• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
আমাদের আম অর্থনীতি

সংগৃহীত ছবি

ব্যবসার খবর

আমাদের আম অর্থনীতি

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ০৮ জুন ২০২২

ফলের মধ্যে দেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জনপ্রিয় ফলের রাজা আম। কাঁচা ও পাকা আম ছাড়াও ফ্রুট ড্রিংকস, জুস, আচার, চাটনি, আমসত্ত্ব, চকোলেটসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরিতে আমের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে আম ও আমভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে আমের ফলন বাড়ছে। দেশেও ধারাবাহিকভাবে ফল উৎপাদনের শীর্ষে থাকছে আম। বর্তমানে দেশে আম এবং প্রক্রিয়াজাত আমভিত্তিক পণ্যের বাজার প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে আম উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ টন, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ১১ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৫ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ১৪ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর ১ লাখ ৭৪ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৩ টন আম উৎপাদিত হয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছরে সর্বোচ্চ পরিমাণ আম উৎপাদিত হয়েছে। জানা গেছে, দেশে আম উৎপাদনে প্রথম চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং দ্বিতীয় অবস্থানে সাতক্ষীরা জেলা। আম উৎপাদন বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টরা এখন ফলটির হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছেন। অন্যদিকে ফলটি উৎপাদনে এখন প্রক্রিয়াজাত শিল্পের সংশ্লিষ্টতাও বাড়ছে। পৃথিবীতে আম উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে আমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমের চাষ বেড়েছে অনেক গুণ। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই আমের ফলন হলেও রাজশাহীর আমের আছে অনেক সুনাম আছে।

এই মৌসুমি ফলকে কেন্দ্র করে দেশের কয়েক লাখ মানুষেরও কর্মসংস্থান হয়। মৌসুমে আমকেন্দ্রিক পরিবহন ব্যবস্থাও থাকে বেশ জমজমাট। বাংলাদেশে শতাধিক প্রজাতির আম রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টির মতো প্রজাতি টিকে আছে। এসব প্রজাতির মধ্যে ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরসাপাতি (গোপালভোগ), হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ, মোহনভোগ ও বোম্বাই এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এছাড়া দেশে গবেষণার ভিত্তিতে উদ্ভাবিত উন্নত জাতের আম হলো বারি-১, বারি-২, বারি-৩ ও বারি-৪। এখন নতুন যোগ হয়েছে আম্রপালি ও মল্লিকা। দিনাজপুরের সূর্যপুরীও বিখ্যাত হচ্ছে। দেশে এখন প্রায় এক লাখ একর জমিতে আম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও পার্বত্য চট্টগ্রামভুক্ত জেলায়। দেশের প্রায় সব জেলায়ই আম উৎপাদন হয়। উপকূলীয় লবণাক্ত ভূমিতেও এখন মিষ্টি আমের চাষ হচ্ছে। পার্বত্য জেলার জুম চাষ এলাকায়ও এখন উন্নত জাতের আম ফলছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের হিসাবে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮০০ জাতের আম চাষের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ১১টি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ২১টি আমের জাত উদ্ভাবন করেছেন। উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে আম্রপালি সবচেয়ে জনপ্রিয়। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেন, উৎপাদিত আমের ১০ শতাংশ আম স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এটা পুরোটা করতে পারলে এক আম দিয়েই দেশের অর্থনীতি পাল্টে দেওয়া যাবে।

আম রপ্তানির সম্ভাবনা

বাংলাদেশের আমের সুনাম আছে বিশ্বে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, বাংলাদেশে যখন আম পাকে তখন বিশ্ববাজারে আর কোনো আম পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থান উপযোগী হওয়ায় এবং শ্রমিকের সহজলভ্যতা থাকায় গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট আম উৎপাদন সম্ভব। উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ও পরিচর্যার মাধ্যমে রপ্তানির উপযোগী আমের উৎপাদন বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। যদিও প্রবাসী বাংলাদেশীরাই প্রধানত সব আমের প্রধান ক্রেতা। বাংলাদেশ থেকে আম যেসব দেশে রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, সৌদিআরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান। বাংলাদেশ থেকে ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর এবং আশ্বিনা জাতের আম রপ্তানি হচ্ছে। তবে বারি আম-২ এবং বারি আম-৭ বিদেশে রপ্তানির জন্য সম্ভাবনাময় জাত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমের জুস এখন রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা মেটাতে ফলটি প্রক্রিয়াজাত করে জুস তৈরিতে সচেষ্ট রয়েছেন উদ্যোক্তারা। দেশে অভ্যন্তরে ও রফতানি মিলে জুসের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার। জুসের বাজারে প্রাণ, আকিজ, একমি, সজীব, ট্রান্সকম ও পারটেক্স গ্রুপ এগিয়ে আছে। জুসের বাজারে প্রাণ- গ্রুপের ব্র্যান্ড ফ্রুটো, আকিজের ফ্রুটিকা, একমি গ্রুপের একমি, সজীব গ্রুপের সেজান, ট্রান্সকমের স্লাইস ও পারটেক্স গ্রুপের ড্যানিশ প্রভৃতি। বাংলাদেশের জুস রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ আরব আমিরাত, আবুধাবি, দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান ছাড়াও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ ইতালি, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বাজারে। আশা জাগানিয়া খবরটি হলো- বাংলাদেশের ল্যাংড়া ও আম্রপলি আম যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে। এফএও’র মতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আম রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনাটি হলো- বাংলাদেশের আম যখন পাকে তখন বিশ্ববাজারে অন্য কোনো দেশের আম আসেনা। যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা বিশ্বের অন্যতম সুস্বাদু ফল হিসেবে বাংলাদেশের আমকে বেশ পছন্দ করছে। গুণে ও মানে অতুলনীয় হওয়ায় বিশ্ববাজারে দিন দিন বাড়ছে বাংলাদেশের আমের চাহিদা। রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিশ্বখ্যাত ওয়ালমার্ট কোম্পানী এই আম রপ্তানি করবে জার্মান, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। এ কারণে সরকার আম উৎপাদনে মাঠ পর্যায তদারকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকমান বজায় রেখে উৎপাদন করতে পারলে বছরে ১ হাজার টন আম রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।

রপ্তানিযোগ্য আমের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় হতে পারে :

- আমের ফলন-প্রাপ্তিকাল বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
- রেল সড়কের দুই ধার, মহাসড়কের দুই ধার এবং স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আম গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া।
- বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আমের মৌসুমে আম উৎপাদনকারী জেলাগুলো পরিদর্শন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- জৈবপ্রযুক্তি নির্ভর আম উৎপাদনে উৎসাহিত করা।
- আম সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্যাকিং ও পরিবহন বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- যেসব এলাকায় আমের ফলন বেশি হয়, সেসব স্থানে আমভিত্তিক শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া।
- আম রপ্তানি করার জন্য প্যাকেজিং সামগ্রির ওপর ভর্তুকি প্রদান করা।
- ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার না করে আম পাকানো ও সংরক্ষণকাল বৃদ্ধির উপায় বের করা।
- আম উৎপাদন, আম সরবরাহ এবং আম রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করা।
- কৃষি সম্প্রসারণকে কৃষি গবেষণার সঙ্গে সমন্বয় করে আমচাষি-ব্যবসায়ীদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
- চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় পাহাড়ি অঞ্চলে আম চাষের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া।
- পরিবহন বিমানের ব্যবস্থা ও ভাড়ার হার সহনীয় রাখা।
- আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে আমের আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা।
- আম সংরক্ষণের জন্য কোল্ডস্টোরেজ তৈরি, হিমায়িত পরিবহন, দ্রুত স্থানান্তরকরণ, বাছাই, প্যাকেজিং এবং গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

আম শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের প্রায় সবক’টি জেলাতেই কমবেশি আম উৎপাদন হয়। সারা দেশে উল্লেখিত পরিমাণ আম উৎপন্ন হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে। সুতরাং এত বিপুল পরিমাণ জমিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনশক্তি সম্পৃক্ত থাকে। বাগান চাষ ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক ছাড়াও শুধু ফলনের মৌসুমেই অর্থাৎ বছরের প্রায় ৪-৫ মাস প্রচুর লোক সারা দেশে আম সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে। এক্ষেত্রে জনশক্তির কর্মসংস্থান হতে পারে :

১. আম চাষ ও পরিচর্যার মাধ্যমে;
২. সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে;
৩. আম ও আমজাত দ্রব্যাদি পরিবহনের মাধ্যমে;
৪. আম ও আমজাত পণ্য বাজারজাতকরণের মাধ্যমে।


সম্ভাবনার আম গৌরমতি

বাংলাদেশে সাধারণত জুলাই মাসের মধ্যে আমের রাজত্ব শেষ হয়ে গেলেও হিমসাগর ও আশ্বিনা জাতের কিছু আম আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সোনামসজিদ এলাকার শিয়ালমারা গ্রামের এক আম বাগানে নতুন জাতের আমের সন্ধান মেলে, যা সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই পাওয়া যায়। এই আম সুস্বাদু, কড়া মিষ্টি ও খুব পুষ্টিকর। মৌসুমের শেষে পাকে বলে এর দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। নতুন এই নাবি জাতের আমের নাম দেওয়া হয়েছে গৌরমতি। তৎকালীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (উদ্যান) মঞ্জুরুল হক এ আমের গৌরমতি নামকরণ করেন। প্রাচীন জনপদ ‘গৌড়’ ও রত্ন মূল্যের সঙ্গে তুলনায় ‘মতি’ এ দুইয়ের সমন্বয়ে ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন জাতের এ আমের নাম দেওয়া হয় গৌরমতি। এরপর থেকে এ জাতের আমের চারা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আশ্বিনা ও ল্যাংড়া এ দুই জাতের আমের মুকুলে প্রাকৃতিক পরাগায়নের ফলে নতুন এই জাতের উৎপত্তি হয়েছে। এর মিষ্টতা (টিএসএস) ২১.৭৫ থেকে ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশের অন্য সুস্বাদু আমের ভক্ষণযোগ্য অংশ যেখানে ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ, সেখানে গৌরমতি আমের খাওয়ার যোগ্য অংশ প্রায় ৯৩ শতাংশ। বর্তমানে দেশের ২১টি হর্টিকালচারের মাধ্যমে দেশব্যাপী এ আমের চারা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্যে জানা যায়, গৌরমতি আমের চারার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় কৃষক সহজেই এ জাতের আমের বাগান করতে পারছেন না। যদি চারার উৎপাদন বাড়িয়ে দাম কমানো যায়, তাহলে গৌরমতি জাতের আমের বাগান করে অনেক কৃষক সহজেই লাভবান ও স্বাবলম্বী হতে পারেন।

প্রয়োজন আমভিত্তিক শিল্প উদ্যোগ

আমভিত্তিক শিল্প স্থাপনে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত, পাকিস্তান এমনকি সৌদি আরবও আমজাত পণ্য নিয়ে গবেষণা করে আমভিত্তিক শিল্পের ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। দেখা গেছে বাংলাদেশের বাজার ওইসব দেশের আমজাত পণ্যে সয়লাব। তাই বাংলাদেশও আমের রস, আমের মোরব্বা, আমের স্কোয়াশ, আমের জেলি, আমের পাল্প, আমের ট্রফি, আমের মধু, আমসত্ত্ব, আমের বরফি, আমের আচার, আমের জ্যাম, আমের পাউডার প্রভৃতি আমভিত্তিক খাদ্যদ্রব্য তৈরির উদ্যোগ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের প্রধান আম উৎপাদনকারী উত্তরাঞ্চলের তিনটি জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী এবং নাটোর ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলাসহ অন্যান্য জেলায়ও এখন ব্যাপক হারে আম চাষ হচ্ছে। তাদের মতে, দেশে আমের এই মৌসুম খুবই অল্প সময়ের জন্য। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা এবং রফতানির সুযোগ কম থাকায় চাষিরা আমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে আম চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। এর সুফল ঘরে তুলতে ব্যাপক প্রচার চালানো দরকার। এজন্য প্রথমে আমাদের স্থানীয় বাজারে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার আমভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠায় বেসরকারি সেক্টর যাতে এগিয়ে আসতে পারে, এ জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আম থেকে জুস এবং অন্যান্য আইটেমের মতো খাদ্য বহুমুখীকরণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

জাদুভোগ আম

ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে জাদুকরী এই আম চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাজীপুর জেলার মৌচাক হর্টিকালচার সেন্টারে জাদুকরী এই আমের জাতের ৩০০ চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারেও চলছে এই আম সম্প্রসারণের নানা কার্যক্রম। জানা যায়, ভোলাহাট উপজেলার আবদুস সালাম ১৪-১৫ বছর আগে মালদহ থেকে এই জাতের চারা এনে তার বাড়ির আঙিনায় লাগান। গাছটিতে বেশ কয়েক বছর ধরে আম ধরছে। এ খবর পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের হর্টিকালচারিস্টরা বিগত দুই বছর ধরে আমটির ওপর গবেষণা চালিয়ে এর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

জানা যায়, ভোলাহাটের ৪০০ বছর আগের নাম ছিল জাদু নগর। এখনো এখানকার একটি গ্রামের নাম রয়েছে জাদু নগর। তা ছাড়া খাওয়ার সঙ্গে ভোগের সম্পর্ক রয়েছে। এলাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ভোগ মিলে এর নাম রাখা হয়েছে জাদুভোগ আম।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads