• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
স্বপ্নজয়ী তরুণ শাকিলের গল্প

সংগৃহীত ছবি

ব্যবসার খবর

স্বপ্নজয়ী তরুণ শাকিলের গল্প

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শাকিল আহমেদ। একজন স্বপ্নবাজ তরুণ। ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করলেন ২০১০ সালে। তারপর নতুন একটি ফুটওয়্যার কোম্পানিতে যোগ দিলেন। প্রতিষ্ঠানটিতে সহকারী ব্যবস্থাপক (উৎপাদন)-এর দায়িত্ব পেলেন। তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলেন। এর মধ্যে জাহাঙ্গীনগরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। পরে একটি কোম্পানির ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র দেড় বছরের মাথায় ঐ প্রতিষ্ঠানে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এভাবে তার চাকরি জীবনে পেরিয়ে গেল ১০ বছর। ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা হলো। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চাকরি ছেড়ে দিলেও চাকরি তাকে খাটিয়ে নিল ২০২০-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

চাকরি থেকে বেরিয়ে শাকিল আহমেদ দেখলেন পৃথিবীতে প্যান্ডামিক করোনা আঘাত হেনেছে। থমকে গেল অর্থনীতির চাকা। তরুণ ভীত হলেন না। চিন্তা করলেন এখন আর চাকরি নয়, তিনি তার নিজ প্রতিভা ও মেধা, অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের যে স্থানীয় ফুটওয়্যার বাজার সেখানে উৎপাদন শুরু করবেন নিজ উদ্যোগে। যেমনই চিন্তা তেমনই কাজ। ১ লক্ষ টাকা হ্যান্ড ক্যাশ, মনের মতো করে ২০টি ডিজাইন তৈরি করে ফেললেন তরুণ। তার মধ্য থেকে ১০টিকে চূড়ান্ত মনোনীত করলেন। এরপর উৎপাদনে গেলেন একবুক আশা নিয়ে। ২ মাস চলল নিরন্তর গবেষণা। শাকিলের মতে, ফিটিং একটি লেদার প্রোডাক্টের প্রথম শর্ত। এছাড়া ইলেক্ট্রোফুট অ্যানাটমি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ম্যাটেরিয়াল নির্বাচন। আপার ম্যাটেরিয়াল ও বটম ম্যাটোরিয়াল এমন হবে সেটা এক জোড়া হোক কিংবা ১০০ জোড়া উৎপাদনের পর পরই গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আপার পার্ট হাই গ্রেডেড লেদার এবং বটম পার্ট হলো থার্মোপ্লাস্টিক রাবার এবং অত্যন্ত উন্নত মানের রাবার দিয়ে। এবার জুতার গুণগত মান নিয়ে কাজ শুরু করেন শাকিল। এবার চূড়ান্ত প্রোডাকশন। শাকিলের ডিজাইনের জুতা উৎপাদন করতে সম্মত হলো ২টি ফ্যাক্টরি। শুরু হলো উৎপাদন। একটানা ২০ দিন। শুধু কাজ আর কাজ। নিবিড়ভাবে সময় দিলেন এই উদ্যোক্তা। প্রথমে জুতা তৈরিতে ‘র’ ম্যাটেরিয়াল দেওয়া থেকে উৎপাদন পর্যন্ত উদ্যোক্তা পেলেন তার প্রথম প্রোডাকশনে। এ যেন স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে পা দিলেন শাকিল। প্রথম প্রোডাকশন পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়েন। জন্ম হলো কুরিয়াম ব্র্যান্ডের। ল্যাটিন শব্দ কুরিয়াম। যার অর্থ হলো চামড়া। প্রথম ১০টি ডিজাইন ঐ (কুরিয়াম) পেজে দেওয়্যার পর ভীষণ সাড়া ফেলে। তখন বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব করোনায় ধুঁকছে। সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলার পর উদ্যোক্তা তার উৎপাদন বাড়িয়ে দিলেন। উৎপাদনের মাত্র ১ মাসের মধ্যে প্রথম ৫০০ জোড়ার অর্ডার পেলেন। ২য় ধাপে ৮০০ জোড়া, ঈদের সময় ১০০০ জোড়ায় গিয়ে নামল উদ্যোক্তার প্রোডাক্ট। সব বিক্রি হয়ে গেল। শাকিল প্রথম দুই ডিজাইন মোকাসিন ও লোফার নিয়ে কাজ করেন। উদ্যোক্তা তার অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন দৃঢ়ভাবে দেখতে শুরু করেন। সেসময় তিনি তার গাড়ি দিয়ে ঢাকায় নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেলিভারি করলেন। ঢাকার বাইরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রোডাক্ট সরবরাহ করতেন। সুনাম ছড়িয়ে যায় কুরিয়ামের। এগিয়ে যেতে থাকেন শাকিল । দেশের ক্রেতাদের আন্তর্জাতিক মানের ফুটওয়্যার সরবরাহ করা শাকিল আহমেদের মূল উদ্দেশ্য। মাত্র অর্ধেক বছরে ব্যবসার মূল্যমান ১৫ লক্ষ টাকা। শাকিল বলেন, ‘১০ বছর চাকরি করেছি। আমি চায়নায় গিয়েছিলাম। সেখানে ফুটওয়্যার সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। বিশ্বের ফুটওয়্যার নিয়ে পড়াশোনা করতাম। আমার নিজের চেষ্টাটা আগেই ছিল কবে আমি নিজে উদ্যোক্তা হব। আমাদের জনসংখ্যা এমনিতেই বেশি। এখানের মার্কেট প্রায় ২০০০ বিলিয়ন টাকার মার্কেট। আমি যদি এক্সপোর্ট মার্কেট নিয়ে চিন্তা করি তাহলে অনেক টাকার ব্যাপার। লোকাল মার্কেট নিয়ে কাজ করলে একটা বড় সুযোগ হবে। এভাবেই কাজ শুরু করি।

ব্যবসার প্রাথমিক মূলধনের ব্যাপারে শাকিল বলেন, ‘এই ফুটওয়্যার জগতের সবাই আমার পরিচিত। আমি যখন প্রথম কাজ শুরু করি তখন আমার যে ‘র’ ম্যাটেরিয়াল লেগেছিল প্রথমেই টাকা দিতে হয়নি। প্রোডাক্ট বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। সবার কাছ থেকেই সহযোগিতা পেয়েছি। আমার কাছে টাকার বিষয়টি কখনোই মুখ্য ছিল না। আমার কাছে মূল বিষয় ছিল আমি কি করতে চাচ্ছি। আমি যে ফ্যাক্টরিতেই গিয়েছি তারাই আমার উৎপাদন করে দিয়েছে।

এ পর্যন্ত কেমন সাড়া পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে শাকিল বলেন, ‘আমার প্রোডাক্ট ক্রেতারা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। এমনও হয় অনেক দূর থেকে ১ জোড়া জুতো নেওয়্যার জন্য আমার অফিসে কাস্টমার এসে এসে ৩-৪ জোড়া নিয়ে গেছে।’

শাকিল স্বপ্ন দেখেন একটা ভালো জায়গা যাবেন। শাকিলের কোনো দিন বন্ধ অফ নেই। শাকিল ২৪ ঘণ্টাই নিজের পরিশ্রম দিতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশে ফুটওয়্যার শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শাকিল বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক কিছু করা সম্ভব। শু সবাই পরে। যখন আমি বড় বড় উৎপাদনে যাব তখন আমার দেশে ম্যানপাওয়্যার কাজে লাগাতে পারব। আমি আমার পণ্যের মান দিয়ে বাংলাদেশকে  চেনাতে চাই। বিদেশি জুতার যে কোয়ালিটি তার থেকে আরো ভালো কিছু দেওয়্যার চেষ্টা করছি। এছাড়া আমি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমার প্রোডাক্ট পাঠাতে চাই।’

তরুণদের ক্ষেত্রে শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আসলে তরুণদের প্রথম চিন্তা করতে হবে, সে কি করতে যাচ্ছে। প্রোডাক্ট কী, কাস্টমার কী চাচ্ছে, ঐ দ্রব্যের জন্য ‘র’ ম্যাটেরিয়াল কোনটা ভালো, কোথায় পাওয়া যাবে এসব ধারণা বা বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আমাদের দেশের মানুষকে যদি বোঝানো যায় আমি কোয়ালিটি প্রোডাক্ট বানাই, আমি দেশের ছেলে, আপনাদের ভালো কিছু দিতে চাই, করতে চাই সবাই ওয়েলকাম জানাবে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে শাকিল বলেন, ‘আমার ব্র্যান্ডকে স্টাবলিস্ট করে ভবিষ্যতে নিজে একটি ফ্যাক্টরি দেব। আমার প্রোডাক্ট শুধু দেশেই নয়, আর্ন্তজাতিকভাবেও সমাদৃত হবে। এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads