• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০২ জুলাই ২০২২

রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার মূল অভিযুক্ত ওই স্কুলেরই দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু" ‘দাদা বাহিনী’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান। নৃশংস এ হত্যার ঘটনায় আবারো আলোচনায় এসেছে কিশোরগ্যাং। কিছুতেই এ কালচার থেকে বের করা যাচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। আবার এদেরই ব্যবহার করে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হত্যা, দখলসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এক শ্রেণির নেতারা।

অভিভাবকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, এতদিন নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এখন নিজের শিক্ষকের ওপর এমন পাশবিক ঘটনা হূদয় বিদারক। কিশোরগ্যাং নির্মূলে আরো আন্তরিক ও সূদুর প্রসারি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

রাজধানীতে কিশোরগ্যাংয়ের হটস্পট নামে পরিচিত উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় দিন দিন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা। প্রথমে ছোট ছোট অপরাধ করলেও পরে তারা বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কেউ কেউ ছিনতাইকারী থেকে ভয়ঙ্কর খুনি হয়ে উঠছে। এদেরকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির নেতারা আবার ফায়দা হাসিলও করছেন। মূলত এদের কারণেই দিন দিন কিশোরগ্যাং ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।

সূত্র মতে, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০টি কিশোর গ্যাংয়ের তিন শতাধিক সদস্য অপরাধে লিপ্ত। এলাকার কথিত বড় ভাইয়েরা গ্যাংগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের হাতেই প্রতিটি গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ। কিশোর বয়সে তাদেরও অপরাধের হাতেখড়ি হয়েছে। তাদের নামে উত্তরার বিভিন্ন থানায় খুন থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, উত্তরা এলাকার ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাংগুলোর মধ্যে দি বস ছাড়াও বিগ বস, পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, নাইন স্টার, নাইন এম এম বয়েজ, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইন, ফিফটিন গ্যাং, পোঁটলা বাবু, সুজন ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রি গোল গ্যাং, শাহীন রিপন গ্যাং, নাজিম উদ্দিন গ্যাং, তালা চাবি গ্যাং সক্রিয় রয়েছে।

উত্তরা ও আশপাশের এলাকায় ভাসমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের একটা বড় অংশ একসময় কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য ছিল। গত ৬ বছরে উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান এবং তুরাগ এলাকায় অন্তত ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত। ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে খেলার মাঠে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যরা। চিকিৎসার জন্য তাকে উত্তরা লুবানা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আদনানকে মৃত ঘোষণা করেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর প্রকাশ পায় উত্তরার ‘গ্যাং-কালচার’ ভয়াবহ চিত্র সামনে আসে। এরপর থেকে মূলত এই এলাকায় একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের এডিসি মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, কিশোরগ্যাং নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানাভাবে কাজ করা হচ্ছে। এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে করে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।

এদিকে সম্প্রতি টঙ্গীতে দুটি পরিবারের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাং কথিত গ্রুপ ‘ডি কোম্পানির’ পৃষ্ঠপোষক বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি ও নীরব ওরফে ডন নীরবসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের কাছ উদ্ধার করা হয় বিদেশি অস্ত্রও।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, টঙ্গী এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী এমনকি হত্যা মামলার আসামিরা এখন কিশোরগ্যাং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। এরা হলো ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন মোল্লা। তার বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাইসহ ৩টি মামলা রয়েছে। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাজমুল। তার বিরুদ্ধেও অন্তত ৪টি মামলা রয়েছে। কিশোরগ্যাংয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। আর এ কিশোরগ্যাংদের দিয়ে মাদক আনা নেওয়া করে। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের চিহ্নিত সন্ত্রাসী হত্যাসহ ৩টি মামলার আসামি হুমায়ন। একই এলাকার একাধিক মামলার আসামি ইউসুফ, কাইল্যা সাগর, রনি, জুয়েল ও জীবন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাসহ অন্তত ৪টি করে মামলা চলমান। ছয়টি মাদকের মামলার আসামি ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের রহিম। একই এলাকার দুটি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি পারভেজ। এরা সবাই একই সিন্ডিকেটের সদস্য।

এদিকে আশুলিয়ার এ ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে অভিভাবকসহ স্থানীয়দের। উত্তরার বাসিন্দা ও ড্যাফেডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান ড. কুদরাত ই খুদা বাবু বলেন, এ প্রজন্মকে আমরা কি শিক্ষা দিচ্ছি। কিশোরগ্যাং নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা আমাদেরকে অনেক ব্যথিত করে। অবশ্যই এ ব্যাপারে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নূর-ই সিদ্দিকি তারেক বলেন, কিশোরগ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে আমরা যথেষ্ট তৎপর। এ ব্যাপারে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ রয়েছে।

টঙ্গি পূর্ব থানার ওসি জাবেদ মাসুদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads