• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ফিচার

মাদক ও বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে রাখিলের লড়াই

  • অরণ্য সৌরভ
  • প্রকাশিত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

নরসিংদীর সন্তান রাখিল খন্দকার। অধিকাংশ বন্ধু রাখিল নামে এবং কেউ কেউ নিশান নামে ডাকলেও তার পুরো নাম রাখিল খন্দকার নিশান। শৈশব, কৈশোর এবং বেড়ে ওঠা নরসিংদীর বেলাবতে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পাট চুকিয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর ও কল্যাণকর সমাজ ও প্রজন্ম তৈরিতে কাজ করছেন।

২০১০ সাল থেকেই মাদকবিরোধী কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও সারা দেশে মাদকবিরোধী গণ-আন্দোলন ও গণসচেতনতা তৈরি এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ‘ড্রিম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ (ডিবিএফ) গঠন করেন। তারপর ২০১৭ সালের বিজয় দিবসের দিন থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করে রাখিলের সংগঠনটি। মূলত সারা দেশের তরুণদের মাঝে মাদকবিরোধী সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই তার এই যাত্রা।

এ ছাড়া সারা দেশের তরুণসমাজ, স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেরাও বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে বা বিভিন্নভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। আগামীর বাংলাদেশের হাল ধরবে যারা তারাই মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে বাংলাদেশ আর এগোতে পারবে না, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না-এই চিন্তাচেতনা থেকেই তারুণ্যের শক্তিকে পুঁজি করে একটি পজিটিভ প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে শহর থেকে  প্রান্তিক পর্যন্ত মাদক, বাল্যবিয়েসহ সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যেই ড্রিম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন গঠনের পেছনে কাজ করেছে।

রাখিলের সংগঠনটি মূলত সারা দেশে গণসচেতনতা তৈরির জন্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে থাকে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকবিরোধী বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে তরুণদের সচেতন করে তোলেন। মাদকবিরোধী র‍্যালি, মানববন্ধন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পাবলিক স্পিকিং, মোটিভেশনাল সেশন, কাউন্সেলিং, কনসার্ট, চিকিৎসা ক্যাম্প, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, আলোচনা সভা, শপথ পাঠ, খেলাধুলা প্রতিযোগিতা, প্রামাণ্যচিত্র, তথ্যচিত্র, মঞ্চনাটক, ইয়ুথ ডাইলগসহ মাদকবিরোধী বিভিন্ন ব্যতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে তরুণদের সচেতন করে থাকেন রাখিল। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের তরুণদের নিয়ে মাদকবিরোধী নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রামের আয়োজন করেন। এ ছাড়া প্রতন্ত অঞ্চলে বাল্যবিবাহবিরোধী নাটিকা, অভিভাবকদের সচেতনতা ও স্কুলগুলোতে বাল্যবিবাহবিরোধী বিভিন্ন আয়োজন করে থাকেন।

তিনি এখন পর্যন্ত ৩৪টি বাল্যবিবাহ রোধ করেছেন। বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজগুলো মূলত সঠিক ইনফরমেশনের মাধ্যমে তিনি করে থাকেন। কেউ যদি ফোন দিয়ে বা যে-কোনো উপায়ে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনের তথ্য জানায় তাহলে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সমাধান করার চেষ্ঠা করেন।

এ ছাড়া নিজ এলাকায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘তরুণ উদীয়মান সামাজিক সংগঠন’ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে এখনো তিনি কাজ করছেন। এই সংঠনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, মাদকবিরোধী কাজের পাশাপাশি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ দিয়ে থাকেন।

জীবনে গতানুগতিক সবার চিন্তার মতো কখনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা সরকারি বড় কোনো অফিসার হতে চাননি তিনি। ছেলেবেলা থেকেই মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছেন। বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝতেছেন তিনি মূলত একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার হতে চান। ছেলে সরকারি চাকরি করবে-মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মা সকলেরই এমন প্রত্যাশা থাকলেও তিনি কখনো বাবা-মাকে বুঝতে দেননি, সবার চাকরি করার দরকার নেই। কারো কারো সমাজের জন্যও কাজ করা প্রয়োজন। ছেলেবেলার স্বপ্নকে পুষে এখনো তিনি পুরোদমে একজন সোশ্যাল এন্ট্রিপ্রিনিয়র বা সামাজিক উদ্যোক্তা হতে চান। এ ছাড়া কখনো যদি সুযোগ আসে বা সুযোগ তৈরি হয় তখনো তিনি সামাজিক উদ্যোক্তাই হতে চাইবেন।

মাদকবিরোধী কাজের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে সম্মাননা স্বারক, এডুকেশন ওয়াচ অ্যাওয়ার্ড, জাগ্রত বিবেক সম্মাননা সাফল্যের ঝুঁড়িতে জমা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ থেকে ইয়েস সদস্য হিসেবে সারা দেশে সেরাদের সেরায় ৫ম স্থান অধিকার করেন। এবং ২০১৭, ২০১৮ সালে সেরা ইয়েস হন। তা ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক মাদকবিরোধী মঞ্চ নাটক প্রতিযোগিতায় সারা দেশে তৃতীয়, স্টামফোর্ড ইয়েস আয়োজিত টিআইবি-এর সহযোগিতায় দুর্নীতিবিরোধী প্রামাণ্যচিত্র প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি। রাখিল খন্দকার বলেন, এগুলো আসলে সাফল্য না। এগুলো ভালো কাজের স্বীকৃতি বা অনুপ্রেরণা। অনুপ্রেরণা পেলে কাজের গতি অনেক বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ’৭১-এর বীর সৈনিকরাই তার কাজের অনুপ্রেরণা বা অনুপ্রেরক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রাখিল বলেন, তারুণ্যনির্ভর স্বপ্নের মাদকমুক্ত সোনার বাংলাদেশ দেখা এবং তা বিনির্মাণে কাজ করাই আমার স্বপ্ন।

তিনি সমাজের বিরাট কিছু সমস্যা নিয়ে কাজ করেন, সেজন্য রয়েছে তার অনেক ত্যক্ত অভিজ্ঞতা। এই তিনি বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রথম মাদকবিরোধী ফোরাম স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে প্রতিষ্ঠা করাটা মোটেই সহজ ছিল না। ফোরামটি প্রতিষ্ঠার আগেও বাধার মুখে পড়েছি। শেষ পর্যন্ত আমাদের হায়ার অথরিটি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ফোরামটি গঠন করতে পারি। যখন কাজ শুরু করলাম তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে বাধা আসা শুরু করল। আমি বলতে পারি আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপেই বাধা এসেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads