• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ফিচার

রনি আহম্মেদের ‘নূর’ শীর্ষক প্রদর্শনী

  • প্রকাশিত ০৬ জুন ২০২১

সেরাজুম মনিরা

 

আর্টকনের আয়োজনে বেঙ্গল আর্ট লঞ্জে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে শিল্পী রনি আহম্মেদের ‘নূর’ শীর্ষক একক  প্রদর্শনী। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের বিবেচনায় প্রদর্শনীটি আর্টকনের উপস্থাপনায় অত্যাধুনিক থ্রিডি প্রযুক্তিতে নির্মিত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্যুরের মাধ্যমে যে-কোনো স্থান থেকে, যে-কোনো সময় দেখা সম্ভব। এই লিংকে artcon.com.bd/vr/ronni  প্রদর্শনীটির ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্যুর উপভোগ করা যাবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সরাসরি গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েও প্রদর্শনী দেখা যাবে। প্রদর্শনীতে মোট ৪৮টি চিত্রকর্ম ও ৫টি ভাস্কর্য স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া শিল্পী রনি আহম্মেদ নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে এ প্রদর্শনীতে। ‘নূর’ প্রদর্শনীটি রনি আহম্মেদের আধ্যাত্মিক জগতের শৈল্পিক বহিঃপ্রকাশ। সুফি দর্শনে এই ‘নূর’-এর সন্ধান পাওয়া যায় মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি পুরোপুরি নিবেদন ও অনুরাগের মধ্য দিয়ে। শিল্পী রনি আহম্মেদ এই আলোর সন্ধানেই তার ব্যক্তিজীবন উৎসর্গ করেছেন। প্রায় এক দশকের সুফিবাদ চর্চা তার শিল্পীভাবনায় প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছে। তার নিজের আগের শিল্পকর্মগুলোর থেকেও এই সময়কালের আঁকা ছবি ও অন্যান্য ইনস্টলেশন স্পষ্টভাবেই ভিন্ন। তার এই পরিবর্তন, এই আলোর পথে যাত্রারই এক শৈল্পিক প্রকাশ এই প্রদর্শনী।

ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান আর্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, মেলিয়া বেলি বোসের ভাষ্যমতে, এই চিত্রকর্মগুলো সুফিবাদের পথে রনি আহম্মেদের ব্যক্তিগত যাত্রা, তার শৈল্পিক পরিবর্তনের স্মারক।

ব্যক্তিজীবনে সুফি ইসলামের চর্চা করলেও, রনি আহম্মেদ হিন্দুত্ববাদ, বৌদ্ধধর্ম, খ্রিস্টান মতাদর্শসহ বিভিন্ন প্রাচীন মতাদর্শ নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা করেছেন। আর তাই তার এই শিল্পকর্ম সময় এবং স্থানিক মাত্রা অতিক্রম করে সহজেই। বস্তুত নূর-ই-মোহাম্মদ হলো সেই চিরন্তন সত্তা, যা সময়, স্থান কিংবা কোনো নির্দিষ্ট ভাষার ওপর নির্ভর করে না। একই সময়ে এই প্রদর্শনী ভীষণভাবে সমকালীন। এই মহামারীর সময়ে নিজের ভেতরে ডুব দিতে উদ্বুদ্ধ করবে এই ছবিগুলো, ভরসা করতে শেখাবে মহান সৃষ্টিকর্তার সর্বোত্তম পরিকল্পনার ওপর।

ইসলামী শিল্প ঐতিহ্য, ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত ধারার এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন রনি আহম্মেদ। আবার তার আগেকার কার্টুন, স্যাটায়ার আর ব্যঙ্গাত্মক চিত্রকর্মের কিছুটা রেশ এখনো রয়ে গেছে কোনো কোনো ছবিতে, যদিও এগুলোর অন্তর্নিহিত বার্তা একদমই হালকাভাবে নেওয়ার উপায় নেই।

‘আমি এমন এক জগৎ সৃষ্টি করতে ভালোবাসি, যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, অথচ যা চিরন্তন। আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি, আমার স্টাইল দেখা এবং অদেখার মধ্যে বদলেছি বারবার’-রনি আহম্মেদ বলেছেন তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে। তার জীবনাদর্শ অর্থাৎ সুফিবাদকেই তিনি ভাষা দিতে চেয়েছেন এই শৈল্পিক প্রয়াসে।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছর আমি সুফিবাদের মাধ্যমে আত্মার নির্বাণের পথ অনুসন্ধান করেছি নিরন্তর। এই পথেই আমি এক আলোকোজ্জ্বল শৈল্পিক ভাষার খোঁজ পেয়েছি। সবকিছুর মধ্যেই আমি মহান আল্লাহকে দেখি। আমাদের মহানবীর গভীর ভালোবাসার সন্ধান পেয়েছি আমি।

রনি আহম্মেদের ভাষায়, সুফিবাদের অসংখ্য বই পড়লেও এই পথের খোঁজ মিলবে না, যতটা মিলবে আত্মার গভীর উপলব্ধির মাধ্যমে। আত্মার সেই গভীর উপলব্ধি দর্শক অনুভব করতে পারলেই তার শিল্পকর্ম সফল হবে বলে মনে করেন এই শিল্পী। এটি শিল্পীর ১০তম একক চিত্র প্রদর্শনী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads