• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ফিচার

মানবসেবায় ‘ইয়ুথ মুভমেন্টস’

  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর ২০২১

এ আই শাহ রাজন

 

মানবজীবনকে যথার্থ সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে তার নৈতিক মূল্যবোধ। সমাজের কল্যাণকর কাজ ও মানবিক বোধের চর্চার মধ্য দিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ সুদৃঢ় হয়। নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তির আদর্শ সমাজের সকলের জন্য অনুসরণীয় হয়। ফলে সমাজ ক্রমশ কলুষমুক্ত হয় এবং বসবাসের আদর্শ স্থান হয়ে ওঠে। এমনই একটি আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে সমাজে সামাজিক মূল্যবোধ চর্চা বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে ‘ইয়ুথ মুভমেন্টস’।

‘ইয়ুথ মুভমেন্টস’ একটি সামাজিক সংস্থা যা বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কাজ করে। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বর্তমানে ৮৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কাজ করছে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত, ছিন্নমূল এবং ভাসমান মানুষদের নিয়ে  কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠাতা মো. আকরাম হোসাইনের নেতৃত্বে সকল স্বেচ্ছাসেবক যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। একইসাথে অনেকগুলো প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে এই সংস্থাটি। তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য :

১. প্রজেক্ট ‘হাসিমুখ’ : ইয়ুথ মুভমেন্টস সংস্থাটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেওয়ার আগে থেকেই ‘প্রজেক্ট হাসিমুখ’ নিয়ে কাজ করা শুরু করেছিল। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নতুন পোশাক এবং ছিন্নমূল, ভাসমান মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়। এই পর্যন্ত প্রজেক্ট হাসিমুখের ৭টি পর্ব সম্পন্ন হয়েছে এবং সর্বমোট ৮৫০০ জন পথ শিশুদের ঈদের নতুন পোশাক এবং ৫০০০ জন ভাসমান মানুষকে ১ বেলার খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

২. প্রজেক্ট ‘মুষ্টি চাল সংগ্রহ’ : এই প্রজেক্ট এর মাধ্যমে ইয়ুথ মুভমেন্টসের স্বেচ্ছাসেবী এবং ডোনারদের কাছ থেকে চাল বা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করা হয় এবং তা সমাজের বৃদ্ধ শ্রমজীবীদের মাঝে সাপ্তাহিক/মাসিক ভাবে বিতরণ করা হয়।

৩. প্রজেক্ট ‘ইয়ুথ স্কুল’ :

শিশুশিক্ষা নিশ্চিতকরণে সংস্থাটি পথশিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য  ভাসমান ৪টি স্কুল স্থাপন করেছে। যার নাম ‘ইয়ুথ স্কুল’। ভালো কাজের বিনিময়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিশুরা প্রতিদিন শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পায়। এই স্কুলের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে স্কুলে যেতে অক্ষম পথশিশুদের শিক্ষা প্রদান করা । স্বেচ্ছাসেবীরা  শিশুদের  মধ্যে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করার এবং তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। পাশাপাশি তাদের জন্য নানা রকম শিক্ষামূলক কার্যক্রম করা হয় এবং পরীক্ষা ও নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তাদেরকে উপহার প্রদান করে উৎসাহিত করা হয়। 

৪. প্রজেক্ট ‘গ্রোথ মাইন্ডসেট’ : দেশের তরুণ সমাজের মাঝে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি চর্চা করতে আরও কিছু সহযোগী সংস্থার সাথে সমন্বয় করে  বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপ-এর আয়োজন করে। যার মাধ্যমে তরুণদের পজিটিভ ভাবনার উন্মেষ করার চেষ্টা করা হয়।

৫. প্রজেক্ট ‘সারাকা কোরবানি’ :

এই প্রজেক্টের মাধ্যমে ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শিশু, অসহায় মানুষের মাঝে কোরবানি গোস্ত বিতরণ করা হয়।

৬. প্রজেক্ট ‘আলোর মশাল’ :

এই প্রজেক্টের মাধ্যমে সমাজে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের যে সকল শিশুরা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে তাদেরকে শিক্ষা উপকরণ বা আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়।

সামাজিক কিছু সমস্যা যেমন ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, র‍্যাগিং ইত্যাদি বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি পুষ্টি নিশ্চিতকরণ এবং ব্লাড ডোনেট করে ইয়ুথ মুভমেন্টস।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতিতে মানবিক সাহায্যে ইয়ুথ মুভমেন্টস সর্বদাই এগিয়ে আসে। যেমন বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অঞ্চলে ২০০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ১০০০ স্যানিটাইজার ও ৫০০০+ ভাসমান মানুষকে ১ বেলা খাবার প্রদান করা হয়েছে এবং জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটানো হয়েছে যা এখনো অব্যাহত আছে। গত বছর ডেঙ্গু মহামারি রূপ নিলে বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করেছে ইয়ুথ মুভমেন্টস। কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মানুষের মাঝে চাল এবং কাপড় বিতরণ করেছে এই সংস্থাটি। শীতকালে ‘উষ্ণতার ছোয়া’ নামের একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে ইয়ুথ মুভমেন্টস যার মাধ্যমে শীতবস্ত্রহীন মানুষকে শীত-সহনশীল পোশাক সরবরাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads