• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কয়েন দিয়ে অভিনব প্রতারণা

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

কয়েন দিয়ে অভিনব প্রতারণা

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৫ জানুয়ারি ২০২২

গুলিস্তান থেকে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে পুরোনো কয়েন কিনে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ভেতরে ঢুকানো হয় চুম্বক। এ জন্য খরচ হয় আরো ৪০ টাকা। আর মোট ৭০ টাকা খরচ করে সেই কয়েন দিয়ে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া হয় কোটি কোটি টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় সংঘদ্ধ প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে এমন অবিশ্বাস্য প্রতারণার শিকার হয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে ১১ লাখ টাকা। সাথে সেই কয়েনও।

গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, সংঘবদ্ধচক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। কয়েন প্রতারণার এ চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে কোটি টাকা খুঁইয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, উত্তরায় এই চক্রের সদস্যের ফাঁদে পড়েন কয়েকজন ব্যবসায়ী। প্রতারকরা ব্যবসায়ীদের জানান, তাদের কাছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম লেখা সেই আমলের ৪ টি কয়েন রয়েছে। সেটি কোটি টাকা দিয়ে আনতে পারলে এর একেকটি কয়েন বিক্রি করা যাবে ৫ কোটি টাকায়। এতে ভুক্তভোগীরা লোভে পড়ে যান। তারা কয়েনগুলো দেখতে চায়। প্রতারকচক্র তাদের অন্য সদস্যদের দিয়ে সেই চারটি কয়েন নিয়েও আসে। পরে একটি রেস্টুরেন্টে বসে দেখে। প্রতারকচক্রের সদস্যরা ভুয়া রেডিওলোজিস্ট এনে তাদের সামনে কয়েনগুলো পরীক্ষাও করায়। ভুয়া রেডিওলোজিস্ট ওই ব্যবসায়ীদের জানায়, কয়েনগুলো ম্যাগনেটিক পাওয়ার সমৃদ্ধ। এটি বহু মূল্যবান কয়েন। বিদেশিরা এসব কয়েন কিনতে লাখ লাখ ডলার খরচ করে।

প্রতারকচক্রের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়ার প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীদের। পরবর্তীতে আরো ২৫ লাখ দিলে একটি কয়েন তারা দেবেন। সেই কথায় ব্যবসায়ীরা মোট ৪৫ লাখ টাকাও দেন। ওই টাকা নিয়ে প্রতারকচক্র একটি কয়েনও দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা সেটি পরীক্ষা করে দেখে এটি ভুয়া। এ ঘটনার পর তারা উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। এ অভিযোগের অনুসন্ধানে নামে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল। পরবর্তীতে উত্তরা, সাভার, টঙ্গি এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার প্রতারক ও তাদের নিকট থাকা ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করে।

উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারকচক্রের সদস্যরা কীভাবে প্রতারণা করে সে সম্পর্কে অভিনব ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, চক্রের সদস্যরা আগে কয়েন না নিয়েই প্রতারণা করত। কিন্তু বর্তমানে কয়েন নিয়েই প্রতারণা করে। প্রথমে তারা গুলিস্তান থেকে ৩০ টাকা দিয়ে পুরাতন কয়েন কেনে। এরপর সে কয়েনে আরো ৪০ টাকা খরচ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লিখে ভেতরে চুম্বক দিয়ে দেয়। এরপর তারা বড় ব্যবসায়ী, আমলাদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর তাদের জানায়, এ ধরনের কয়েন এক জায়গায় রয়েছে সেটি কিনে আনতে পারলে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যাবে।

তিনি বলেন, এ ধরনের লোভনীয় কথা শোনার পর টার্গেটকৃত ব্যবসায়ীরা সেটি দেখতে চায়। পরে তারা তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের সেটি নিয়ে আসতে বলে। বড় কোনো হোটেল বা বাসাবাড়িতে বসে সেগুলো দেখায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও চুম্বক লেগে যাওয়া দেখে বিশ্বাস স্থাপন করে। এক পর্যায়ে ২০/৫০ লাখ টাকা দিলে কেনা যাবে এ রকম কথা বলে। ব্যবসায়ীরা টাকা দিলে প্রতারকচক্র সেই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, কয়েক ধাপে প্রতারকচক্র এ কাজটি করে থাকে। টার্গেটকৃত ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই বুঝতে না পারে সে প্রতারণার শিকার হচ্ছে এ কারণে তারা খুবই সতর্কভাবে এ কাজ সম্পন্ন করে। কয়েন ছাড়াও ব্রিটিশ আমলের সীমানা পিলার নিয়েও তারা প্রতারণা করে।

প্রতারক এ চক্রের সদস্যদের সাধারণত গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা ও ভাটারা এলাকায় ঘোরাফেরা করে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। এ এলাকাগুলোতে যেহেতু বিদেশিরা বেশি থাকে সে কারণে তারা এ সব এলাকা টার্গেট করে। এছাড়াও ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও এসব এলাকায় থাকেন।

গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এ সব এলাকায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করেই কয়েন ও পিলার প্রতারণার ফাঁদ পাতে তারা। যারাই ফাঁদে পা দেয় তারাই প্রতারিত হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, কয়েন বা পিলার যে কথা বলা হয় সেটি আসলেই ভূয়া। প্রতারণার জন্যই মূলত ম্যাগনেটিক পাওয়ার বা পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে এ কয়েন লাগে এ যাবতীয় মিথ্যা কথা বলা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, কেউ যদি এ ধরনের কথা বলে তাহলে বুঝতে হবে প্রতারণার উদ্দেশে সে এ কথা বলছে। তার ব্যাপারে থানা পুলিশ বা গোয়েন্দা পুলিশে খবর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads