• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

চিকিৎসার নামে প্রতারণা

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে হাতিয়ে নেয় টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০২২

ফেসবুকে সুন্দরী নারীদের ছবি দিয়ে চর্ম ও যৌন সমস্যায় টেলিমেডিসিন চিকিৎসার কথা বলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিত একটি চক্র। তারা করোনা মহামারি চলাকালে গত দুই বছরে কয়েক হাজার রোগীর কাছ থেকে এভাবে অনলাইনে চিকিৎসার ফাঁদ ফেলে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

এমন অভিযোগে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. রাশেদ হোসেন প্রান্ত (২৭) ও তার স্ত্রী মোসা. মৌসুমী খাতুন (২৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, চারটি মোবাইল সিম, ১৩টি ফেসবুক আইডি ও তিনটি হোয়টাসঅ্যাপ আইডি জব্দ করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, আবু সাঈদ (৩১) জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইডাব্লিউ ভিল্লা মেডিকার চিফ লিগ্যাল অফিসার। যাতে অ্যাসথেটিক এবং রিজেনারেটিভ বিষয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তিনি সমপ্রতি একটি ফেসবুক পেজ পর্যালোচনা করে দেখতে পান ফেসবুক আইডিতে ইডাব্লিউ ভিল্লা মেডিকা প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের ডা. তাসনিম খানের নাম পদবী এবং মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে চিকিৎসার নামে ভুয়া প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় আবু সাঈদ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে এই চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, চর্ম ও যৌন সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের কাছে পরামর্শ নিতে সংকোচবোধ করেন। এ ধরনের রোগীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারকচক্রের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করে। গ্রেপ্তাররা দেশের খ্যতিমান ও জনপ্রিয় চিকিৎসকদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেজ খোলে বিজ্ঞাপন দিত। গ্রেপ্তাররা কখনো চিকিৎসক কখনো চিকিৎসকের সহকারী পরিচয় দিয়ে কণ্ঠ পরিবর্তন করে রোগীদের সঙ্গে কথা বলতেন। কথা বলার পর রোগীদের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন সেবার বিনিময়ে মোবাইল ব্যাংকি বিকাশ/নগদ/রকেটে টাকা হাতিয়ে নিতেন। সরাসরি রোগী দেখালে দুই হাজার টাকা ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দেখালে এক হাজার টাকা করে নিতেন তারা। এভাবে প্রতিদিন ৩০-৪০ জন রোগী দেখতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা মোবাইল ফোন, ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ছদ্মবেশে প্রেসক্রিপশন প্রদান ও ওষুধ বিক্রি করে। করোনা মহামারি চলাকালে মানুষ যখন গৃহবন্দি তখন গ্রেপ্তার রাশেদ হোসেন প্রান্ত তার স্ত্রী মৌসুমী খাতুনকে নিয়ে ফেসবুকে জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা. তাসনিম খান, ডা. হুমাইরা হিমি, ডা. মার্জিয়া সুষমা, ডা. আরশিয়া আহি, ডা. সানজিদা ইসলাম, ডা. নাফিসা তাসনীম ও ডা. আলভি রহমানদের নাম ও পদবী ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে যৌন, চর্মসহ একাধিক রোগের বিষয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে ফেসবুক মেসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসআপ নম্বরের মাধ্যমে অসুস্থ মানুষের সেবার নামে ভুয়া প্রেসক্রিপশন দিয়ে বিকাশ/নগদ/রকেটের মাধ্যমে কৌশলে রোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এছাড়া বিভিন্ন নারীর ছবি সংগ্রহ করে এডিটিং করে আপত্তিকর ছবি তৈরির পর মেসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসআপ নম্বরে পাঠিয়ে কৌশলে রোগীসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার আগে কোনো সন্দেহ মনে হলে আমাদের জানাতে পারেন। অথবা অনলাইনে সেবা নেওয়ার চাইতে সরাসরি গিয়ে অথবা পরিচিত চিকিৎসদের পরামর্শ নেওয়া ভালো। ভুয়া এসব চিকিৎসকদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরো বেশি নজরদারি প্রয়োজন।

গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদের নিদের্শনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকারের তত্ত্বাবধানে টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads