• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
নির্বাচনের আগে ডলারের দরপতন

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

নির্বাচনের আগে ডলারের দরপতন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

কয়েক মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী ডলারের দাম। বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েও নামাতে পারেনি বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। কারসাজির অভিযোগে বেশ কয়েকটি ব্যাংককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানির লাগাম পর্যন্ত টেনে ধরতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করে সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে। এত পদক্ষেপ কাজ করেনি ডলারের বাজারে। কিন্তু হঠাৎ করেই কমে গেছে ডলারের দাম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাধারণভাবে ভোটের আগে বাড়ে নগদ ডলারের দাম। কমে আসে মজুত। তবে এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক ও খোলাবাজারে গত কয়েক দিনে প্রতি ডলার দুই টাকা কমে ৮৫ টাকার নিচে নেমেছে। মাসখানেক আগেও নগদ ডলারের দর ৮৭ টাকা ছিল। আর মজুত বেড়ে ২ কোটি ডলারের ওপরে উঠেছে। মাসখানেক আগেও যা ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিচালন করতে গিয়ে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করছি। ঋণপত্র (এলসি) খোলার আগে এখন সব ব্যাংকই সাবধান। তবে নর্বাচনের আগে ডলারের দাম কমার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলা কঠিন। তবে এমন হতে পারে, নির্বাচনের সময় যারা দেশের বাইরে যাওয়ার ঝোঁকে থাকেন তাদের অনেকে আগে থেকেই ডলার সংগ্রহ করে রেখেছেন। কিংবা বিভিন্ন উপায়ে আগেই বাইরে পাঠিয়ে রেখেছেন। যে কারণে এখন চাহিদা হয়তো কম।

ব্যাংকাররা বলছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েক দিন আগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন কৌশলে ডলারের দাম বেঁধে দিচ্ছিল। ব্যাপক চাপের কারণে সেই দামে ঠিক থাকতে না পারায় অনেক ব্যাংককে কারণ দর্শানো হয়। তবে প্রায় এক মাস ধরে সেই পরিস্থিতি আর নেই।

তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের দেশের বাইরে যাওয়া সীমিত হওয়ায় ক্যাশ ডলারের চাহিদা কমতে পারে। এদিকে আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্সসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। কিছুদিন আগে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় মাঝে আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্সসহ সব পর্যায়ে ডলারের দর বাড়ছিল। তবে সরবরাহ বেড়ে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচুর ডলার বিক্রির ফলে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক বলা চলে।

অন্যদিকে, এবার ভোটের আগে দেশের বাইরে থেকে অনেক নগদ ডলার দেশে ঢুকেছে। নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন উপায়ে এসব ডলার আনা হয়ে থাকতে পারে। যে কারণে মজুত বেড়েছে, কমছে দাম। এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট একটি নির্দেশনা জারি করেছে। সেখানে ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের লেনদেনে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, একটি গোষ্ঠী আছেন যারা পছন্দমতো সরকার ক্ষমতায় না এলে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ভোটের আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। যারা নগদ ডলার কিনে রাখেন। এবারো এরকম হয়নি, তা নয়। তবে যে পরিমাণ ডলার দেশে ঢুকেছে হয়তো চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে কম। যে কারণে দাম কমছে।

বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সিংহভাগই হয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরভিত্তিক তথা নন ফিজিক্যাল ফর্মে। অর্থাৎ, আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্স, বিদেশি ঋণসহ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অর্থ নগদে দেশে আসে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো হিসাব সংরক্ষণ করে। হিসাব থেকে হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে এ ধরনের লেনদেন হয়ে থাকে। শুধু বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসতে বা বাংলাদেশ থেকে বাইরে যাওয়ার সময় কেনাকাটা, বিভিন্ন ভাড়া ও ভ্রমণের অর্থ পরিশোধের জন্য নগদ ডলার প্রয়োজন হয়। অনেকেই ভ্রমণ, ব্যবসা, হজ, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে দেশের বাইরে যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads