• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদাবাজি

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০২ ডিসেম্বর ২০২১

পুরস্কার ঘোষিত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায়ে  প্রতারকচক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই চক্রটি সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে মোবাইলে ফোন করে হত্যার হুমকিসহ নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।  এ ক্ষেত্রে তারা মোবাইল ফোনের পরিবর্তে আইপি নম্বর ব্যবহার করছে।

সম্প্রতি এ চক্রের বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দারা এসব তথ্য জানতে পারে। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, তারা চাঁদাবাজির পুরো প্রক্রিয়াটিকে তিনভাগে ভাগ করে পৃথকভাবে কাজ করত। এরমধ্যে একটি গ্রুপ নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে টেলিফোন ডায়েরি সংগ্রহ করে। পরে সেই টেলিফোন ডায়েরি থেকে বেশ কয়েকজনকে টার্গেট করত। দ্বিতীয় গ্রুপ। আরেকটি গ্রুপ আগের গ্রুপ থেকে পাওয়া নম্বর থেকে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের ফোন দিত। ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলত। পরে ওই টাকা সংগ্রহ করে নিজেদের মধ্যে সমান ভাগ-বাটোয়ারা করে নিত।

গোয়েন্দারা জানান, প্রতারকরা বর্তমানে আইপি নম্বর ব্যবহার করেও ফোন দিচ্ছে। আইপি নম্বর দিয়ে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে ফোন দেয়। এরপর কৌশলে ২৭ নভেম্বর তিনজন প্রতারক চাঁদাবাজকে আমরা গ্রেপ্তার করি। তারা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন গ্রুপের নাম ব্যবহার করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আরো কয়েকটি গ্রুপকে চিহ্নিত করেছি। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদা আদায় করলেও তাদের সঙ্গে প্রতারকচক্রের কারো কোনো যোগাযোগ নেই। এমনকি তারা কোথায় কীভাবে অবস্থান করছে, তাও তাদের অজানা। তবে কিছু চাঁদাবাজির ঘটনায় বিদেশে আত্মগোপনে থাকা টপ টেররদের যোগসাজশ রয়েছে। এছাড়া তাদের সহযোগীরাও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে আসল ও নকল চাঁদাবাজ চেনা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই প্রতারকচক্র তাদের ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছে। বিশেষ করে রাজধানীর মিরপুর, খিলগাঁও, বাড্ডা এবং রমনা এলাকায় এ ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

স্থানীয়রা জানান, মাঝে কয়েক বছর চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমে গেলেও ভারতে পালিয়ে থাকা তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত রাজধানীর মিরপুর-পল্লবীতে ফের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। তার সহযোগিরা অনেকটা প্রকাশ্যেই সেখানকার গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ঝনঝনিয়ে উঠছে। এ অবস্থায় অনেকেই ভয়ে এ ব্যাপারে র্যাব-পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে চাঁদার টাকা তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এছাড়া ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, মোল্লা মাসুদ, সুব্রত বাইন, মানিক ও আইজি গেটের কচির নামেও রাজধানী বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা ওঠানো হচ্ছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সূত্রগুলো জানায়, চাঁদা চেয়ে সন্ত্রাসীদের হুমকি শিকার বেশির ভাগ মানুষই এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত না করেই গোপনে টাকা দেওয়ায় তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

পুলিশ ও র্যাবের সূত্রগুলো জানিয়েছে, চাঁদাবাজিসহ অপরাধে সবচেয়ে এগিয়ে আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত হোসেন। ঢাকার বেশিরভাগ স্থানেই তার সহযোগীরা সক্রিয়; বিশেষ করে মিরপুর-পল্লবী ও সাভার এলাকায় তার সহযোগীদের আনাগোনা বেশি। মিরপুর, পল্লবী ও সাভার এলাকায় তার একাধিক সহযোগী গ্রুপ রয়েছে। এসব কারণে ওইসব এলাকাতেই প্রতারকচক্র তাদের চাঁদাবাজির প্রতারণার জাল সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে অনেকে অপকর্ম করে বলে আমরা মাঝেমধ্যে তথ্য পাই। এ ক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোর। চাঁদাবাজির ঘটনা অনেকাংশ কমে এসেছে। তারপরও সন্ত্রাসীদের বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।

একই অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশনে যেতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক চক্রকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কারো এখন আর বাংলাদেশের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ নেই। তারপরও কিছু প্রতারকচক্র শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে অপরাধ করে থাকে বা চাঁদাবাজি চালিয়ে থাকে। তাদের ধরতে গোয়েন্দারা একাধিক কৌশলী ফাঁদ পেতেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, চাঁদাবাজির শিকার এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে নেমে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পায়। তারা জানতে পারে, একটি চক্র রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খুলনা, বরিশালে বিভিন্ন পেশার লোকজনকে ফোন করে শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয় চাঁদা দাবি করছে এবং ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। অনেকে ভয়ে টাকা দিয়ে দিচ্ছে। প্রতারকরা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে চাঁদার অর্থ সংগ্রহ করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads