• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ব্যবসার খবর

এনবিআরের গবেষণা

বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ে ব্যয় বিশ্বে সবচেয়ে কম

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ে ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। প্রতি ১০০ টাকা রাজস্ব আহরণে ব্যয় হয় ২২ পয়সা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ-২০২১ উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে এনবিআরের ভ্যাট সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আরো বিনিয়োগ করলে বিফলে যাবে না, রিটার্ন আসবে।

এনবিআরের পরিসংখ্যানে বলা হয়, স্বাধীনতার পর ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ১৬৬ কোটি টাকার বেশি। গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। পঞ্চশ বছরে দেশের রাজস্ব আহরণ ১৫৮৩ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অর্থনীতিবিদসহ রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব বোর্ডের দক্ষতা বৃদ্ধি, ভ্যাট, কাস্টমস ও আয়করসহ পুরো রাজস্ব বিভাগকে অটোমেশনের আওতায় আনা এবং দুর্নীতি কমাতে পারলে আদায় আরো বহুগুণ বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে রাজস্ব আদায় ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। সে দেশে ১০০ টাকা রাজস্ব আদায়ে ব্যয় হয় ৬০ পয়সা। থাইল্যান্ডে ৭১ পয়সা।

উন্নত দেশগুলোতে এই ব্যয় আরও বেশি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জাপানে ১০০ টাকা রাজস্ব আদায়ে খরচ পড়ে এক টাকা ৭০ পয়সা, যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় আট গুণ বেশি। জার্মানিতে ব্যয় হয় দেড় টাকা। এ ছাড়া মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে খরচ হয় যথাক্রমে ১ টাকা ও ৭৯ পয়সা।

রাজস্ব আহরণে কম খরচ হলেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বাংলাদেশে আদায় বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। এমনকি ছোট অর্থনীতির দেশ নেপালের চেয়েও কম।

চলতি বাজার মূল্যে বাংলাদেশের জিডিপির আকার বর্তমানে ৩০ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয় মাত্র ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের অর্থনীতির আকারের সঙ্গে রাজস্ব আহরণ মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অর্থনীতির আকার অনুযায়ী বছরে রাজস্ব আদায় হওয়া উচিত কমপক্ষে ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব খাতে ফাঁকির প্রবণতা খুবই বেশি।

তিনি আরো বলেন, রাজস্ব বোর্ডের পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ভ্যাট, কাস্টমস ও আয়কর বিভাগকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এসব সংস্কার বাস্তবায়িত হলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় সম্ভব। এর ফলে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশে কর-রাজস্ব অনুপাত ১০ শতাংশ। এ অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন।

এর পেছনে দুর্বল কর-সংস্কৃতিকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাংলাদেশে কর অব্যাহতি সুবিধা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সব সময়ই বলে আসছে বাংলাদেশে কর অব্যাহতি সুবিধা বেশি। আদায় বাড়াতে অব্যাহতি কমানোর জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে সংস্থাটি।

কর অব্যাহতি, হ্রাসকৃত করহার ও কর রেয়াতের কারণে প্রতি বছর কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয় সমপ্রতি তার একটি হিসাব দিয়েছে এনবিআর।

তাতে দেখা যায়, এসব সুবিধা দেয়ার ফলে বছরে জিডিপির ২ দশমিক ২৮ শতাংশ চলে যায়।

ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যার বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কর অব্যাহতি প্রয়োজন আছে। কারণ, এর সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান জড়িত। তবে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads