• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ফিচার

অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খানের বিদেশ গমন

  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০২১

লেখা : ভাস্কর শিল্পী আইভি জামান

পর্ব : এগারো

একদিন চারুকলার কয়েকজন বললেন, হুসেন তোমাকে খোঁজ করেছেন এবং নম্বরও দিয়ে গেছেন। বলেছেন ওকে ফোন করতে বলবে। ভারতের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ফিদা হুসেন হামিদুজ্জামান খানের সাথে দেখা করবেন এটা কম কথা না! তারপর তিনি ফোন করলেন হুসেনকে। উনি বললেন ইয়েস, আই লাইক ইউর ওয়ার্ক, ইউ ওয়েট... আই অ্যাম কামিং। তারপর উনি এলেন।

হামিদুজ্জামান কথা বললেন। একটা ক্যাফেতে দুজনে মিলে গল্প করলেন। উনি ইন্সপায়ার করলেন, তিনি বললেন, তোমার কাজের মধ্যে ডিফারেন্ট একটা জিনিস আছে, ইনোভেটিভ একটা জিনিস, তোমার মতো। ভারতীয় সব স্কাল্পচার কোথায় যেন একখানে মেশে। যেহেতু আমি অন্য এলাকার, অন্য জায়গার, আমার তো কোনো বাধা নেই। মন থেকে ফ্রিভাবে কাজ করতেন। আর ছোটবেলা মানুষ হয়েছে মুক্ত মনে। স্কাল্পচারের মধ্যে একটা মুক্তমন নিয়ে কাজ করতেন।

এটা গেল একটা ঘটনা। ওখানে তো অনেকের কাজ ছিল। পঁচিশ বছর তো যারা এখন খুব নামকরা ইনডিয়াতে, কলকাতায় যারা মাস্টার্স করত, এদের কাজ। সবার মধ্যে হামিদুজ্জামান আলোচিত।

তখন হামিদুজ্জামানের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেল যে তার দ্বারা হয়তো কিছু হবে। তখন হামিদুজ্জামান রেজাল্ট খুব ভালো করলেন। ওরা হামিদুজ্জামানকে বললেন, উই উইল গিভ অ্যানাদার থ্রি ইয়ার স্কলারশিপ, তুমি এখানে থাকো, পিএইচডি করো।

ডক্টরিয়াল কোর্স?

হ্যাঁ। তখন চারুকলা সরকারি ছিল। যার জন্য থাকা সম্ভব ছিল না। তখন তিনি বললেন চলে যেতে হবে, থাকতে পারব না। ওরা তাকে আটকাতে চাইছিল। অ্যানি হাউ তুমি থাকো কয়েক বছর, তুমি আরো ভালো করতে পারবে। তিনি চলে এলেন। আবার পুনরায় শিক্ষকতায় যোগ দিলেন চারুকলায়। তখন ভারতে খুব বেশি এক্সিবিশন হয় তা না। একটা বড় এক্সিবিশন ছিল, একশ-একশ স্কাল্পচারের একটা বড় গ্রুপ এক্সিবিশন, দিল্লিতে।

ওখানে থেকে তিনি  আমন্ত্রণ পেলেন। তারা বললেন তোমার স্কাল্পচার চাই। হামিদুজ্জামান স্কাল্পচার  দিলেন। হামিদুজ্জামানের স্কাল্পচার দ্বিতীয় হলো, বিক্রি হলো, টাকাও পেলেন। সব মিলিয়ে রেসপন্সটা ভালো ছিল। তারপর ঢাকা এলেন, আবার জয়েন করলেন। তখন তিনি স্কাল্পচারটা ভালো বুঝতে পারছেন।

হামিদুজজামান মিস্কড মিডিয়ায় কাজ করতেন। তখনকার সময়ে ইনস্টলেশন টাইপের কাজ করতেন, মিস্কড মিডিয়া ।কাস্টিংটা ছিল তার কোর্স।

মিস্কড মিডিয়া বলতে আমরা পরিবেশ বুঝি। তখন ইনস্টলেশন কথাটা পপুলার হয়নি। তখন হামিদুজজামান এনভায়রমেন্ট তৈরি করার চেষ্টা করতেন। হামিদুজজামান জানলেন একটা দ্বীপের সমস্ত লোকজনকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। হামিদুজ্জামান ভাবছেন হাউ আই ক্যান রিপ্রেজেন্ট... এত বড় দ্বীপের লোকজনকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এটা সম্বলিকলি কী করে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে তখন তিনি একটা বড় বেড তৈরি করলেন, মনে হচ্ছে একটা বিচ বা স্যান্ডিল্যান্ড, সেখানে... একটা ছোট বাচ্চা আহত, হয়ে পড়ে আছে।

তারপর ওই এনভায়রমেন্টের জন্য যা  যা দরকার খুঁজে খুঁজে নিয়ে কাজ করলেন। চকলেট লাল রঙের শাড়ির বালিতে মাখা, একটি মা পেট ফুলে ভেসে যাচ্ছে,  ডাবের খোসা, একটি হাত, পুরাতন জুতা, সমুদ্রের পাড়ে বালিতে ভেসে থাকা নানা ধরনের জিনিস দেখলাম। এই কাজ করার সময় আমি ছিলাম। এক পর্যায়ে আমার মাথার চুল এক গোছা কেটে নেওয়ার আবদার করেছিলেন।

আমি রাজি হইনি। কারণ তার আবদার রাখার মতো মন ছিল না।

এই কাজে হামিদুজ্জামান শিল্পকলা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়  জাদুঘর কাজটি ডিসপ্লেতে ছিল, প্রচুর দর্শক আসত, বর্তমান ডিসপ্লেতে  নেই। হয়তো জাদুঘর স্টোরে সংরক্ষিত আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads