• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত ২০৪ নং আসনে  বড় দুই দলের মর্যাদার লড়াই  (নারায়ণগঞ্জ-১, রূপগঞ্জ)

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত ২০৪ নং আসনে বড় দুই দলের মর্যাদার লড়াই (নারায়ণগঞ্জ-১, রূপগঞ্জ)

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ০৪ নভেম্বর ২০১৮

শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত ২০৪ নং আসনে

বড় দুই দলের মর্যাদার লড়াই

(নারায়ণগঞ্জ-১, রূপগঞ্জ)

 

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনটি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ২০৪ নং আসন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। আসনটি রূপগঞ্জ উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত এ আসনটিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুদলই ক্ষমতায় সমান আধিপত্য বিস্তার করে। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪টি নির্বাচনে দুইবার জয় পান বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আবদুল মতিন চৌধুরী। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আসনটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহ ও গোলাম দস্তগীর গাজী। এ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য শিল্পপতি গাজী গোলাম দস্তগীর (বীর প্রতীক), সাবেক সংসদ সদস্য কেএম সফিউল্লাহ, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক আবদুল হাই ভূঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাজাহান ভূঁইয়া, কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ রফিকুল ইসলাম এবং থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা। নির্বাচন বিষয়ে কথা বলার জন্য বর্তমান এমপির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপি সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু এবং থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন। এর মধ্যে কাজী মনিরুজ্জামান ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে টিকিট পেয়েও নৌকার প্রার্থীকে হারাতে পারেননি। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন রূপগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি মীর আনোয়ার হোসেন এবং থানা কমিটির সহ-সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ও সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় আসনটিতে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে হারানো আসনটি তরুণ নেতৃত্ব এলে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে আশাবাদী বিএনপির নেতারা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সাজানো হয়েছে এবারের খবরের কাগজে সংসদ। সার্বিক সহযোগিতায় সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন, পরিকল্পনা গ্রন্থনা ও সম্পাদনায় মো. আসিফ উল আলম সোহান

 

একনজরে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন

 

জাতীয় সংসদের আসন নং : ২০৪

 

অন্তর্ভুক্ত উপজেলা : এ আসনটি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

ভোটার সংখ্যা : ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯০ জন।

 

সাবেক এমপিদের নাম :

১৯৯৬ : কেএম সফিউল্লাহ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

২০০১ : আবদুল মতিন চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল

২০০৮ : গোলাম দস্তগীর গাজী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

২০১৪ : গোলাম দস্তগীর গাজী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

 

 

দেশে এমন কোনো পরিবেশ হয় নেই যে নির্বাচন করা যাবে না। তারা মিটিং মিছিল করছে, সবই করছে। তাই নির্বাচনও করবে : রফিকুল ইসলাম রফিক

 

আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক ১৯৬৮ সালের ২ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের নাওড়ায় সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে পুঁজি করে জীবনের নানা চড়াই-উতরাই শেষে প্রতিষ্ঠা করেছেন রংধনু গ্রুপ। আবাসন, অ্যাগ্রো ও বেভারেজ, রিসোর্ট, সুপার শপ, রিফুয়েলিংসহ ব্যাংক খাতেও বিনিয়োগ রয়েছে রংধনু গ্রুপের। এ ছাড়া তরুণ এই শিল্পোদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠা করেছেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংধনু ফাউন্ডেশন, আর এম ফাউন্ডেশন, মসজিদ, স্কুল ও ক্লাব। বর্তমানে তিনি রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। স্বাধীনতার সপক্ষের সৈনিক রফিকুল ইসলাম আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় নিজের অবস্থান এবং নির্বাচন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান, যা এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো :

বাংলাদেশের খবর : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনি মনোনয়ন চাইছেন?

রফিকুল ইসলাম রফিক : আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইব। আমার কাজ, আমার নিষ্ঠা এবং আওয়ামী লীগের জন্য মন থেকে কিছু করার যে মানসিকতা আছে, সেটিকে বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমি মনোনয়ন চাইব। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি কতটা কাজ করতে পেরেছি, সেটির মূল্যায়ন থেকেই আমি কাজ করে যেতে চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য নিরলস কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে। দেশের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রাকে চলমান রাখতে, প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে— নেত্রীর একজন সামান্য কর্মী হিসেবে আমার যা করতে হয় ইনশাল্লাহ করে যাব। কোনো একজন ব্যক্তির কুকর্মের প্রভাব নেত্রীর এত উন্নয়নকে ম্লান করে দেবে— এটি অন্তত রূপগঞ্জে আমি হতে দিতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষ এখন যে উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে সেগুলোকে চলমান রাখতে হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। আর তাই শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করার ইচ্ছে নিয়েই আমি নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) থেকে মনোনয়ন চাইব।

বাংলাদেশের খবর : আপনি কেন মনে করছেন যে জনগণ আপনাকে ভোট দেবে?

রফিকুল ইসলাম রফিক : দেখুন, আমি এই এলাকার সন্তান, এখানকার প্রতিটি মানুষ আমার পরিবারের সদস্যের মতো। এলাকার ছেলে হিসেবে সবাই আমাকে চেনে ও জানে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সারা দেশে যে উন্নয়ন করেছে, বিগত সময়গুলোতে এরকম কেউই করতে পারেনি। উন্নয়ন হয়েছে প্রতিটি সংসদীয় আসনেই। সেই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনেও হয়েছে। তারপরও এই এলাকার মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন? সেটা তো হওয়ার কথা নয়। মানুষ কেন এই এলাকায় পরিবর্তন চাইছে? গত ১০ বছরে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। জমি দখল হয়েছে, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি হয়েছে। রূপগঞ্জের আওয়ামী লীগকে বর্তমান সংসদ সদস্য গাজী সাহেব নিজের পরিবার লীগে পরিণত করেছেন। রূপগঞ্জের ত্যাগী ও প্রবীণ আওয়ামী লীগার এবং অঙ্গসংগঠনের ২ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই সুযোগে হাইব্রিড বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা ফায়দা লুটছে। কাজেই এলাকাবাসী পরিবর্তন চাইছেন এবং তাদের সবাই আমার সঙ্গে আছেন।

বাংলাদেশের খবর : এলাকার জন্য কী কাজ করবেন বা করছেন?

রফিকুল ইসলাম রফিক : যেহেতু এটা নিজের এলাকা, মনোনয়ন পাই বা না পাই, এমপি হই বা না হই— এলাকার জন্য ২৫ বছর যাবত কাজ করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও করব ইনশাল্লাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনোনয়ন না-ও দেন, এমপিও না হই— চেয়ারম্যান তো আছি নৌকামার্কা নিয়ে। কাজেই নৌকার জন্য, আওয়ামী লীগের আবার ক্ষমতায় আসার জন্য যা যা উন্নয়ন এলাকায় করা দরকার, তার সবই করে যাব ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশের খবর : বিগত ১০ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এ সময়ে আপনার এলাকায় উন্নয়নের চিত্র কীরকম?

রফিকুল ইসলাম রফিক : আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরে উন্নয়নের জোয়ার সারা দেশেই হয়েছে। আপনারা সবাই সেটি ভালো জানেন। কিন্তু রূপগঞ্জের উন্নয়ন বলতে বেশি হয়েছে এমপি সাহেবের পারিবারিক উন্নয়ন। তার স্ত্রী হাসিনা গাজীকে তারাব পৌরসভার মেয়র বানিয়েছেন। ছেলে পাপ্পা স্থানীয় ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করে। গাজী সাহেব চাচ্ছেন ছেলেকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানাতে। এবং রূপগঞ্জে যত স্কুল আছে, সবগুলোর সভাপতি তার ছেলে গোলাম মরতুজা পাপ্পা, ছেলের শাশুড়ি, ছেলের শ্বশুর, বাড়ির লোকজন— এরাই। আত্মীয়করণের চরম উদাহরণ এখন রূপগঞ্জ। রূপগঞ্জের আওয়ামী লীগকে তিনি গাজী লীগে পরিণত করেছেন। তার পিএস এমদাদ যুবলীগের নিয়ন্ত্রক, গত ১০ বছরে স্থানীয় অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে এলাকায় যার নাম শোনা যায়। আরেক পিএস হীরার রয়েছে অস্ত্রধারী বাহিনী। সাধারণ মানুষের জমি দখল করাই তার কাজ। বিএনপির সব হাইব্রিড নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগে ঢুকিয়ে দিয়েছে। গাজী সাহেবের এপিএস নাফিস হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান থানার ছাত্রদলের ক্যাডার। তারাব শবনম অয়েল মিলের ট্রাকপ্রতি ২০০ টাকা হারে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করাই তার কাজ। গত ১০ বছরে এরা বরাবো, রসুলপুর, খাদুন, রূপসী ও কর্ণগোপ এলাকায় কয়েক হাজার বিঘা জমি দখলে নিয়ে বালু ভরাট করেছে। রূপসী এলাকায় ৩০০ বিঘা জমি কম মূল্যে এমপির কাছে বিক্রি না করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে স্থানীয় জমির মালিকদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। জমি দখল করে মূল মালিকদের বিভিন্ন মামলা দিয়ে ভিটেবাড়ি ছাড়া করা হচ্ছে। রূপগঞ্জের ৫২টি আবাসন কোম্পানি থেকে প্রতি মাসে মাসোহারা আদায় করা হচ্ছে। এসব কাজে নিয়োজিত পিএস এমদাদ। উপজেলার পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজিও নিয়ন্ত্রণ করে এই এমদাদ। এ ছাড়া রূপসী সিটি গ্রুপের ট্রাকের লোড-আনলোডের জন্যও চাঁদা দিতে হয়। এরকম শত শত অভিযোগ আপনি এলাকায় গেলে পাবেন। আওয়ামী লীগের ১০ বছরের এত উন্নয়নের পরও রূপগঞ্জের মানুষ ভালো নেই শুধু এমপির অরাজকতার কারণে। অন্যদিকে, উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ রাস্তা ভাঙাচোরা।

 

 

বাংলাদেশের খবর : আপনার অবস্থান থেকে কি সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে বলে মনে করছেন?

রফিকুল ইসলাম রফিক : আমি তো মনে করি একদম সময়মতো নির্বাচন হবে। কারণ দেশে এরকম কোনো সমস্যা নেই, যার জন্য নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। বিএনপির যে ৭ দফা দাবি, তার কোনোটাই মেনে নেওয়া যাবে না- এটি তো দলের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেই দিয়েছেন। বিএনপি নির্বাচনে না এলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে; সুতরাং তারা নির্বাচনে আসবে। আর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, সেটাই আমাদের জন্য আইন। আর দেশে এমন কোনো পরিবেশ হয়নি যে নির্বাচন করা যাবে না। তারা মিটিং মিছিল করছে, সবই করছে। তাই নির্বাচনও করবে।

 

বাংলাদেশের খবর : এলাকার উন্নয়নে কী কাজ করবেন নির্বাচিত হলে?

রফিকুল ইসলাম রফিক : আমি তো সব সময় বলি যে ভাই আমি জনগণের, জনগণ আমার। আমার পূর্বপুরুষদের এলাকা এটা। আমার বাপ-দাদাদের সাড়ে চারশ বছরের ইতিহাস আমার জানা। আমরা তো এখানে ভেসে আসিনি। আমার দাদার নাম কী, তার দাদার নাম কী, তার বাবার নাম কী— সব আমি জানি। আমি এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করব- এটাই স্বাভাবিক। বরং না করাটাই আমার জন্য অস্বাভাবিক। একটা বিষয়, এলাকার ছেলে এলাকার জন্য করব না— এটা ভাবতেও পারি না। আমি চেয়ারম্যান আছি আড়াই বছর; কিন্তু ২৫ বছর যাবত এই রূপগঞ্জের জন্য কাজ করছি যতটুকু পারছি। বিরোধী দলে থাকার সময় যখন আমরা পালিয়ে বেড়াতাম, এলাকার লোকদের জন্য সব থেকে বেশি করেছি আমি ওই বিপদের মধ্যে থেকেও। এখন তো খোদার রহমতে এলাকার জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে, আমরা জনগণের সঙ্গে আছি।

 

বাংলাদেশের খবর : এই আসনের কিছু এলাকা মাদক আর চাঁদাবাজির আখড়া হিসেবে পরিচিত। এর কারণ কী?

রফিকুল ইসলাম রফিক : এখানে চনপাড়া নামে একটা এলাকা আছে, খুব ঘনবসতিপূর্ণ। এদের বেশিরভাগ ভাসমান লোক, প্রায় ৭৫ ভাগ, আমরা এদের চিনি না। রপগঞ্জের কেউ এদের চেনে না। এরা এসে মাদকের কেনাবেচা করে আবার চলে যায়। আমরা নিজেরাও খুব বিভ্রান্তির মধ্যে আছি এ বিষয়গুলো নিয়ে। এরা কোথা থেকে আসে, কোথায় চলে যায়—কোনো ট্রেস করা যায় না। এলাকাটি আয়তনে খুব ছোট্ট, কিন্তু লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। ঘন বসতি হওয়ার কারণে প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেও আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না। দুঃখের বিষয়, আমার ইউনিয়নের মধ্যেই এই এলাকার অবস্থান এবং আমার পরিষদের দুজন মেম্বার— একজন মহিলা বিউটি আক্তার কুট্টি, একজন পুরুষ বজলু মেম্বার; এরা দুজন মাদকের গডফাদার হওয়ার কারণে তাদের দুজনকেই আমি দুই বছর যাবত বাদ দিয়ে রেখেছি। কারণ মাদকের গডফাদার পরিষদের মেম্বার থাকতে পারেন না। কিন্তু আমাদের এমপি মহোদয় তাদের শেলটার দিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। মাদকের গডফাদারদের যখন লিস্ট করা হলো, তখন বার বার এই বজলু মেম্বার আর বিউটি আক্তার কুট্টির নাম গডফাদারদের তালিকায় দুই তিন নম্বরে। যখনই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যায়, এমপি সাহেব একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ান। বলেন, তাদের কিছু করা যাবে না। এই হচ্ছে আমার এলাকার অবস্থা। আপনারা সঠিক কথা তুলে ধরেন, এই এলাকার মানুষকে রক্ষা করেন। না হলে যে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন এসবের কাছে ম্লান হয়ে যাচ্ছে!

 

 

 

নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তখনই হবে, যখন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হবে : তৈমূর আলম খন্দকার

 

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ১৯৫৩ সালের ১৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে সরকারি তোলারাম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তিনি মাসদাইর প্রভাতী কল্যাণ সংস্থা ও মুসলিম একাডেমির পাশাপাশি ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, রিকশা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দিনমজুরদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেকে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ’৭৬ সালে ল’ পাস করার পরের বছর নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং ’৮৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। তিনি দীর্ঘদিন বিআরটিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের পর বিএনপিতে যোগদান করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০৪ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০৭ সালে  ১/১১-পরবর্তী সময়ে যৌথ বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে এবং ১২ বছরের জেল হয়। ২০০৯ সালে তিনি মুক্তি পান। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। আগামী সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান

 

বাংলাদেশের খবর : আগামী নির্বাচনে তো রূপগঞ্জ থেকে আপনি নির্বাচন করছেন?

তৈমূর আলম খন্দকার : আল্লাহ যদি মঞ্জুর করেন, তাহলে আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইব।

 

বাংলাদেশের খবর : দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে বলে মনে করছেন?

তৈমূর আলম খন্দকার : দেশে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে নির্বাচন হবে একতরফা। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া যদি বিএনপি নির্বাচনে যায়, তাহলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে গেল না কেন? কারণ বিএনপির মূল বক্তব্যই তো হচ্ছে— দলীয় সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। কিন্তু এখন যদি সেই দলীয় সরকারের অধীনেই যায়, তাহলে এই যে এত লোক মামলায় পড়ল, জেল খাটল, বাড়িঘর ছাড়া হলো, রিমান্ডে গিয়ে এত টাকা-পয়সা খরচ করল- এর জবাব কে দেবে? আমাদের রাজনীতিটাই তো হচ্ছে আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই না। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মূল কথাও হলো মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এখন তো দেশে গায়েবি মোকদ্দমা চলছে। এই যে মিথ্যাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, বিএনপি কিন্তু তা করেনি। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল কথা হচ্ছে, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তখনই হবে, যখন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া এই নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না।

 

বাংলাদেশের খবর : এমন বাস্তবতায় বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি?

তৈমূর আলম খন্দকার : বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না—এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার দায়িত্ব সেন্ট্রাল কমিটির। মানে স্ট্যান্ডিং কমিটির। তবে মূল দায়িত্ব হচ্ছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান—তাদের সিদ্ধান্ত। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপির নির্বাচনে যাওয়াটা ঠিক হবে না।

 

বাংলাদেশের খবর : আগামী নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক হবে বলে মনে করছেন?

তৈমূর আলম খন্দকার : সেটা বলা মুশকিল। তবে কোনো কারণে যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়ে একতরফা হয়, তাহলে সবচেয়ে বিতর্কিত হবেন প্রধানমন্ত্রী। আর দেশে যদি তিনি গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন করেন, সেই ক্রেডিটও তার পক্ষেই যাবে।

 

বাংলাদেশের খবর : ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে বলছেন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে না বিএনপির। যদি তা-ই হয়, তাহলে কি দলের নিবন্ধন হারানোর কোনো পসিবিলিটি রয়েছে?

তৈমূর আলম খন্দকার : এক্ষেত্রে আমার মূল কথা হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। দলের প্রধানকে মুক্ত না করে একতরফা কোনো নির্বাচন হবে না। আর নিবন্ধনের কথা বলছেন? এটা কোনো বিষয় নয়। সংবিধান তো পাকিস্তানেরও ছিল। পাকিস্তান তো ৯৩ হাজার সুসজ্জিত সেনাবাহিনী নিয়ে এদেশে আত্মসমর্পণ করেছিল। আজো সংবিধান নিয়ে অনেকে অনেক বড় বড় কথা বলছেন। যে কথা ইয়াহিয়া খান, আইয়ুব খান, এরশাদসহ বর্তমান সরকারও বলছে। কিন্তু জনমতের উপরে সংবিধান কোনো বিষয় নয়।

 

বাংলাদেশের খবর : আপনার এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি কী? আওয়ামী লীগ তো এখানে ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে...

তৈমূর আলম খন্দকার : ১০ বছরের মধ্যে এলাকার পরিস্থিতি হলো ‘গায়েবি মোকদ্দমা’। আর রূপগঞ্জের কথা যদি বলি, রূপগঞ্জ হচ্ছে সব ভূমিদস্যুদের দখলে। ইতালিয়ান সিটি, আমেরিকান সিটি, পুলিশ সিটি, এই সিটি, ওই সিটি—হাজার হাজার সিটির সাইনবোর্ড। এছাড়া পুরো এলাকা মাদকে ছেয়ে গেছে। আরো আছে প্রাতিষ্ঠানিক লুটপাট। দেখবেন, এসব কাজে সরকারদলীয় লোকজনই জড়িত। আর এখন তো দেখা যায় জেলাররাও জড়িত। পুলিশ আর দলীয় লোকজন যে জড়িত তা তো আগেই প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারপর ভূমিদস্যুরা ইচ্ছাকৃতভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে রেখেছে যেন মানুষ জমি চাষ করতে না পারে। কারণ জমি চাষ করতে না পারলে পর্যায়ক্রমে জমিগুলো ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যায়। দেশে ওই পেশায় যারা এখন হর্তাকর্তা, তাদের তো পেট ভরে না। দেখা গেছে জায়গা কেনে ৫ শতাংশ, ভরাট করে ফেলে এক বিঘা। বালু দিয়ে ভরাট করার পর মানুষ বাধ্য হয় তাদের কাছে অদামে-কুদামে বিক্রি করতে। দেশে এখন নৈরাজ্যের চরম সীমা চলছে এখন।

 

বাংলাদেশের খবর : আপনি যদি নমিনেশন পান, সেক্ষেত্রে এলাকার জনগণের প্রতি আপনার প্রতিশ্রুতি কী?

তৈমূর আলম খন্দকার : প্রথম কথা হচ্ছে, রূপগঞ্জে কোনো ভূমিদস্যুর সাইনবোর্ড থাকবে না। এখানে যে জমি যার, সে চাষ করে খেতে পারবে। আর আমার কোনো পিএস, এপিএস থাকবে না। আমার দ্বারা ইতোপূর্বেও কোনো মানুষ নির্যাতিত হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। আমি রূপগঞ্জের এক হাজার লোককে চাকরি দিয়ে জেল খেটেছি। যেখানে গ্যাস নেই, সেখানে গ্যাসের ব্যবস্থা করেছি। যেখানে দরকার, সেখানে বিদ্যুৎ দিয়েছি। রূপগঞ্জে আমার বহু কর্ম আছে। আমি কারো টাকা মেরে খাইনি বা কাউকে জেল খাটাইনি। আমি কোনো দল, উপদল পালি না। কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী পালি না যে তাদের দিয়ে কারো জমি আমি দখল করব। বরং বাপ-মায়ের জমি বিক্রি করে খেয়েছি। কিন্তু কারো জমি, সম্পত্তি বা ব্যবসায় আমি হাত দিইনি। ভবিষ্যতেও দিব না ইনশাল্লাহ।

 

 

 

মানুষের জন্য কাজ করলে হেভিওয়েট প্রার্থী জয়ের জন্য কোনোরকম বাধাই হতে পারে না। শুধু সাংবাদিক বন্ধুরা দেশের সঠিক চিত্রটি জনগণের সামনে তুলে ধরলেই হবে : মো. সাইফুল ইসলাম

 

মো. সাইফুল ইসলাম

সহ-সভাপতি, রূপগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টি

 

মো. সাইফুল ইসলাম রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম মোহাম্মদ হারুনার রশিদ, মা হাজী বিবিয়া। সাইফুল পেশায় ব্যবসায়ী। ১৯৯৫ সালে জাতীয় পার্টির রূপগঞ্জ উপজেলার জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি হিসেবে রাজনীতিতে পা রাখেন। বর্তমানে তিনি রূপগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় জাতীয় পার্টির অবস্থানসহ নির্বাচন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান 

বাংলাদেশের খবর : নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কেমন?

মো. সাইফুল ইসলাম : নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ), এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দুই দলেই একাধিক। কাজেই জাতীয় পার্টি এখানে ভালো অবস্থানে রয়েছে। জাতীয় পার্টিতে কোনো কোন্দল নেই। আমরা দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি বলেই রূপগঞ্জে অন্য দলের চাইতে জাতীয় পার্টির অবস্থান অনেক ভালো।

বাংলাদেশের খবর : আপনি কি আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন?

মো. সাইফুল ইসলাম : জি, আমি আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইব। আশা করি, দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে জাতীয় পার্টি থেকে আমি মনোনয়ন পাব। আমি রূপগঞ্জের একক প্রার্থী হিসেবে আছি, তাই ইনশাল্লাহ আমার মনোনয়নের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।

বাংলাদেশের খবর : এরশাদ সাহেব নাকি এই আসন থেকে নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন?

মো. সাইফুল ইসলাম : তিনি বলেছিলেন, এই আসনে যেহেতু আওয়ামী লীগে কোন্দল আছে, তাই আমি নিজেই এই আসনে নির্বাচন করতে পারি। তবে সেটা ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করবে- তিনি নিজে করবেন, নাকি আমাকে দেবেন। তিনি আমাদের এলাকায় কাজ করে যেতে বলেছেন, প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন। দলীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশমতো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যদি তিনি নির্বাচন না করেন, সে ক্ষেত্রে আমিই এলাকায় জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী। তবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই আমরা মেনে চলব। এরশাদ সাহেবের নির্দেশেই এলাকার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এখন আগের চাইতে অনেক সুসংগঠিত ও সক্রিয়।

বাংলাদেশের খবর : গত ১০ বছর আওয়ামী লীগের একজনই এই এলাকার সংসদ সদস্য। এলাকায় তার মাধ্যমে উন্নয়ন সম্পর্কে আপনার কী মতামত?

মো. সাইফুল ইসলাম : দেখুন, আমার জন্য এটা বলা ঠিক নয়। কারণ উন্নয়নের মাত্রা ততটা নয়, যতটা সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি এলাকায় বিতর্কিত। যে কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল এখানে চরম আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব কারণে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী আছে। আমি খারাপ কিছু বলতে চাই না। কারণ যা-ই বলব, তা-ই তার বিপক্ষে যাবে এবং তিনি বলবেন, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা আক্রোশ। আমরা জাতীয় পার্টি বা আমি ব্যক্তিগতভাবে কারো পরনিন্দা করার মানসিকতা রাখি না। তবে আমাদের এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে।

বাংলাদেশের খবর : এত বড় দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে এককভাবে নির্বাচন করলে বিজয়ী হতে পারবেন?

মো. সাইফুল ইসলাম : এ সময়ে জাতীয় পার্টির যে অবস্থান এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যেসব কার্যকলাপ, তাতে শুধু রূপগঞ্জের জনগণ নয়- সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এখন জাতীয় পার্টির সরকার আমলের কথা বলে। এরশাদ সাহেবের উন্নয়নের কথা বলাবলি করে। এরশাদ সাহেবের সময় গুচ্ছগ্রাম থেকে শুরু করে, সারা দেশে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল, মানুষ আজো সেই সুফল ভোগ করছে। খেলাধুলা, শিক্ষা খাত, গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নের কারণে আজো মানুষ আমাদের দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেবকে পল্লীবন্ধু বলে সমাদৃত করেন। কাজেই মানুষের জন্য কাজ করলে হেভিওয়েট প্রার্থী জয়ের জন্য কোনোরকম বাধাই হতে পারে না। শুধু সাংবাদিক বন্ধুরা দেশের সঠিক চিত্রটি জনগণের সামনে তুলে ধরলেই হবে।   

বাংলাদেশের খবর : বিগত সময়ে রূপগঞ্জের উন্নয়ন কেমন হয়েছে?

মো. সাইফুল ইসলাম : আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন যে করেনি তা নয়; কিন্তু যতটুকু হয়েছে তার থেকে আরো বেশি হতে পারত। সত্যি বলতে কি, আমি কারো নামে বদনাম করতে চাই না। যে যেমন কর্ম করবে, সে তেমন ফল পাবে। আমি বলতে চাই কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না। মানুষকে ভুল স্বপ্ন দেখাবো না। বাস্তবটাই বলব। কারণ আমি বাস্তবমুখী কাজ করতেই পছন্দ করি।

বাংলাদেশের খবর : এলাকার মূল সমস্যা সম্পর্কে কিছু বলুন। কারণ আপনি সমস্যাই যদি না জানেন, তা হলে সমাধান করবেন কীভাবে?

মো. সাইফুল ইসলাম : মাদক সমস্যা এখানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এলাকা শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। রাস্তাঘাটের সমস্যা আছে, কর্মসংস্থানের অভাব আছে। এলাকায় মিল-কারখানা যা আছে, সেখানে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। এখানে পড়াশোনার কোনো ভালো মানের স্কুল-মাদরাসা নেই। এলাকায় উন্নত মানের কোনো হাসপাতাল নেই। আমি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি এবং জয়লাভ করতে পারি, তাহলে প্রথমেই চেষ্টা করব রূপগঞ্জকে মাদকমুক্ত করার। তবে এর জন্য অবশ্যই সাংবাদিক, প্রশাসনের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। এলাকার যুবসমাজ এখন ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে, সেটা থেকে আমি ইনশাল্লাহ রোধ করব। এটা হচ্ছে আমার এক নম্বর প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত স্কুল-কলেজের সমস্যা আছে, বাবা-মায়েরা অনেক সমস্যায় আছেন ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা নেই বলে। আমি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করব।  

 

 

ঐক্যফ্রন্টের মূল দল বিএনপি, বিএনপির মূল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন : কাজী মনিরুজ্জামান মনির

 

কাজী মনিরুজ্জামান মনির

সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি

 

কাজী মনিরুজ্জামান মনির ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর জিয়াউর রহমানের জাগ যুবদলের দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বিএনপি গঠনের পর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে চলে যান এবং পোশাক শিল্পে ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি বিজিএমইএ’র নির্বাচিত পরিচালকসহ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পুনরায় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী দলে সক্রিয় হয়ে ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এরপর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন এবং বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আসন্ন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন আসিফ সোহান

বাংলাদেশের খবর : আগামী নির্বাচনে কি নারায়ণগঞ্জ-১ থেকে মনোনয়ন চাইবেন?

কাজী মনিরুজ্জামান মনির : জি, আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশের খবর : দল মনোনয়ন দেবে এ বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী?

কাজী মনিরুজ্জামান মনির : আমি শতভাগ আশাবাদী। কারণ আমি জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে সবসময় এলাকার জনগণের সঙ্গে আছি। ২০০৮ সালেও দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল, যদিও সেটি একটি পাতানো নির্বাচন ছিল। ২০০৮-এর নির্বাচনকেই আমি ধরে নিয়েছি পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে। কাজেই ২০০৮-এর পর যখনই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে, আশা করি দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।

বাংলাদেশের খবর : বেগম জিয়া কারাগারে, তারেক রহমান দেশের বাইরে। দুজনই সাজাপ্রাপ্ত, এ সময়ে নির্বাচনে গেলে বিএনপি কতটুকু লাভবান হবে?

কাজী মনিরুজ্জামান মনির : আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা আমাদের দলের জন্য একটা সুনামির মতো আঘাত। বিএনপিকে নির্মূল করতে অনেক বড় একটা পরিকল্পনা। তারপরও আমি মনে করি, বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানই আমাদের দলের আসল কাণ্ডারি। সে কারণে দুজনকেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাজানো মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের দলের কর্মীদের মনোবল ভাঙার জন্যই হয়েছে। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ কতটা পজিটিভ হবে সেটি পরের বিষয়। তবে আগে দেখতে হবে এসবের পেছনে সরকারের কোনো কূটকৌশল আছে কি-না। কারণ এই সরকারের জনগণের প্রতি ন্যূনতম আস্থা নেই যে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তাই তারা বিনা ভোটে পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপি জোটের নেত্রী বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় মোট ১০ বছরে সাজা দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যেভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে, এসব কিছু মেলালে আমার কেন যেন মনে হয় সবকিছুই পূর্বপরিকল্পিত,  সাজানো। দেশে সাংবিধানিক নিয়মে নির্বাচন হতে হবে। তারা এই নির্বাচনে বিএনপিকে মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে নিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এসব কৌশল করছে। তবে এসব কৌশল গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়। এসবের কারণে অগণতান্ত্রিক শক্তি মাথা চাড়া দেওয়ার সুযোগ পায়। যেমনটি আমরা দেখেছি ১/১১-পর সব দলের সর্বোচ্চ নেতা-নেত্রীদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে। 

বাংলাদেশের খবর : তাহলে কি নির্বাচনে যাবেন না আপনারা?

কাজী মনিরুজ্জামান মনির : না, এ বিষয়ে আমার বলার এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তাদের নির্দেশনামতোই আমরা যারা মাঠে কাজ করি, তারা চলব। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানবিহীন বিএনপির কিছুই থাকল না। বেগম জিয়াকে জেলখানায় রেখে আমরা যারা মাঠে কাজ করব, যারা প্রার্থী হব, যারা ভোট চাইব- তাদের অনেক কষ্ট হবে পথ চলতে। মন থেকে এই নির্বাচনকে ভালোভাবে নিতে পারব না। এটি জাতীয়তাবাদী দলের জন্য ও গণতন্ত্রের জন্য কঠিন সময়। এ সময়টাকে যদি আমরা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা মনন আর বিচক্ষণতা দিয়ে অতিক্রম করতে না পারি, তাহলে দেশের গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার আবার লুণ্ঠিত হবে। দেশ ও মানুষ আবার সঙ্কটে পড়বে।

বাংলাদেশের খবর : ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের সংলাপ কীভাবে দেখছেন?

কাজী মনিরুজ্জামান মনির : শেখ হাসিনা আমরা সংলাপে গেলেও যেভাবে কথা বলার বলবেন, আবার না গেলেও বলবেন। না গেলে বলতেন, ডাকলাম তারা এলো না। অতএব সংলাপকে আমি পজিটিভলি দেখতে চাই। সংলাপের মধ্য দিয়েই দেশের জনগণের কাছে পরিষ্কার হোক দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। ঐক্যফ্রন্টের মূল দল বিএনপি, বিএনপির মূল আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছেন। সেই নেত্রীর ৫ বছরের সাজাকে ১০ বছর করা হয়েছে। সেই নেত্রীকে সাজা দিয়ে দুদিন পরেই আপনি সংলাপে বসলেন। ওই দলের নেতারা কি মন নিয়ে সংলাপে যাবে বলেন? তারপরও আমরা সংলাপের মধ্য দিয়েই মূল বিষয়টা বের করে আনব। সরকারের মধ্যে লুক্কায়িত যে কুৎসিত চেহারা আছে, তাদের মনের মধ্যে যে একটা দুরভিসন্ধি রয়েছে— সেটা জনগণের সামনে বের করে আনার জন্য হলেও আমি মনে করি এই সংলাপে যাওয়া প্রয়োজন ছিল।  

বাংলাদেশের খবর : এই ঐক্যের নেতাদের সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

কাজী মনিরুজ্জামান মনির : দেখুন, এক ও শূন্যকে যদি অনেক দূরে রাখেন তাতে হবেটা কী? আর দুটোকে যদি পাশাপাশি রাখেন—১০ হয়। অতএব শূন্যের কোনো ভ্যালু নেই। একের সঙ্গে গেলে ভ্যালু আছে। এখানে যারা আছেন তাদের অনেক গুণ আছে, কিন্তু তারা কেন জানি তেমন কিছু করতে পারেননি। উনারা সবাই যদি দেশের গণতন্ত্রের জন্য হলেও একসাথে হয়ে আরেকবার করে দেখাতে পারেন তা ভালোই হবে। দেশের জনগণের জন্য হলেও যার যা করার আছে, সেটি দিয়েই যদি দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে সেটি গণতন্ত্রের জন্য একটা বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে। এখানে কে বড় কে ছোট, কে জ্ঞানী কে কম বুদ্ধিমান— এগুলো কিছুই বিবেচনা না করে যার যার জায়গা থেকে দেশের মানুষের জন্য কিছু করা লক্ষ্য হলে তবেই এর সার্থকতা।

বাংলাদেশের খবর : এলাকায় কেমন উন্নয়ন হয়েছে?

কাজী মনিরুজ্জামান মনির : এই এলাকা একটি শিল্পপ্রধান এলাকা। শিল্প এলাকা হিসেবে এখানে কোনো উন্নয়ন হয়নি, রাস্তাঘাট সব ভাঙা, ভূমি সব দখল হয়ে গেছে। রূপগঞ্জ যেন এখন মাদক আর চাঁদাবাজির অভয়ারণ্য। বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি মানুষের বাড়িঘর সব দখল করে নিয়েছে। মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে ভিটেবাড়ি থেকে। এসব ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্যের যেন কোনো দায়িত্ব নেই।

বাংলাদেশের খবর : এলাকাবাসীর জন্য আপনার প্রতিশ্রুতি কী?

কাজী মনিরুজ্জামান মনির : আমি যদি সুযোগ পাই তবে এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধানই হবে আমার একমাত্র কাজ। আমি সংসদ সদস্য হব জনগণের জন্য। ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য সংসদ সদস্য না হওয়াটাই আমার চাওয়া।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads