• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
দিনে টিকটকার, রাতে ‘ভাইব্বা ল কিং’ গ্যাংয়ের সদস্য

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

দিনে টিকটকার, রাতে ‘ভাইব্বা ল কিং’ গ্যাংয়ের সদস্য

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর ২০২১

তাদের কেউ অটোরিকশা চালক, কেউ দোকানের কর্মচারী, কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ অফিসের পিয়ন। তারা সবাই ‘ভাইব্বা ল কিং’ (ঠধরননধ খড় করহম) নামে একটি কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত। তারা দিনে বিভিন্ন অশ্লীল ভঙ্গিতে বানাতো টিকটক ভিডিও। আর রাত হলেই বেরিয়ে পড়তো ছিনতাইয়ে। গত সোমবার রাতে এক দম্পতিকে ছিনতাইয়ের পর র‌্যাব এই চক্রটির নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানিয়েছে, গত দুই-তিন বছর ধরে রাজধানী মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, বসিলা ও রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র মহড়া, ভাড়ায় শোডাউন করে আসছিল চক্রটি।

সোমবার রাতে ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি কিশোর গ্যাং চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২ এর একটি দল। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিন জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। বাকিরা হলেন- মো. রুমান (১৮), গ্যাং লিডার শরীফ ওরফে মোহন (১৮), মো. উদয় (১৯), মো. শাকিল (১৯), মো. নয়ন (১৮) ও মো. জাহিদ (১৮)। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চারটি লোহার দেশীয় তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, গাঁজা ৫০ পুরিয়া, দুটি স্টিলের তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, একটি প্লাস্টিকের পিস্তল সদৃশ্য, ৬৫ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জাম এবং তিনটি মোবাইল।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানী ঢাকার বেশকিছু এলাকাকে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান ও বসিলা ও রায়েরবাজার এলাকা অন্যতম। এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র‍্যাব।

গতকাল সোমবার রাত ৯টায় ঢাকা উদ্যানের সামনে থেকে র‌্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ার তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা চান এক দম্পতি। র‌্যাব-২ এর গোয়েন্দা ও টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর রায়েরবাজার এলাকা থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই করা ভ্যানিটি ব্যাগ। রাতেই র‌্যাবের টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে চাঁদ উদ্যান সংলগ্ন সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং চক্রটির লিডার মোহনসহ আরও পাঁচ সদস্যকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারাল অস্ত্র, পিস্তল সদৃশ্য ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কিশোর-তরুণরা জানায়, তারা ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সদস্য। চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। দলের লিডার মোহনের নেতৃত্বে দুই/তিন বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এরা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এ গ্রুপের সদস্যরা আগে লেবেল হাই গ্যাং এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্তকোন্দলে যা পাঁচ/ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে সক্রিয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গ্যাং সংক্রান্ত বিভিন্ন ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রচারণা পাওয়া যায়, যেমন- ‘মোহাম্মদপুরের পোলাপান যা করি তা টোকেন ছাড়াই ওপেন’, ‘মোহাম্মদপুরের পোলা বাজান, আমি একাই একশ, গেঞ্জাম করার আগে ভাইব্বা লইও’।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, দুই/তিন বছর ধরে কিশোর গ্যাং চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তারা ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

গ্রেপÍারকৃতরা জানায়, ‘ভাইব্বা ল কিং’ মানে তাদের সদস্যদের যেই অবস্থায় থাকুক না কেন তারা মোহাম্মদপুরের কিং। অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। গ্রেপ্তাররা লেগুনা, অটো চালক, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণকর্মী ও অফিসের বার্তাবাহক পেশার পাশাপাশি মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে গ্রাহকদের টার্গেট করত।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, র‌্যাবই প্রথম গ্যাং কালচারের নামে গজে ওঠা কিশোর গ্যাং বিরোধী অভিযান শুরু করে। এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং এর তালিকা করে ইতোপূর্বে র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করেছে। অনেককে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads