• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
নজরদারিতে চাকরিচ্যুত পুলিশরা

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

নজরদারিতে চাকরিচ্যুত পুলিশরা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০২২

মাদক সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অপরাধে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের রাখা হচ্ছে বিশেষ নজরদারিতে। বিভিন্ন সময়ে এসব পুলিশ সদস্য জাড়িয়ে পড়েছিলেন নানা অপরাধে। পুলিশে চাকরি করার সুবাদে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থাকায় খুব সহজেই তারা ‘পুলিশ’ সেজে প্রতারিত করতে পারেন সাধারণ মানুষকে। অপরাধ জগতের সাথে মিশে গিয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

এদের বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়ার জন্য সমপ্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে গত এক বছরে মাদক সেবনের দায়ে চাকরিচ্যুত ১০৬ পুলিশ সদস্যকে নজরদারির আওতায় আনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডোপ টেস্টে বাদ পড়ে তারা চাকরি হারান। ইতোমধ্যে তাদের কয়েকজনের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে পুলিশ সদর দপ্তরে। ওই পুলিশ সদস্যদের নামের তালিকা জেলার পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, ২০২০ সালের মাঝা মাঝিতে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) ডোপ টেস্ট শুরু হয়। প্রথম অবস্থায় ৩০ জন সদস্য শনাক্ত হওয়ার পর তদন্ত শেষে ১০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। গত চার বছরে বিভিন্ন অভিযোগে সারা দেশে প্রায় ৬৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গড়ে মাসে ১১শ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি ঈদুল ফিতরের আগে ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ ও থানা পুলিশকে ১৯টি লিখিত নির্দেশনা দেন পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম। এর মধ্যে একটি নির্দেশনায় বলা হয়, বিগত ৩-৪ বছরের ছিনতাইয়ের স্পটগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সিসিটিটিভর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। খতিয়ান থেকে মামলার সংখ্যা বের করতে হবে। চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের নজরদারিতে আনা যেতে পারে।

এর আগে ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিটকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের নিষ্পত্তি হয় মূলত পুলিশ আইন অনুযায়ী। অভ্যন্তরীণ বা বাইরের কারও কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। তারপর বিভিন্ন পদ্ধতি ও পর্যায় অতিক্রম শেষে শাস্তির আদেশ কিংবা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় বিভাগীয় মামলা পরিচালনায় জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বিভাগীয় মামলা তদন্ত শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন (ফাইন্ডিংস) দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। চাকরিচ্যুতদের পাশাপাশি থানা বা ইউনিটে কর্মরত সদস্যরাও নানা অপরাধ করছেন।

২০২১ সালের ১৪ জুলাই অস্ত্র ও পুলিশি সরঞ্জামসহ ভুয়া ডিবি পরিচয়দানকারী ৪ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে একটি বন্দুক, একটি চাপাতি, দুটি লোহার বাটযুক্ত ছুরি, ডিবির জ্যাকেট, ১টি খেলনা পিস্তল, একটি ওয়্যারলেস সেট, একজোড়া হ্যান্ডকাফ এক লাখ টাকাসহ জব্দ করা হয়। তারা ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে রাতে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় সড়কে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি করতো। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে, আজিজ নামে একজন তাদের দলের নেতা। সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে তাদের টিমের নেতৃত্বে দেয়। এছাড়াও ঢাকার যে সব ভুয়া ডিবির দল ধরা পড়ে তাদের মধ্যে একাধিক জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকরি হারিয়ে এসব দলে যোগ দেয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মো. মশিউর রহমান জানান, আমরা ভুয়া ডিবির একাধিক গ্রুপকে গ্রেপ্তার করেছি। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখা গেছে, কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকরিচ্যুত হয়ে ভুয়া ডিবির দলে যোগ দিয়েছে। আমরা এই চক্রকে দমনে কাজ করছি। আগের মতো ঢাকায় আর ভুয়া ডিবির দৌরাত্ম্য নেই। পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে এ চক্রের সক্রিয়তা হারিয়েছে। আমরা ভুয়া ডিবির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ৬ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫শ টাকা লুট করার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে দুজন এর আগে টাকা লুটের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন।

কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজার সামনে পুুলিশের হাতে আটক হন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বলিরহাট পুলিশ ফাঁড়ির চাকরিচ্যুত কনস্টেবল মুন্সী আজমীর হোসেন। তার কাছ থেকে জব্দ করা হয় ১৪ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ ছিল।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানা পুলিশের কনস্টেবল নাইম হোসেনের ব্যক্তিগত ট্রাঙ্ক থেকে ২৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। নানা অপরাধের কারণে তাকে এর আগেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। তারপরও তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থামেনি।

পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ আইন অনুযায়ী, কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধমূলক কাজে জড়ালে তার বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির (লঘু ও গুরু) বিধান আছে। গুরুদণ্ডের আওতায় চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিত, বেতনবৃদ্ধি স্থগিত ও চাকরিকালীন সুযোগ-সুবিধা রহিত করা হয়। অপরাধ প্রমাণ হলে বরখাস্ত করা হয়। গুরুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আছে। ছোট অনিয়ম বা অপরাধের জন্য দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার, অপারেশনাল ইউনিট থেকে পুলিশ লাইনস বা রেঞ্জে সংযুক্ত করে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। বিসিএস ক্যাডারের পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ (শৃঙ্খলা ও আপিল) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগে একটি সেল রয়েছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক হায়দার আলী খান বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ আসার পরপরই গভীরে গিয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পর চাকরিচ্যুতসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বা চাকরিচ্যুত করা হয় তাদের নজরদারিতে রাখা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads