• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মামলা দিয়ে কাউকে আটকে রেখে নির্বাচন করাটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয় -আবদুল মান্নান

আবদুল মান্নান

মাসুদ মিলন

ফিচার

মামলা দিয়ে কাউকে আটকে রেখে নির্বাচন করাটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয় -আবদুল মান্নান

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৮

আবদুল মান্নান। ১৯৯১ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন। ওই বছরেই সংসদীয় আসন তৎকালীন (১৮১) ঢাকা-২ থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন। এই আসন থেকে তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বের পাশাপাশি বস্ত্র মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে ছিলেন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতির পাশাপাশি লেখালেখিতেও সময় ব্যয় করেন তিনি। ঢাকা-১ আসনের নির্বাচন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ  উল আলম সোহান

বাংলাদেশের খবর : আগামী সংসদ নির্বাচনে আপনি কি নির্বাচন করবেন?

আবদুল মান্নান : নির্বাচন হলে অবশ্যই করব।

বাংলাদেশের খবর : নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাকের দাবি হচ্ছে, বিএনপি থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে আপনি অসুস্থ বলে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

আবদুল মান্নান : মনোনয়ন তো বোর্ড দেবে। বিষয়টি ম্যাডাম দেখবেন। বোর্ডের সিদ্ধান্তের আগে কেউ প্রকাশ করতে পারে না— কে মনোনয়ন পাবেন। পার্টি উইল ডিসাইড। পার্টির সিদ্ধান্তই ফাইনাল। আর শারীরিক অবস্থার কথা বলছেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় আমি তাদের থেকে বেশি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি। আমার শারীরিক অবস্থার সার্টিফিকেট দেবেন ডাক্তার। আশফাক, জুবলি এরা তো ডাক্তার না। জুবলির তো কোনো দলই নাই।

বাংলাদেশের খবর : দোহার-নবাবগঞ্জ নিয়ে ঢাকা-১ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম। তিনি এলাকার কোনো উন্নয়ন করতে পেরেছেন? এলাকার জনগণের সমস্যাগুলো কী?

আবদুল মান্নান : সেটা তো জনগণ সিদ্ধান্ত দেবে। জনগণ জানে কে কী করেছে। এ ছাড়া আপনারা এলাকায় গেলেই বুঝতে পারবেন কী উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে কোনো কিছুই ঠিক নেই।  

বাংলাদেশের খবর : দলীয় চেয়ারপারসন এখন কারান্তরীণ আছেন। তারেক রহমানও আছেন লন্ডনে। এ অবস্থায় বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে বলে মনে করেন?

আবদুল মান্নান : একটা সহজ কথা বলি। আমরা তো চাই একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সব দলের জন্যই। মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে আটকে রেখে নির্বাচন করাটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয়। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এরা রাজনৈতিক মামলাকে ক্রিমিনাল মামলা সাজাচ্ছে। এসব মামলা থেকে তাদের মুক্ত করে দেওয়া উচিত এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়া উচিত- যাতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ হয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়। নট অনলি বিএনপি, সব পার্টির জন্যই যেন এটা প্রযোজ্য হয়। সেই হিসেবে আমাদের নেত্রীর তো আটকা থাকারই কথা নয়। কেউ যদি মনে করে আমাদের নেত্রীকে আটকে রাখলেই তাদের দল জিতে যাবে, তা পারবে না ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশের খবর : বিএনপির গতানুগতিক আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

আবদুল মান্নান : সরকার তো না। সরকার তো তার দলীয় কর্মীদের দিয়ে আমাদের আঘাত করে না। এক্ষেত্রে তো তারা পুলিশকে ব্যবহার করছে, আমাদের নেতাকর্মীদের আটক করছে। ল’ অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট দুটো দিয়েই খেলছে তারা। কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা সাংগঠনিকভাবে এগোতে পারি। আমরা সংবিধান অনুসারে আগাতে পারি। একটা সরকারের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিরুদ্ধে তো লড়তে পারি না।

বাংলাদেশের খবর : সরকার বলছে, বর্তমান সরকার এবং সরকার নির্ধারিত নির্বাচন কমিশনের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। সে অনুযায়ী তারা সংবিধানও সংশোধন করেছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি কি এই ওয়েতে সাকসেসফুল হতে পারবে বলে মনে করেন?

আবদুল মান্নান : সংবিধানে যত কিছুই করুক, একটা দল হিসেবে তারা কিছুই করতে পারবে না। আমরা বিষয়টা ডিসাইড করব। আশা করি জনগণ আমাদের পক্ষে আছে। এটার সিদ্ধান্ত জনগণই দেবে আগামী নির্বাচনে। যদি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়, জনগণ ব্যালট পেপারে সিল দিতে পারে, নির্বাচন কমিশন যদি ওই দলের পক্ষ নিয়ে কিছু করে, সেন্টারে পোলিং এজেন্ট থাকতে না দেয়— যেমনটি বরিশাল ও রাজশাহীতে হয়েছে, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কী করে? সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে নির্বাচন দিয়ে লাভ কী?

বাংলাদেশের খবর : তারা তো বলছে, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে আপনাদের দলীয় নেত্রী যদি মুক্ত না হন, তাহলে কি আপনারা নির্বাচনে অংশ নেবেন? 

আবদুল মান্নান : আমি তো কথাটা বললাম। একটা উদাহরণ দিই। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা হেরে গিয়েছিলেন মীরজাফরদের জন্য। সরকারও চাচ্ছে বিএনপির মধ্যে একটা মীরজাফর সৃষ্টি করতে; কিন্তু সেই সুযোগ আমরা সৃষ্টি হতে দেব না। ১৮৫৭ সালে সিপাহি যুদ্ধে ভারতবাসী হেরে গিয়েছিল; কারণ তখন কোনো একক নেতৃত্ব ছিল না। এটা ওই আমলে। আর এখন যদি সরকার মনে করে সিপাহি যুদ্ধের মতো আমাদের নেতৃত্বহীন করে জিতে যাবে, তা হবে না। কারণ জনগণ আমাদের পক্ষে আছে। এমনটা এখন আর সম্ভব নয়। কারণ জনগণ এখন অনেক সচেতন। তারা বিষয়গুলো বুঝবে এবং সঠিক স্থানে নিজেদের ভোট দেবে। আমি নিশ্চয়ই বোঝাতে পেরেছি আপনাকে।

কারণ নেতৃত্ববিহীন কোনো নির্বাচন হতে পারে না। কাজেই তারা কী চাইল না চাইল, তাতে কিছু যায় আসে না। জনগণ এর সমুচিত জবাব দেবে।

বাংলাদেশের খবর : দোহার-নবাবগঞ্জবাসীর কাছে আগামী নির্বাচনে আপনার প্রত্যাশা কী?

আবদুল মান্নান : তারা নির্বাচনে সুন্দরভাবে ভোট দিতে আসুক— সেটাই আমি চাই। সেই পরিবেশ যেন সৃষ্টি হয়। এখানে প্রার্থী বেশি, সবাই জানেন। এক্ষেত্রে আমার অসুস্থতা নিয়ে যারা কথা বলছে, তাদের কেউ তো ডাক্তার নয়। আমি অসুস্থ হলে সেটা ডাক্তার বলবে। আমার মেয়ে ব্যারিস্টার, তারও এই আসনে নির্বাচন করার অধিকার আছে। বলতে চাচ্ছি, গণতান্ত্রিক পরিবেশে যার খুশি সে প্রার্থী হবে। এক্ষেত্রে দল সিদ্ধান্ত নেবে কাকে মনোনয়ন দিলে সে জয়ী হতে পারবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তাকে সমর্থন করব। কেউ যদি অগ্রিম কথা বলে, তা তো ঠিক নয়। কেউ যদি আগেই বলে যে সে মনোনয়ন পাচ্ছে, তাহলে আর মনোনয়ন বোর্ডের দরকার কী? এ ধরনের কথা যারা বলে তারা অর্বাচীন।

বাংলাদেশের খবর : বর্তমানে ছাত্রদের আন্দোলন বিষয়ে আপনার মতামত কী?

আবদুল মান্নান : এই বাস-ট্রাকের অত্যাচারের কাছে আমরা সবাই জিম্মি। একের পর এক পথচারীর মৃত্যু হচ্ছে, কিন্তু চালকদের কিছুই হয় না। এটা শুধু ছাত্রদের দাবি নয়, এটা সমগ্র দেশবাসীর দাবি। এটা আমাদের প্রাণের দাবি। এই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads