• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সক্রিয় জাল নোট কারবারিরা

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

সক্রিয় জাল নোট কারবারিরা

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৪ জুলাই ২০২২

দেশের বিভিন্ন স্থানে পশুর হাট বেচাকেনা শুরু হলেও রাজধানীতে এখনো জমে উঠেনি। প্রতিবছরই ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব এলেই জাল নোট কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। জাল নোট কারবারিরা যেন সক্রিয় হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সতর্ক আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। বিশেষ করে পূর্বে গ্রেপ্তারকৃতরা যেন আবারো এ পেশায় সম্পৃক্ত হতে না পারে সেজন্য নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রায় অর্ধশত কারবারি রয়েছে যারা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে আবারো এ পেশায় জড়িয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, জাল নোট কারবারিরা বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে সক্রিয় হয়। যেমন ঈদ মৌসুম। ঈদে টাকার প্রবাহ অন্যান্য যেকোনো সময়ের চাইতে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ কারণে তারা এ সময়টাকে বেছে নেয়। তিনি বলেন, এবারে ঈদে জাল টাকার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি দেওয়া হচ্ছে। আমারা বেশকিছু কারবারিকে গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছি।

জানা যায়, রাজধানীতে সম্প্রতি পৃথক দুটি অভিযানে জাল নোট কারবারিচক্রের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সময় তাদের কাছ থেকে ৩৯ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা জাল নোটমুক্ত বাজারের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। মূলত জাল নোটসহ গ্রেপ্তারকৃতদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া এবং আইনের ফাঁক-ফোঁকর গলে সহজে বের হওয়ার কারণে তাদের স্থায়ীভাবে প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছরই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাজারে অর্থের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। জাল নোটের কারবারিরা মূলত ওই বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে বিভিন্ন মূল্যমানের নতুন টাকার নোট ছাড়বে। আর ওই সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকা জাল নোট প্রস্তুকারীচক্র ও ব্যবসায়ীরা মাঠে নামবে। তাদের মূল টার্গেটই হচ্ছে ঢাকাসহ বড় বড় শহর ও উপজেলা পর্যায়ে পশুরহাট। ওসব অসাধু কারবারিদের প্রতিরোধে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু জাল নোটের উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তারের কয়েকদিনের মধ্যেই আইনের ফাঁক ফোঁকর গলিয়ে জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। তাছাড়া অপরাধের তুলনায় শাস্তি কঠোর না হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে তারা আবারো একই ব্যবসা শুরু করে। ফলে ওই চক্রকে ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিয়েও পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, বছরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাল নোটচক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার আগে অভিযান জোরদার করা হয়। কারণ তখন জাল নোটের প্রতিটি চক্র সক্রিয় হয়ে পড়ে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই অনেক জাল নোট কারবারি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের সবচেয়ে বড় টার্গেট কোরবানির পশুরহাটগুলো। জাল নোট উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ৮৫টি অভিযান চালিয়েছে র্যাব। অভিযানে ১ হাজার ৭৫১ জন জাল নোট উৎপাদক ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা হয় ১ হাজার ৩২টি। অভিযানে জাল নোট তৈরিতে ব্যবহূত কম্পিউটার ও বিভিন্ন সরঞ্জামসহ মোট ৯ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশি জাল নোট উদ্ধার করা হয়। দেশীয় জাল নোটের পাশাপাশি বাহিনীটি বিপুল পরিমাণ বিদেশি জাল নোটও উদ্ধার করে।

এলিট ফোর্স র‍্যাবের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৮ লাখ ৩৮ হাজার ভারতীয় রূপি, ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯২ ইউএস ডলার, ৪৭ হাজার ইউরো, ১৫ হাজার ১৮০ সউদী রিয়াল, ইরাকি দিনার ১৫ হাজার, মিয়ানমারের কোয়াট ২ লাখ, মালয়েশিয়ান রিংগিত ৩ হাজার ৪৫১ হাজার, পাকিস্তানি রুপি, ও তুরস্কের আড়াই লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য দেশের আরো ৪ লাখ ১৬ হাজার ৯১৭ টাকার সমমূল্যের জাল নোট উদ্ধার করে র‍্যাব।

সূত্র আরো জানায়, শুধু বাংলাদেশি নয়, ইতোপূর্বে জাল নোট কারবারে জড়িত অনেক বিদেশী নাগরিককেও আটক করা হয়েছে। তাদের কেউ সরাসরি উৎপাদন, কেউ বাজারজাত প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। রাজধানীর জাল নোটচক্রের প্রশিক্ষিত মূল হোতাদের রয়েছে অত্যাধুনিক মেশিন ও যন্ত্রপাতি। তারা বিভিন্ন ধাপে জাল নোট উৎপাদন থেকে বাজারজাত প্রক্রিয়া মনিটরিং করে। জাল নোট কারবারে যুক্ত সদস্যদের বলা হয় কোম্পানি। কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি কোম্পানি গঠিত। তারা কয়েকটি ধাপে কাজ করে। তার মধ্যে প্রথম কাজ হলো- ঈদের আগে ব্যাংকগুলো নতুন নোট ছাড়লে সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ করা। পরবর্তীতে ওসব নোটের হুবহু জাল নোট তৈরি করা। ওসব নোট পাইকারি ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়চক্রের দ্বিতীয় সারির লোকেরা। ওই ক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি হয় ৮/১০ হাজার টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে ১২/১৫ হাজার টাকায়। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি ১ লাখ জাল নোট মাঠ পর্যায়ের এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে ১৮/২০ হাজার টাকা করে। মূলত জাল নোটের নির্দিষ্ট কোনো বাজার মূল্য নেই। এটি নির্ভর করে কাগজ ও উৎপাদনের মানের ওপরে। কাগজের মান ভালো হলে দাম বাড়ে। আর কাগজের মান তুলনামূলক মাঝারি ধরনের হলে দামও কমতে থাকে।

এ প্রসঙ্গে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বিভিন্ন সময়ে জাল নোট কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক, মেশিন ও সরঞ্জাম উদ্ধার এবং তাদের বহু আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই জামিনে বেরিয়ে এসে তারা একই ব্যবসা শুরু করে। যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এবং কারাগার থেকে মুক্তির পর তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা গেলে জাল নোটচক্রকে নির্মূল করা সম্ভব।

একই প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হাফিজ আল আসাদ জানান, ঈদের আগে জাল নোট কারবারিদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। সেজন্য অভিযানও চলে বেশি। জাল নোট কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চললে ঝুঁকি অনেকটা দূর করা সম্ভব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads