। পাশাপাশি তারা এখন অত্যাধুনিক অস্ত্রে শস্ত্রেও সুসজ্জিত।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে এসব অস্ত্রের প্রকাশ্য ব্যবহারও হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এসব অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে।

কর্মকর্তাদের দাবি ক্যাম্প ঘিরে প্রায় অর্ধশত সশস্ত্র গ্রুপ ও সংগঠন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি সংগঠন ইয়াকিন ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। তাদের নিকট অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রও রয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো প্রতিবেদনে দ্রুত যৌথ অভিযান পরিচালনারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ক্যাম্প ঘিরে যে অপকর্ম হচ্ছে না সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ক্যাম্প ঘিরে যেন বড় ধরনের নাশকতা না হয়। পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গভীর পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, জেলা পুলিশের পাশাপাশি সেখানে র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও নজরদারি করছে।

ক্যাম্প ঘিরে যে-কোনো নাশকতা রোধে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার আসামি ও তার খুনের আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নাশকতা চালিয়ে এখানে কেউ পার পাবে না আমরা সেই চেষ্টায় আছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অস্ত্র মজুত ও কারখানা তৈরি করার সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করা হবে।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads